সিরু বাঙালি মিথ্যাচার করছে পুরোটাই আষাঢ়ে গল্প

1

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও মিথ্যাচারের সুস্পষ্ট অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা সিরু বাঙালি প্রণীত ‘বাঙ্গাল কেন যুদ্ধে গেল’ বইটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছে।
তিনি গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা আহুত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের উদ্দ্যেশে বলেন, ‘সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরু বাঙালি ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেও তিনি চট্টগ্রাম শহরে মুক্তিযুদ্ধে কোন অপারেশন করেননি। চট্টগ্রাম শহরে কোন মুুক্তিযুদ্ধকালীন কোন কমান্ডার তাঁকে চিনতেন না, নামও জানতেন না। তিনি মুুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন বা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ঘোরাফেরা করলেও এমন কোন প্রমাণ নেই যে তিনি শহরে কোন অপারেশন করেছেন। অথচ তার বইতে তিনি জঘন্য মিথ্যাচার করে নিজেকে হিরো বানালেও পুরোটাই একটি আষাঢ়ে গল্প।
তিনি আরো বলেন, বাঙ্গাল কেন যুদ্ধে গেল বইটিতে প্রতিটি পাতায় শুধু মিথ্যাচারই করেননি, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চরিত্র হরণ করে তাঁদের অপমান করেছেন। এমন কি তিনি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কেও মিথ্যাচার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডা মাহফুজুর রহমান সিরু বাঙালির উদ্দেশ্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, সাহস থাকলে সিরু বাঙালি চট্টগ্রাম শহরে মুক্তিযুদ্ধের কথিত বীরত্ব গাঁথার প্রমান্য তথ্য উপাত্তসহ প্রমাণ তুলে ধরুন। যদি না পারেন তাহলে তার অসৎ কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহর’ গ্রন্থে সিরু বাঙালিকে যেভাবে উপস্থাপন করেছি তার একটি কৈফিয়ৎ প্রদানের তাগিদ উপলব্ধি করছি। গ্রন্থটি যখন প্রকাশের প্রস্তুতি চলছিলো তখন সিরু বাঙালির সাথে আমার পরিচয় হয়। তিনি আমার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে আসতেন। আমি তাঁকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শ্রদ্ধা, সম্মান ও বিশ্বাস করতাম। তাঁর আগ্রহ থেকে তাকে আমি মুক্তিযুদ্ধ চট্টগ্রাম শহর এর পান্ডুলিপিটি পড়তে দিই। তিনি এটি পড়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি চট্টগ্রাম শহরে এত কাজ করেছি তার ছিঁটেফোটাওতো এই পান্ডুলিপিতে নেই। এই বইটি একেবারে অসম্পূর্ণ।’ তখন তাঁকে বলি আপনার কোন ভুমিকা মুক্তিযুদ্ধে থাকলে সেটাও লিখে দিন। কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু তিনি বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন; তা প্রমাণ পেলাম এই গ্রন্থটি মুদ্রিত হয়ে ২০১৩ সালে প্রকাশের পর। কেননা ৭১ এর রণাঙ্গণের চট্টগ্রাম শহরের যুদ্ধকালীন কমান্ডার ও অনেক মুক্তিযোদ্ধারা অবাক বিস্ময়ে বলেছিলেন সিরাজুল ইসলাম বা সিরু বাঙালি নামে কোন মুক্তিযোদ্ধা হয়ত থাকতে পারেন কিন্তু চট্টগ্রাম শহরে তিনি কখনো কোন অপারেশন করেননি এবং চট্টগ্রাম শহরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তাঁকে চিনতেন না এবং তার নামটিও জানতেন না। আমার বিশ্বাসভঙ্গ করে সিরু বাঙালি আমার প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত গ্রন্থে যে মিথ্যাচার ও কল্পকাহিনি করেছেন সেজন্য আমি অনুতপ্তই শুধু নই, ক্ষুব্ধ এবং এজন্য আমি তার কাজ থেকে কৈফিয়ৎ দাবি করলেও তিনি অদ্যাবধি আমার মুখোমুখি হতে সাহস করেননি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মাহবুব বলেন, ‘সিরু তাঁর লেখায় কালুরঘাট যুদ্ধে চারটি গ্রেনেড পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। ১ মে, ৩ মে ও ৪ মে সেই গ্রেনেড গুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে চট্টগ্রাম শহরে। অথচ ভারতে গ্রেনেড চার্জ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে। এগুলো তার বইয়ে আছে। এখন প্রশ্ন হলো প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে কিভাবে তিনি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটালেন? তাছাড়া কালুরঘাটের সেই যুদ্ধটি হয়েছিলো দুটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর মধ্যে। তার কাছে গ্রেনেড গুলো কিভাবে আসলো?
বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.হ.ম নাছির চৌধুরী বলেন, যুদ্ধ কালীল সময়ে সিরু বাঙালির সাথে আমার পরিচয় না থাকা শর্তেও সে একটা অপারেশনে আমার নাম উল্লেখ করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রদ্যুৎ পাল ও এম এন ইসলাম বলেছেন, যুদ্ধের সময়ও আমাদের ও ক্যাপ্টেন করিমের সাথে সিরু বাঙালীর দেখা হয়নি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হারিছ বলেন, ‘সিরু বাঙালি মোটেই যুদ্ধ করেননি। তিনি ট্রেনিং নিয়ে এসেছেন। তিনি শহরে অপারেশন করেছেন বলে প্রমাণ নেই। তবে গল্প বানিয়ে বানিয়ে বই লিখেছেন। এমনভাবে গল্পগুলো বানাচ্ছেন যে, কেউ টেরই পায় না। পরে খতিয়ে দেখতে গেলে বুঝতে পারে সবাই।’
উপস্থিত সকল মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, তিনি (সিরু বাঙালি) তো কোথাও ছিলেন না। তিনি পটিয়ার মানুষ, কোন পূর্বানুমতি ছাড়া এক এলাকার যোদ্ধা অন্য এলাকায় যুদ্ধ করার নিয়ম নেই। তাহলে প্রশ্ন চট্টগ্রাম শহরে কিভাবে যুদ্ধ করলেন বলে লিখছেন। শহরে কীভাবে গ্রেনেড চার্জ করলেন? ক্যাপ্টেন করিমের কথা বলছেন সিরু বাঙালি। অথচ করিমকে তিনি জীবনে চোখেও দেখেননি।’
সিরু বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, গবেষক যে নামেই তিনি পরিচিত হোন না কেন তিনি যে মিথ্যাচার করছেন তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। একজন মুক্তিযোদ্ধা সিরু বাঙালি তাঁর মিথ্যাচারে তিনি লজ্জা না পেলেও আমরা লজ্জা পাই।এ লজ্জা কীভাবে ঢাকি? আমরা মনে করি সিরু বাঙালির মিথ্যাচারে নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত হবে।এর দায় অবশ্যই সিরু বাঙালিকে নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা তারা হলেন মো. ফেরদাউছ ইসলাম খান, এ.এইচ.এম নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, আজিজুল হক, এ কে এম মতিন চৌধুরী, মো. শফি খাঁন, প্রদ্যোৎ কুমার পাল, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী (চৌধুরী মাহবুব), মোহাম্মদ সাহাদুল হক, মোহাম্মদ জমির, মো. কামাল উদ্দিন, মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, ডা. মাহফুজুর রহমান, ফজলুল হক ভুঁইয়া, ফাহিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আবুল কাসেম, মোজাফফর আহমেদ রাজু, এম এন ইসলাম, মোহাম্মদ হারিছ, মুহাম্মদ সবুর, দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ, এস এম নুরুল আমিন।-বিজ্ঞপ্তি