সেলিনা হোসেনের ‘যুদ্ধ’ উপন্যাসে প্রতিফলিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

11

ড. মো. মোরশেদুল আলম

ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন গ্রামীণ পটভূমিতে উপন্যাস রচনা করতে পছন্দ করেন। যুদ্ধ উপন্যাসেও তিনি মুক্তিযুদ্ধকে অবলোকন ও কাহিনির সংস্থান করেছেন গ্রামীণ পটভূমিতে। পটভূমি গ্রামীণ হলেও যুদ্ধ উপন্যাসে লেখক কোন প্রথামাফিক কাহিনি রচনা করেননি, বরং বিভিন্ন চরিত্র ও ঘটনার সমন্বয়ে নির্মাণ করেছেন যুদ্ধকালীন পরিবেশে ব্যক্তির বেঁচে থাকার সংকট, যুদ্ধের অভিঘাতে বিপর্যস্ত ব্যক্তি ও সমাজজীবন, প্রচলিত বিশ্বাস ও মূল্যবোধের রূপান্তরসহ নানাবিধ অনুষঙ্গের। এ উপন্যাসের মলাটে যথার্থই মন্তব্য করা হয়েছে, যুদ্ধ ১৯৭১ সালে সংঘটিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পটভ‚মিতে রচিত উপন্যাস। লেখক এ উপন্যাসে যুদ্ধের বিভিন্ন মাত্রা অনুসন্ধানে তীক্ষè পর্যবেক্ষণ, মনন এবং কল্পনাশক্তির ব্যবহার করেছেন। তিনি যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নির্মাণ করেছেন ব্যক্তির বেঁচে থাকার সঙ্কট, মূল্যবোধের রূপান্তর, ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুষঙ্গে আঘাত, মৃত্যু, স্বজন হারানোর বেদনার ভেতর দিয়ে। বেণু, মাখন, সুষমা, নিখিল, মকবুল, ছহিতন, সুনন্দা, অমলা বারুয়া মাঝি, সোনামিথি প্রভৃতি সাধারণ চরিত্রের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক চরিত্রও স্থান পেয়েছে এ উপন্যাসে। যেমন, ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর আবু তাহের, ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ ও বীর প্রতীক খেতাবে ভ‚ষিত তারামন বিবির বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনি ঔপন্যাসিক যুদ্ধ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১১ নম্বর সেক্টরের অধীন কামালপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও জয়দেবপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর একে একে শক্তিশালী ঘাঁটিগুলো পতনের বাস্তবচিত্রও তিনি এ উপন্যাসে জীবন্ত করে তুলেছেন।
এ উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে একজন নারী মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি হচ্ছেন বীর প্রতীক তারামন বিবি। কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর থানার কোদালকাঠি ইউনিয়নের শঙ্কর মাধবপুর গ্রামে ১৯৫৫ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দারিদ্র পীড়িত আব্দুল সোবহানের অশিক্ষিত স্বামী পরিত্যক্ত মেয়ে। মাত্র ৬ মাস সংসার করার পর স্বামী মেছের আলী তাঁকে তালাক দেয়।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে ঔপন্যাসিক তারামন বিবির স্বামীর ঘরে শৃঙ্খলিত জীবন থেকে মুক্তিলাভের ঘটনার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে মূর্ত করে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ও তাঁর মা কুলসুম বেগম মুক্তিযোদ্ধা আজিজ মাস্টারের বাড়িতে আশ্রয় নেন। আজিজ মাস্টার তারামন বিবিকে মুহিব হাবিলদারের কাছে রেখে গেলে তিনি তাঁকে ধর্মের মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেন। মুহিব হাবিলদার তাঁকে রাইফেল চালানো, স্টেনগান চালানো এবং গুপ্তচরবৃত্তি শিক্ষা দেন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে রাজীবপুর, মোহনগঞ্জ, আবরতলীসহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর এ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের চিরচেনা পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে বদলে দিয়েছিল, বিপন্ন করে তুলেছিল প্রতিটি বাঙালির জীবন ও জীবীকা, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের সংকট ও তাদের মানসিক অবস্থার স্বরূপটি ঔপন্যাসিক বাস্তবসম্মতভাবেই উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন সুভাষ, সুষমা, দেবেশ, নিখিল, সরলা, হেমন্ত, সরস্বতী, ল²ী প্রভৃতি চরিত্রের সমন্বয়ে। সুষমার স্বামী দেবেশ ৫২- এর ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে আর ফিরেন নি। ছেলে সুভাষও ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আর ফিরেন নি। হেমন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন তবলচি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তাদের ধর্মের বোধ ও পোশাকের পার্থক্যও ঘুুচিয়ে দিয়েছিল। তাই স্বামী নিখিলের ধুতির পরিবর্তে লুঙ্গি, টুপি পরা, কালেমা, সুরা ফাতেহা শেখা ও নামাজ পড়াকে স্ত্রী সরলা সহজভাবে মেনে নিতে পারে নি। তাই সরলাকে উদ্দেশ্য করে নিখিলের উক্তি, “দেবেশের মা আমরা যদি যুদ্ধে জিতি তাহলে আমাদের দিন ফিরবে। দেশ স্ব^াধীন হলে আর দুঃখ কী! ধুতি লুঙ্গিতে কী আসে যায়। যুদ্ধের জন্য সবকিছু মানতে হয়।”
যুদ্ধের সময় ধর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে নিখিল বলেন, “এখন ধর্ম আর বিশ্বাস নেই, ওটা ঘটনা, আচরণ, নিয়মপালন।” নিখিলের মধ্যে অকৃত্রিম দেশপ্রেম, স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ও মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়। তাইতো একদিকে পাকিস্তানিদের আক্রমণের ভয়, অন্যদিকে ঘরে কিশোরী মেয়ে ও পুত্রবধূদের ওপর সৈন্যদের অত্যাচার ও নির্যাতনের আশঙ্কায় স্ত্রী সরলা নিখিলকে পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলে নিখিল বলে, “ইন্ডিয়া কেন যাবো? ইন্ডিয়া কি আমার দেশ? ….এখন জয়বাংলার সময়, দেশটা স্বাধীন হবে গো? বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জেলে আটক আছে শুনেছি।…. এখন আমাদের জোয়ান ছেলেগুলো যুদ্ধ করছে।….ছেলেগুলো যুদ্ধ করলে মেয়েগুলোও করবে। আর্মি যদি ওদের নিয়ে যায় তাহলেও বুঝতে হবে ওরাও দেশের জন্য মরেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে মরা আর নির্যাতনে মরা দুটোই সমান।’’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা নির্বিচারে বাঙালিদের গুলি করে হত্যা করে। এ সময় সকল শহীদের লাশ দাফন বা সৎকারের সুযোগও হয়নি। কেউ বধ্যভূমিতে, কেউ জলাশয়ে, আবার কারও লাশ শেয়াল-কুকুর-শকুন কামড়ে খেয়েছে। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ দাফনের কাজে এগিয়ে এসেছেন। এ উপন্যাসের মকবুল ও ছহিতন চরিত্র দুটি এর প্রতিচ্ছবি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কাফনের কাপড় পাওয়া যায়নি বলে তারা শার্ট ও প্যান্ট দিয়ে কাফন তৈরি করে লাশের জানাজা পড়েছেন। এ প্রসঙ্গে ঔপন্যাসিক বলেন, ‘লাশ কবরে নামানোর আগে বুড়ো বুড়িকে বলে, জানাজায় খাড়া রজবের মা। বুড়ি অবাক হয়, কী কন! মাইয়ালোক তো জানাজা হড়ে না। বুড়ো খেঁকিয়ে বলে, শহীদের জানাজা অইবো না এইডা অয় নি? যুদ্ধের সময় মাইয়ালোক, বেডালোক নাই। যুদ্ধের সময় তো যুদ্ধই ধর্ম।’
উপন্যাসটির অন্যতম চরিত্র বারুয়া মাঝি মুক্তিযোদ্ধাদের পারাপার করত। একদিন মুক্তিযোদ্ধাদের শালগ্রাম পৌঁছে দেওয়ার পথে পাকিস্তানিদের হাতে তিনি শহিদ হন। পাকিস্তানিরা জানতে পারে সোনামিথি বারুয়া মাঝির স্ত্রী। তাই তারা সোনামিথিকে ধর্ষণ করলে সে অন্তঃসত্ত¡া হয়। কিন্তু সোনামিথি তার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করতে চায় না। কারণ এ সন্তান একদিন বড় হয়ে যুদ্ধের সাক্ষী দিবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হিসেবে সোনামিথি ‘যুদ্ধশিশু’কে জন্ম দিতে চায়। সে সমাজে বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচিত হতে চায়। সোনামিথির কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতি পূর্ণ আস্থার বিষয়টিও উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে। ঔপন্যাসিক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তুমি কি জানো না যে এখানে কেউ কন্থা হবার কথা ভাবতেও পারে না। ততোক্ষণ লড়বে যতোক্ষণ একজনও জীবিত থাকবে। আর পাকিস্তানের জেলে যে বেটা বন্দি আছে তাকে হাজারবার মেরে ফেলে হাজারবার বাঁচিয়ে তুললেও সে এদেশের মানুষকে কন্থা বানানোর ষড়যন্ত্র করবে না। তার মেরুদÐ বাঁকা হয় না। ওটা ভিন্ন ধাতুতে তৈরি।’
এ উপন্যাসের অন্যতম দুটি চরিত্র মেজর আবু তাহের ও ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর তাহের পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে ১১ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব নেন। রংপুর জেলার রৌমারী থেকে বৃহত্তম ময়মনসিংহ জেলার সীমান্ত অঞ্চল পর্যন্ত তাঁর অধীনে ছিল। তিনি বেশকিছু খÐযুদ্ধ পরিচালনা করে সফল হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন শহীদ হন এবং এম এম মটারের আঘাতে মেজর তাহেরের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানিদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বাস্তব উপলব্ধি ও মানসিকতার বিশ্লেষণ ও ঔপন্যাসিক এ উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। এ উপন্যাসের তেমন দুটি চরিত্র ব্রিগেডিয়ার কাদির খান ও জেনারেল নিয়াজীর একান্ত কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন আত্মসমর্পণের কথা ভাবে তখন সিদ্দিক সালিক তাদের আত্মসমর্পণের কারণ ও পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের কথা স্বীকার করে। তাঁর মতে, ‘আমি বুঝতে পারলাম পূর্ব পাকিস্তানের গরিবেরা পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়েও গরিব। এরা কেন দুই পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা বলে তা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। আমি আস্তে আস্তে আরো অনেক কিছু নিজের চোখে দেখতে পাই। যেটা বাঙালিদের যথার্থ দাবি।’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় তারা শঙ্কর মাধবপুরে মেনাজ পরিবারের বসতবাড়িও পুড়িয়ে দেয়। বাঙালি নারীদের ধরে নিয়ে তারা পাশবিক অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়। এ উপন্যাসের বেণু চরিত্রটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় বেণুকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পাক হায়েনাদের দ্বারা বেণু ধর্ষিতা হয়ে গর্ভবতী হলেও এটাকে সে জরায়ুর জখম বলে উল্লেখ করে। এ প্রসঙ্গে বেণুর উক্তি, মেয়েরাতো যুদ্ধক্ষেত্রে না গিয়েও অঙ্গ হারায়।….ধর্ষিত হলে ওদের গর্ভ হয়। সেটা মাতৃত্বের গর্ভ না। সেটা জরায়ুর জখম। বেণু মাখন নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে ভালবাসত। বেণুর পরিবার নিজ গ্রাম ছেড়ে কোদালকাঠি গ্রামে চলে গেলেও সে মাখনের অপেক্ষায় নিজ গ্রামেই থেকে যায়। যুদ্ধ শেষে মাখন ফিরে এসে দেখে তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে মাখন তার এক পা হারায়। তখন বেণু মাখনকে উদ্দেশ্য করে বলে, “ভালো কইরে দেখো হামাক। তুমহি দেছো পা। হামি দিছি জরায়ু। তোমার পায়ের ঘা শুকায়ে গেছে। কয়দিন পর হামারও জরায়ুর ঘা শুকায়ে যাবে। আমি ভালো হয়ে যাবো।” বেণুর এ উক্তির মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক তাঁর অভিপ্রায়কে প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধ তাদের শরীরে ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিলেও তাদেরকে নিঃশেষ করেনি। কেননা মানুষকে বেঁচে থাকার, নতুন করে স্বপ্ন দেখার আকাক্সক্ষাকে মুছে ফেলা যায় না।
এ উপন্যাসের একটি ব্যতিক্রমী চরিত্র লোকটি। উপন্যাসের সর্বত্রই তার উপস্থিতি। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে একত্রিত হয়ে যুদ্ধ করে এবং তাদের সাহস জোগায়। পুরো উপন্যাস জুড়েই সে একটি প্রতীকী চরিত্র। যাকে বলা যায় চেতনা, প্রেরণা, সাহস এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন। এ প্রসঙ্গে স্বরোচিষ সরকার বলেন, ‘লোকটির অবস্থান উপন্যাসের প্রায় সর্বত্র হলেও আপাতদৃষ্টিতে তার মধ্যে এমন কোন ধারাবাহিকতা নেই বা তার চরিত্রে এমন কোন উজ্জ্বল গুণ আরোপিত হয়নি, যাতে আমরা লোকটিকে উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। বরং এর চেয়ে উজ্জ্বল চরিত্র তারামন বিবি এবং খানিকটা বেণুর। বারুয়া মাঝির স্ত্রী সোনামিথিকেও তাদের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। বেণু ও সোনামিথি যদি তারামন বিবিরই অপর নাম হতো, তাহলে নির্দ্বিধায় তারামনকেই বলতে পারতাম এ উপন্যাসের মূল বা কেন্দ্রিয় চরিত্র।’
লেখক সমকালীন ইতিহাসের বাস্তব ঘটনাকে অবলম্বন করলেও উপন্যাসে যুদ্ধের চিরকালীন প্রেক্ষাপট নির্মাণ করার প্রয়াস পেয়েছেন। ….একদিকে ধ্বংস, মানুুষের অস্তিত্বের সামূহিক সংকট ও বেঁচে থাকার সংগ্রাম, অন্যদিকে একটি জাতির বঞ্চনা ও শোষণের হাত থেকে মুক্তির আশা আকাক্সক্ষা এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম এ দ্বিবিধ চিত্রই সার্থকতার সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে যুদ্ধ উপন্যাসে। একদিকে লেখকের তীক্ষè পর্যবেক্ষণশক্তি ও বাস্তববোধ, অন্যদিকে তাঁর কল্পনাশক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতার সমন্বয়ে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একটি সার্থক চিত্র উপস্থাপন করছেন যুদ্ধ উপন্যাসে। এ উন্যাসের ঘটনাক্রম, কাহিনি ও চরিত্রসৃষ্টি ঔপন্যাসিকের নিজস্ব কল্পনার হলেও এর ঘটনাস্থল, যুদ্ধের বর্ণনা, সময়কাল এবং উপন্যাসে বর্ণিত কিছু চরিত্র ঐতিহাসিক ও বাস্তব।
যুদ্ধ উপন্যাসে লেখক শুধু পাকিস্তানিদের নিষ্ঠুরতা ও পাশবিকতার চিত্রই তুলে ধরেননি; একইসাথে বাঙালির প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও সংগ্রামের চিত্রও যুগপৎভাবে তুলে ধরেছেন।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়