স্লুইসগেট চালু থাকার পরও কোমর পানির নিচে নগরী

8

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারী বর্ষণে নগরের নিম্নাঞ্চল তলিয়েছে কোমর পানিতে। বেশিরভাগ এলাকায় সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকেছে পানি। সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় গণপরিবহন কমে যায়। ফলে কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এরমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের অধীনে পাঁচটি স্লুইসগেট কার্যকর করা হয়েছে। স্লুইসগেটে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য বসানো হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প। এসব পাম্প কার্যকর থাকার পরও ভারী বৃষ্টিতে ডুবছে নগরের বেশিরভাগ এলাকা। গতকাল বৃহস্পতিবারও টানা বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, শুলকবহর, বাদুরতলা, মোহাম্মদপুর, জাকির হোসেন রোড, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, দুই নম্বর গেট, পাঁচলাইশ, হালিশহর, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, ডিসি রোড, ফুলতলা, কে বি আমান আলী রোড, চকবাজার, বাকলিয়া, দেওয়ানহাট, মোগলটুলী, পাঠানটুলী, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ রোড, হালিশহর ওয়াপদাসহ বিভিন্ন এলাকা ডুবে যায়। এসব এলাকার কোথাও কোথাও কোমর পানি উঠে। অনেক বাসাবাড়ির নিচতলা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে পানি ঢুকে গেছে।
জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালক লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, স্লুইসগেট কার্যকর আছে, পাম্পও চালু আছে। কিন্তু জোয়ার এবং অতিবৃষ্টি একসাথে হলে তখন কিছু করার থাকে না। প্রাকৃতিক বিষয়গুলোতে আমাদের কিছু করার থাকে না। মহেশখালের স্লুইসগেটে আগ্রাবাদ ও হালিশহর এলাকা যুক্ত। একদিকে সামাল দিলে অন্যদিকে পানি উঠছে। চাক্তাইয়ে মোটামুটি কমেছে, মুরাদপুরে পানি উঠছে। দেখতে হবে পানি কতক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে। আজকে (বৃহস্পতিবার) অতি বৃষ্টিতেও পানি দুই ঘণ্টার মধ্যে নেমে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্পের ৭১ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। সেখানে ৫০/৬০ ভাগ সফলতা আসবে না। এখন ৩০ শতাংশ সফলতা আসলে যথেষ্ট। প্রতিদিন ১২ মেট্রিক টন আবর্জনা খালে পড়লে সেখানে কি করার আছে? আবার জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় আমরা কিছু জায়গায় কাজ করতে পারিনি। ভারী বৃষ্টিপাত হলে আমাদের রেন্সপোন্স টিম কাজ শুরু করে। দ্রুত পানি নেমে যাওয়ার জন্য যা যা করণীয় সেগুলো করার মাধ্যমে পানির প্রবাহ ঠিক রাখা হয়।
বরাবরের মতোই জলাবদ্ধতার সাথে সড়কে কমে যায় যান চলাচল। গণপরিবহন কমে যাওয়াতে রিকশা ও ভ্যানগাড়িতে অনেকে যাতায়াত করতে বাধ্য হন। এতে বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয় যাত্রীদের। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে অনেকে যেমন গন্তব্যে গেছেন তেমনি অনেককে কোমর পানিতেই হেঁটে গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অল্প বৃষ্টিতেও রাস্তায় পানি উঠছে। একটু ভারী বৃষ্টি হলে বাসার নিচে পানি চলে আসে। পানির কারণে বাসা থেকে বের হতে পারছি না। প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পানির মধ্যে বের হতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলের প্রায় সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পানি উঠে। মূল সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে থৈ থৈ অবস্থা হয়ে যায়। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়ে পানি। বেশিরভাগ ভবনের নিচ তলা ও বেসমেন্টে প্রবেশ করে পানি। দিনভর এসব নিষ্কাশনে ব্যস্ত থাকেন বাসিন্দারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকার পরও বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় অনেকে যেতে পারেনি বিদ্যালয়ে।
চকবাজার কাপাসগোলা এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সড়ক ছাড়াও অনেক ভবনের নিচতলাতে পানি ঢুকে যায়। দুপুরের পর থেকে পানি সরানোর কাজ করতে হয়। নালা ও খালে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকার কারণে রাস্তায় উঠছে। ড্রেনগুলো ভরাট রেখে বড় বড় প্রকল্পের কাজ করলেও আমরা এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবো না।
এদিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়ার কার্যালয়ের সহকারি পূর্বাভাস কর্মকর্তা আবদুল বারেক জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৫৮.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তারও আগে সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, ভোর ছয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরও সতর্কবাণী জারি করেছে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবাণীতে বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ২২ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতিভারী (৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণজনিত কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও ভ‚মিধংসের সম্ভাবনা রয়েছে।