সিলেটের ৫ উপজেলায় আকস্মিক বন্যা

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের পাঁচ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব উপজেলার অধিকাংশ এলাকা ডুবে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেন দুর্গতরা। তাদের জন্য শুকনো খাবার, চাল ও নগদ টাকা উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। খোলা হয়েছে ৪৭০ আশ্রয়কেন্দ্র।
ডুবে যাওয়া উপজেলাগুলো হলো, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ। বুধবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে কয়েক হাজার পরিবার। পানিবন্দিদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে তারা এখনও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেনি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত চলা টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় পাঁচ উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম। অনেক সড়ক ডুবে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। বিশেষ করে বুধবার রাত থেকে এসব উপজেলার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েন। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. ওমর সানী আকন বলেন, গতকাল দুপুরে বন্যদুর্গতদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী পাঁচ উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া পানিবন্দিদের আশ্রয়ের জন্য পাঁচ উপজেলায় ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৫৬টি, জৈন্তাপুর উপজেলায় ৪৮টি, কানাইঘাট উপজেলায় ১৮টি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩৫টি ও জকিগঞ্জ উপজেলায় ৫৮টি। পাশাপাশি মেডিক্যাল টিম মাঠে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কত লাখ মানুষ পান্দিবন্দি হয়ে পড়েছে, তার সঠিক সংখ্যা আমরা পাইনি। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পেতে পারি। আমাদের ধারণা, দুই লক্ষাধিক পান্দিবন্দি হতে পারে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি উপজেলায় অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষ পান্দিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য এক হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব উপজেলায় আরও ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবুল কুদ্দুস বুলবুল জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন দুর্গতরা।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন জানান, গতকাল সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত জেলায় ৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৯টায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদীর পানি একদিনে ২০২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপরে এবং কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৭৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জাফলং-বিছনাকান্দিসহ সব পর্যটন এলাকার পর্যটকবাহী নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে। উপজেলার ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে বুধবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত তিন শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এখনও অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রয়োজনে তারাও উদ্ধার অভিযানে যোগ দেবে।