হাটহাজারীতে বন্যার মারাত্মক অবনতি

25

হাটহাজারী প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। যদিও গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তেমন বেশি ভারী বর্ষণ না হলেও গতকাল শুক্রবার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৃষ্টিপাত ছিল না। তবে, হালদা নদী ও অন্যান্য শাখা খাল এবং ছড়ায় পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চারদিকে পানিবন্দি থাকায় মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। এরমধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন এক যুবক। তার নাম মো. জিয়াউর রহমান সাকিব (২২)।
গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বসতঘরে কোমর পানি, কোথাও কোথাও এরও বেশি পানি দেখা গেছে। বিশেষ করে ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের গৃহস্থ পরিবারে গবাদী পশুগুলো মহাসড়কের উপর নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে দেখা গেছে। এরমধ্যে হালদা নদীর নতুন ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় হালদা বেড়ীবাঁধের ভাঙনে উপজেলার ফরহাদাবাদ ও ধলই ইউনিয়নের ৩০টিরও বেশি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১নং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের বসবাসকারী লোকজন।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৯ টার দিকে হালদা নদীর নতুন ব্রীজ সংলগ্ন ৪নং ওয়ার্ডের ছালে আহাম্মদ দফাদারের বাড়ি এলাকায় হালদা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো গ্রাম। এতে এই ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাও সবচেয়ে বেশী বলে স্থানীয়দের দাবি। বেড়িবাঁধ ভেঙে বাঁধ সংলগ্ন ছালে আহাম্মদ দফাদারের বাড়ির মো. মোরশেদ ও মো. দিদারুল আলমের দুই পরিবারের বসতঘর ও ঘরে রক্ষিত যাবতীয় মালামাল ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এই ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবারের বসতঘরে পানি ঢুকে গেছে। এছাড়া একই ইউনিয়নের প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার ভয়াবহতায় বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়েছেন তারা। বাঁধ ভাঙনের কারণে ফরহাদাবাদ ও ধলই ইউনিয়নের শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার থেকেই হালদা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নাজিরহাট নতুন ব্রীজের পশ্চিম পাশে ছালে আহাম্মদ দফাদারের বাড়ি সংলগ্ন স্থানের বেড়িবাঁধের উপর বালুর বস্তা দিয়েও ঢলের পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেন। সন্ধ্যার পর থেকে হালদায় ঢলের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে রাতে বালুর বস্তার উপর দিয়ে ঢলের পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করে গ্রামে। এক পর্যায়ে রাত ৯ টার দিকে নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন মো. মোরশেদ ও মো. দিদারুল আলমের দুইটি বসতঘর ও ঘরে রক্ষিত যাবতীয় মালামাল ভেসে যায় পানির স্রোতে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার এই ইউনিয়নের বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাদূর্গতদের নৌকা, সাম্পান ও স্পিডবোট নিয়ে বন্যার পানিতে বাড়িঘরে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে দেখা গেছে। তাছাড়া দূর্গত পরিবারে ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার, সুপেয় পানি ও খিুংড়ি বিতরণ করছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দূর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এই ইউনিয়নে অবস্থিত শিশু পরিবারে নিরাপদ হেফাজতে থাকাদের কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এদিকে, বন্যাদূর্গতদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা আশ্রয়স্থলগুলো বিশেষ করে নাজিরহাট কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ হাটহাজারী শ্যামা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিরহাট কলেজ, ফরহাদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পানির নিচে চলে যাওয়ায় সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে। নাজিরহাট এলাকার আশেপাশে যেসব পরিবারের বহুতল ভবন রয়েছে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বন্যাদূর্গত পরিবারগুলোকে।
অপরদিকে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদূর্গত যেসব পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে তাদের মধ্যে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। যতদিন তারা সেখানে থাকবেন ততদিন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার দেয়া হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম মশিউজ্জামান।
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু :
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে বন্যায় পানিবন্দি এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ইউসুফ চৌধুরীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঘরের আইপিএস খুলতে গিয়ে মো. জিয়াউর রহমান সাকিব (২২) নামের ওই যুবক মারা যান। তিনি ঐ এলাকার মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে। যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ.দা.) নিয়াজ মোর্শেদ।
শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় যুবক ফাহিম আবদুল্লাহ সাকিবের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে সাকিব তাদের ঘরে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করলে তড়িঘড়ি করে আইপিএসের সংযোগ খোলার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তিনি পেশায় মাইক্রোবাস চালক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান জানান, উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে হালদা নদীর নাজিরহাট নতুন ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪ হাজার ৫০০ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া সম্ভব হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক, বিভিন্ন সংগঠন দূর্গত লোকজনকে উদ্ধার করছে।