হযরত শাহছুফি আমানত খান (র.)

3

মো. নুরুল আবছার

আল্লাহর কোরআন ও রাসুল (সা.) এর হাদিস সমগ্র মানব জাতির জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের দিক নির্দেশনা দেয়। মহান রাব্বুল আলামীন শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)এর পর্দা নেওয়ার মাধ্যমে নবুয়তের পরিসমাপ্তি ঘটায়ে বেলায়ত যুগের সূচনা করেন। যা উপরে উল্লেখিত কোরানের আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়াছে। বিশ্বাসীদেরকে বলেছেন আল্লাহকে ভয় কর ও সত্যবাদীদের সাথী হও। সত্যবাদী বলতে আল্লাহ আহ্লে বায়াত ও আওলাদে রাসুলদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। যাদের সান্নিধ্যে গেলে আল্লাহ ও রাসুলের দিদার লাভ হয়। ‘আল্ বেলায়তু জিল্লুন নবুয়ত’ অর্থাৎ বেলায়ত নবুয়তের ছায়া মর্মে এই হাদীস শরীফের ভাষ্যমতে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তবে প্রতীয়মান হয় যে রাসুলে পাক (সা.) নবুয়তের পরিসমাপ্তির মাধ্যমে বেলায়তের যে ধারা প্রবাহিত করেছেন তা নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শান এ আজমতেরই বহিঃ প্রকাশ মাত্র। তারই ধারাবাহিকতায় যে সত্তা হুজুর পুর নুর রউফুর রহিম (সা.) এর বেলায়তী ক্ষমতার শান-এ আজমতের নিদর্শন হিসাবে জগতে আবির্ভাব ঘটেছে সেটা সুফিবাদ। সুফিবাদ ইসলামের আধ্যাত্বিক দর্শন। আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা এ দর্শনের মূল বিষয়। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপনই হলো এ দর্শনের মর্মকথা।
ইসলাম ধর্মে সুফিবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। সুফি শব্দের উৎপত্তি, আরবি শব্দ সাফা থেকে যার অর্থ খাঁিট। সুফিগণ ধার্মিক এবং সহজ সরল জীবন যাপন করেন। আরাম, আয়েশ ও আনন্দ পরিত্যাগ করেন এবং জাগতিক সম্পর্ককে ছিন্ন করে তাদের জীবনকে মানবতার খেদমত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কুরবানী করে দেন। মুসলিম সুফিরা আবহমান কালথেকে যে জিনিসগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন সেগুলি হলো দুনিয়ার অসার চিন্তা ভাবনা ও দ্রব্যাদি থেকে নিজেকে মুক্ত করা। বিনয় ও শ্রদ্ধার সাথে নবী করিম (সা.) এর পথে থাকা, ধ্যান ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে এক অদৃশ্য সংযোগ স্থাপন করা। এই সুফি দরবেশগণের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রসার ঘটে। যার মধ্যে শাহেনশাহে আদালত হযরত শাহছুফি আমানত খান (র.) অন্যতম। তিনি গাউছে ছামদানী, পীরেল হাছানী, শেখ ছৈয়দ আবু মীর মহিউদ্দিন গাউছুল আজম বড় পীর আবদুল কাদের জীলানির বংশধর। তার পূরবর্তী বংশধর ইসলাম প্রসারের জন্য সূদুর বাগদাদ হতে ভারতের বিহারে আগমন করেন। তিনি তখনকার সময়ের বিখ্যাত সুফি সাধক হযরত আবদুর রহিম শহীদ (রা.) এর হাতে বায়াত গ্রহণ করে কঠিন রেয়াজতের মাধ্যমে বেলায়াতের উচু মকামে অধিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বিহার থেকে চট্টগ্রামে আগমন করে চট্টগ্রাম জজ কোর্টে নিজেকে চাকুরিতে নিয়োজিত করেন, যাতে সাধারণ লোকেরা বুঝতে না পারে। সারাদিন কোর্টে চাকুরী শেষ করে লালদীঘির পূর্ব পাড়ে নিজ খানকায় সারারাতব্যাপী রিয়াজত/সাধনায় মশগুল থাকতেন। কঠোর সাধনার মাধ্যমে নিজেকে বেলায়েতের উঁচু মকামে অধিষ্ঠিত করেন। তার কেরামত এই অধমের জ্ঞান ও কলমের কালি দিয়ে লেখা সম্ভব নয়। তার বেলায়তি ক্ষমতা সারা জগতের মানুষ অবগত আছে। এই মহান সাধকের মাজার থেকে রাতদিন আল্লাহর রহমতের বারিধারা বর্ষন হয়ে চলেছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত চলবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত ফরিয়াদি পতঙ্গের ন্যায় উপড়ে পড়ে, অন্তরভরা ফরিয়াদ পেশ করেন এবং আল্লাহ পাক এই মহান আউলিয়াকেরামের উছিলায় প্রত্যেকের নেক মকছুদ পূরণ করেন। প্রতি বছর ১লা জিলহজ¦ মাজার প্রাঙ্গনে লক্ষ আশেক ভক্তদের অংশগ্রহণে মহা সমারোহে হযরত শাহছুফি আমানত খান (রা.) এর ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। এই মহান ওরশ শরীফের উছিলায় আল্লাহ যেন আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা করেন। আমিন।