সাড়ে তিন বছরেও কমিটি দিতে পারেনি জেলা বিএনপি

7

এম এ হোসাইন

সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি দিতে পারেনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি। বিএনপির অনেক ত্যাগী নেতার অবস্থান সাংগঠনিক এই ইউনিটটিতে। যারা নেতৃত্ব দিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। এমন অবস্থার পরও ইউনিটটিতে কিছুই করতে পারেনি জেলা বিএনপি। কমিটি দিতে না পারার কারণ হিসাবে ‘যোগ্য’ নেতার সংখ্যা বেশি থাকাকেই দায়ী করছেন তারা।
বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করি নাই। শুরু করলে এটা করে দিব। মাঝখানে আন্দোলন সংগ্রামে অনেক সময় গেছে। এখন সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হবে। তখন আমরা ইউনিটটির কমিটি দিয়ে দিব।’
সংসদীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনের ভোটার সাতকানিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের (খাগরিয়া, কালিয়াইশ, কেওচিয়া, ধর্মপুর, বাজালিয়া ও পুরানগড়) বাসিন্দারা। আবার উপজেলা নির্বাচনে সাতকানিয়া উপজেলায় ভোট দেন তারা। সাতকানিয়া ও চন্দনাইশের মধ্যে দোটানায় থাকা বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে স্বতন্ত্র থানা ও উপজেলার দাবি জানিয়ে আসছেন। এ অবস্থার মধ্যে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ জেলা বিএনপির অধীনে ‘উত্তর সাতকানিয়া’ নামে নতুন ইউনিটের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক ইউনিট ঘোষণার পর নতুন করে এসব ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। তবে তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কমিটি না পাওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে ইউনিটটিতে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আসলে বিভিন্ন কারণে আমরা উত্তর সাতকানিয়ার কমিটি দিতে পারিনি। নেতৃবৃন্দের মতামতের বিষয় আছে। যোগ্য নেতার সংখ্যা বেশি। যার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে। মাঝখানে আন্দোলন সংগ্রামে সময় কেটে গেছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি সাংগঠনিক ইউনিটটির কমিটি দিয়ে দিব।’
মূলত সাতকানিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক ইউনিট গঠন করে বিএনপি। যে ইউনিয়নগুলো সংসদীয় আসন হিসাবে চন্দনাইশের সাথে যুক্ত। সাংগঠনিকভাবেও শক্ত এ ছয় ইউনিয়নে বিএনপির অবস্থান ভাল ছিল। তবে কমিটি না থাকার কারণে দোটানায় পড়তে হতো দলীয় নেতাদের। কখনো সাতকানিয়ায় আবার কখনো চন্দনাইশের রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে হতো এসব ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের। এই দোটানা থেকে মুক্তি পেতে স্বতন্ত্র সাংগঠনিক ইউনিট দাবি করে আসলো নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের দাবি মেনে কেন্দ্র থেকে ইউনিট ঘোষণা হওয়ার পর কমিটি গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে দক্ষিণ জেলা বিএনপি। ইউনিটটির আহব্বায়ক পদ পেতে ১১ জন এবং সদস্য সচিব পদ পেতে ২৪ জন নেতা আগ্রহী হয়ে জীবন বৃত্তান্তও জমা দেয়। তবে অদৃশ্য কারণে এখনো ঘোষণা হয়নি উত্তর সাতকানিয়ার কমিটি।
উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক ইউনিট গঠনের দাবিতে সরব ছিলেন তৎকালিন দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম রাহী। সাংগঠনিক ইউনিট ঘোষণার পর আহব্বায়ক বা সভাপতি পদ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। ‘এক নেতার এক পদ’ নীতিতে তিনি দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির পদটি ত্যাগ করেন।
সাড়ে তিন বছরেও কমিটি না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম রাহী বলেন, দক্ষিণ জেলায় উপজেলা-পৌরসভা ও সাংগঠনিক মিলে ১৫টি ইউনিট। একমাত্র উত্তর সাতকানিয়াতে কমিটি গঠনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিভি নেয়া হয়েছে। এক বছর আগে সিনিয়র নেতারা সবার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তখন ১১ জন আহŸায়ক ও ২৪ জন সদস্য সচিব প্রার্থী ছিলেস। কয়েকজন এর মধ্যে মারাও গেছেন। কিন্তু আজো কমিটি আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৯ সালের ২ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় সংসদের মহাসচিব বরাবরে সাতকানিয়ার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে সাংগঠনিক থানা ‘সাঙ্গু ইউনিট’ গঠনের আবেদন করা হয়। আবেদনে বলা হয়, ‘১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমরা এই এলাকায় সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছি। সাতকানিয়া বড় একটি উপজেলা, যাহাতে ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা আছে। এই বিশাল উপজেলায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা উপজেলা নেতৃবৃন্দের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যায় এবং উল্লেখিত ৬টি ইউনিয়ন চট্টগ্রাম-১৪ নির্বাচনী এলাকায় হওয়ায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া আরো বেশি দূরহ হয়। ফলে দীর্ঘদিন থেকে ওই এলাকার রাজনৈকি কর্মকান্ড অচল অবস্থার উপক্রম। কারণ জাতীয় নির্বাচন আসলে দেখা যায় চন্দনাইশের নেতৃবৃন্দের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচারনা করি। আবার নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে সাতকানিয়া নেতৃবৃন্দের সাথে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, ফলে দোটানায় সাতকানিয় আংশিক নির্বাচনী এলাকায় জাতীয়তাবাদী দল ও অঙ্গ সগঠন সমুহের রাজনৈতিক কর্মকাÐের ব্যাঘাত ঘটে। নির্বাচনী এলাকা হিসেবে চট্টগ্রাম-১৪ সাতকানিয়া আংশিক, বিশেষ করে ৬টি ইউনিয়নে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় গতিশীল নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ৬টি ইউনিয়নকে নিয়ে একটি সাংগঠনিক থানা যা সাংগু নামে অবহিত করে অনুমোদনের জন্য আপনার বরাবরে অনুরোধ করতেছি এবং অনুরুপ কমিটি অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনেরও আছে। ৬টি ইউনিয়ন, দোহাজারী পৌরসভা ও ধোপাছড়ী ইউনিয়নকে নিয়ে একটি প্রশাসনিক থানা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে।
আবেদনটিতে স্বাক্ষর করেন বিএনপি নেতা আফিল উদ্দিন আহমদ। কমিটি গঠন না হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ঠিক সাড়ে তিন বছর সময় হয়েছে। কমিটি গঠনের তৎপরতা মাঝখানে একটু দেখা গিয়েছিল। আবার চুপ হয়ে গেছে। এখন সিনিয়র নেতাদের তো আমরা কিছু বলতে পারি না। মাঝখানে করোনা ও আন্দোলনের বিষয় ছিল। আমরা আশা করবো দ্রæত কমিটি দিয়ে দিবে।