হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিদায়

3

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত ছিল এমনটা বলে সব সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার পক্ষে মত দিলেন সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সাবেক সিইসি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। নির্বাচন বন্ধ করা কিংবা পদত্যাগের কোনো সুযোগ সাংবিধানিকভাবে ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন সেনাসমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি সংসদে মাত্র ২৭টি এবং আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছিল। নির্বাচন বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিলনা। নিরাপদ প্রস্থান (Safe Exit)) বিষয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেনাসমর্থিত অসামরিক তত্বাবধায়ক সরকারের দর-কষাকষির বিষয়টি প্রকাশ্য ছিল। সে প্রশ্নে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের অবস্থানও গোপন ছিল না। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন সংবিধানমতে দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দলই অংশ নেয়নি। ফলে সেই নির্বাচনও ২০২৪ সালের অনুরূপ অন্তর্ভুক্তিমূলক (Inclusive) ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়। আসন পেয়েছিল মাত্র ৬ টি। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৫৮ টি। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
দুই নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান ও সাবেক আমলা মো. আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে সিইসির সঙ্গে ছিলেন। নির্বাচন কমিশনার রাশদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান অনুপস্থিত ছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
এদিকে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক মাসের মাথায় সরে দাঁড়িয়েছে তার শাসনামলে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা এ কমিশন মেয়াদ শেষ হওয়ার আড়াই বছর বাকি থাকতেই গতকাল পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। ফলে নতুন কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত পদগুলো শূন্য থাকবে।
২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নেন সাবেক আমলা হাবিবুল আউয়াল। তার নেতৃত্বে এ কমিশনের পরিচালনায় এ বছর ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। এছাড়া এ আড়াই বছরে দেড় সহস্রাধিক বিভিন্ন নির্বাচন করেছে কমিশন।
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাত্রা শুরু করে। ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
রাষ্ট্র সংস্কারের আহবানের মধ্যে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে সরে যেতে হয় প্রধান বিচারপতিকে, পদ ছেড়ে দেন বিভিন্ন বিশ্বাবিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ আরও অনেকে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন। এবার সেই তালিকায় যোগ হল হাবিবুল আউয়াল কমিশনের নাম।
সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার আগে কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনগুলোর ইতিহাস তুলে ধরেন।
হবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার সকল দোষ বা দায়- দায়িত্ব সকল সময় কেবল নির্বাচন কমিশনের উপর এককভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে। একটি কমিশন না হয় অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। কিন্তু সকল সময় সকল কমিশনই অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না। কমিশন বিভিন্ন কারণে নির্ভেজাল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে অক্ষম বা অসমর্থ হতে পারে।