সীতাকুন্ডে শিপইয়ার্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, ১২ শ্রমিক দগ্ধ

4

নিজস্ব প্রতিবেদক ও সীতাকুন্ড প্রতিনিধি

সীতাকুন্ডে একটি জাহাজভাঙা কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১২ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। তাদের প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে গুরুতর অবস্থায় ৮ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়। গতকাল শনিবার উপজেলার শীতলপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা এলাকায় এস এন করপোরেশন নামের কারখানায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাহাজভাঙা শ্রমিকদের সংগঠন ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর আহত ১২ জনকে প্রথমে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আহতরা হলেন জাহাঙ্গীর (৪৮), আহমদ উল্লাহ (৩৮), কাসেম (৩৯), সাগর (২০), আল আমিন (২৩), কারিম (২১), হাবিব (৩৬), বরকত (২৩), আনোয়ার (৫০), রফিকুল (৩০), রফিক (৩০), সাইফুল (৩০)। তাদের শরীরের ২৫-৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। প্রায় সবার শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে মো. জাহাঙ্গীরের ৭০ ভাগ, আহমদ উল্লাহর ৯০ ভাগ, কাশেমের ৩৫ ভাগ, সাগরের ২৫ ভাগ, আল আমিনের ৮০ ভাগ, মইনুলের ৮০ ভাগ, হাবিবের ৪০ ভাগ, বরকতের ৫০ ভাগ, আনোয়ারের ২৫ ভাগ, রফিকের ১০ ভাগ পুড়ে গেছে। এছাড়া রফিকুল ও সাইফুলের কানে সমস্যা হয়েছে।
এস এন করপোরেশনের ইয়ার্ড ম্যানেজার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘বিস্ফোরণে ইয়ার্ডের ১২ জন লোক অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। আমরা তাৎক্ষণিক তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করি। ভর্তিরত অবস্থায় সাত থেকে আটজনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা বার্ন হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। দুর্ঘটনার নিছক দুর্ঘটনা। এখানে কারো হাত নাই। আহতের চিকিৎসায় আমরা সর্বদা নিয়োজিত থাকবো। আমরা পরিবেশের নিয়ম মেনেই জাহাজের কাটিং করি। কিন্তু এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত।’
রাশেদ নামে স্থানীয় এক লোক বলেন, ‘সকালের দিকে এস এম করপোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর আমরা গিয়ে দেখি ইয়ার্ডে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিস এসে এক এক করে ১২ জনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করে।’
সীতাকুন্ডের কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দুপুর ১২টায় শীতলপুর এস এন করপোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে বিস্ফোরণের ঘটনা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট আসে। যেহেতু এটি একটি তেলের জাহাজ। তাই আগুন এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আহতদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘শীতলপুর এস এন করপোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে বিস্ফোরণের ঘটনা জানতে পেরে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। বিস্ফোরণে ১২ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশংকাজনক।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন বলেন, ‘সীতাকুÐে জাহাজভাঙা কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ১২ জনকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কয়েকজনের অবস্থা খুবই গুরুতর। তাদের প্রায় সত্তর শতাংশের কাছাকাছি কিংবা তারও বেশি পুড়ে গেছে। তাদের ঢাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। বাকিদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মো. রফিক উদ্দিন জানান, ‘আহতদের সবার শরীরের ২৫ থেকে ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে। প্রায় সবার শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
এদিকে দুর্ঘটনায় শ্রমিক আহতের ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম। ফোরামের আহব্বায়ক তপন দত্ত, যুগ্ম আহব্বায়ক মুহাম্মদ শফর আলী ও এএম নাজিম উদ্দিন এবং জাহাজভাঙা শ্রমিক সেফটি কমিটির আহব্বায়ক মহির উদ্দিন মাহমুদ ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, গত ৩ জুলাই ফোর স্টার শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনায় চারজন শ্রমিক মারাত্মকভাবে আহত হন। তখন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের পরিদর্শন রিপোর্টে মালিকপক্ষের সুস্পষ্ট ত্রুটি ও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে আজ এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এস এন করপোরেশন একটি গ্রিন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে। এ ধরনের ইয়ার্ডে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রমাণ করে শিপব্রেকিং সেক্টরে এখনও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ফোরামের নেতারা শিল্প ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যৌথ কমিটি গঠন করে দুর্ঘটনা তদন্তের দাবি জানান।