স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কখনও ঠাঁই হবে না

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

জগতের সকলের কল্যাণ ও সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব উল্টো রথযাত্রা সুসম্পন্ন হয়েছে। রথযাত্রার আটদিনের মাথায় গতকাল সোমবার নগরীতে বর্ণিল সাজসজ্জায় উল্টো রথাযাত্রা উৎসবে শামিল হয়েছেন হাজার হাজার ভক্ত-পুণ্যার্থী। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পেরিয়ে যাওয়া সময় পর্যন্ত নেচে-গেয়ে রাজপথে জগন্নাথদেবের বিগ্রহসমেত নানা উপকরণে সাজানো সুদৃশ্য রথ টেনে উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। এতে পুলিশের তরফ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মত। রথে সমাসীন ত্রি-দেবতার খর্বাকৃতির বামন মূর্তি দর্শন ও রথের রশি ধরে টেনে পুণ্যলাভের আশায় ভক্ত-পুণ্যার্থীরাও দলে দলে নেমেছেন রাজপথে। রথের রজ্জু টেনে শামিল হয়েছেন উৎসবে। দেবতার মূর্তি দর্শনে নিবেদন করেছেন অন্তরের ভক্তি অর্ঘ্য।

নন্দনকানন ইসকন : সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের বদৌলতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই ভূখন্ডে সাম্প্রদায়িকতার কবর রচিত হয়েছে। তাই স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্য আমাদেরকে যে কোনও মূল্যে সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা যার যার নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বীদের সম্মান করব। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকব। এটাই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির জনকের আদর্শ।
উল্টো রথযাত্রা উপলক্ষে গতকাল সোমবার নন্দকানন ইসকনের উদ্যোগে শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির ও শ্রী শ্রী গৌর নিতাই আশ্রম আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। নন্দনকানন ইসকনের সভাপতি পÐিত গদাধর দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তারণ নিত্যানন্দ দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বে মহান আশীর্বাদক ছিলেন ভারতের উড়িষ্যার শ্রীমৎ ভক্তি নীলাচল স্বামী মহারাজ। প্রধান আলোচক ছিলেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর সেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন তালুকদার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও নগর যুবলীগের সহসভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সহসভাপতি অনুরূপ পাল, পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল ও সাবেক ছাত্র নেতা শিবু প্রসাদ চৌধুরী। এছাড়া নন্দনকানন ইসকন রাধামাধব মন্দির ও গৌর নিতাই সেবাশ্রমের সহ সভাপতি অকিঞ্চন গৌর দাস ব্রহ্মচারী, যুগ্ম সম্পাদক মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, সদস্য অপূর্ব মনোহর দাস ব্রহ্মচারী ও সুবল সখা দাস ব্রহ্মচারীসহ টিএমসি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্ব শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা মঙ্গল দ্বীপ প্রজ্জ্বালন ও বেলুন উড়িয়ে উল্টো রথযাত্রার শুভ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কখনওই ঠাঁই হবে না। আজকের বাংলাদেশে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। তাই ধর্মের আধ্যাত্মিক চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে আমাদের সকলকে জগতের কল্যাণ ও সম্প্রীতির চর্চা করতে হবে। শ্রী শ্রী জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের আশীর্বাদে জীবন হয় সুন্দর। সমস্যায় ঘেরা জীবনে মুক্তি এনে দেন ত্রি-দেবতা। জীবন-রথ পরিচালিত করতে এই রথযাত্রা দেয় অনুপম শিক্ষা। উল্টো রথযাত্রার উদ্বোধন শেষে ভক্ত-পূণ্যার্থীরা শ্রী শ্রী জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা মহারাণী অধিষ্ঠিত রথ টেনে নগর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। ভক্তরা বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, পৌরাণিক সাজ ও বাদ্যযন্ত্রসহকারে রথের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির : বিশ্বে অসা¤প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ বলে মন্তব্য করেছেন সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। গতকাল সোমবার বিকালে নগরীর সিনেমা প্যালেস মোড় থেকে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের উদ্যোগে আয়োজিত উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী।
উদ্বোধক ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। আশীর্বাদক ছিলেন শ্রীপাদ কৃষ্ণ গোপাল দাস ব্রহ্মচারী। বিশেষ আলোচক ছিলেন শ্রী শ্রী পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। প্রধান বক্তা ছিলেন ভারতের বৃন্দাবন থেকে আগত ভাগবত পাঠক মুক্তিদাতা চৈতন্য দাস ব্রহ্মচারী। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ আচার্যের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) চসিক কাউন্সিলর নীলু নাগ, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন তালুকদার, মহানগর পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক দারু ব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী, পান্ডব গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, গীতা শিক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শুভাশীষ শর্মা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে একটি সুন্দর ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেটি তিনি অর্জন করেছেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সকল বর্ণ ধর্ম জাতির অংশগ্রহণের এবং সবার অধিকার নিশ্চিতে তিনি সংবিধানে চার মূলনীতি স্থাপন করেছেন। অর্থাৎ সকল ধর্মের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্মের উৎসব নির্বিঘ্নে পালন করবে। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার এবং ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননত্রেী শেখ হাসিনাও পিতার আদর্শকে ধারণ করে সকল ধর্মের মানুষকে সাথে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।