সারাদেশে হামলা, নৈরাজ্য ও লুটপাট বন্ধ করুন

7

মো. দিদারুল আলম

বৈষম্য বিরোধী গণ আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর দেশে জীবন ও সম্পদের নিশ্চয়তার খোঁজে মানুষ। গত সোমবার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের ইতি টেনে শেখ হাসিনা যখন দেশ ছাড়েন, তখনও দেশজুড়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে লড়াই চলছিল। পুলিশ এখনো থানায় ফিরেনি, ছাত্ররা মাঠে ট্রাফিকের কাজ না করলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতো। নিরাপত্তার ভয়ে ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারেনি।
প্রায় ২০ দিনের প্রাণঘাতি আন্দোলনের পর সরকারের যখন পতন ঘটে, তখন জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা বিভাগ, সেবাখাত, স্বাস্থ্য খাতসহ সরকারের অধিকাংশ দপ্তরের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান মঙ্গলবার থেকে প্রশাসনের সবাইকে দপ্তরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও পরিস্থিতির কারণে তার প্রতিফলন ঘটেনি।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে থানাগুলোতে। সরকার পতনের আগেই সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিভিন্ন থানায় ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। সরকারের পতন হওয়ার পর অনেক থানা থেকে পুলিশ প্রাণ বাঁচাতে বেরিয়ে আসে। দেশের বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র লুট হয়েছে, আগুনে পুড়ে গেছে তোষাখানায় রাখা জিনিসপত্র।
অভ্যুত্থানকারীরা গণভবনের দখল নিয়ে সবকিছু লুটপাট ও তছনছ করেছে। সংসদ ভবনে ঢুকেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হইহুল্লোড় করেছে তারা। প্রশাসন প্রায় অকার্যকর থাকার সময়ে ঢাকার রাস্তায় ট্র্যাফিক শৃঙ্খলা ও আবর্জনা পরিষ্কারে স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন স্থানে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায়ও এগিয়ে এসেছেন কেউ কেউ।
এর মাঝেও প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, সাধারণের ঘরবাড়িতে লুটতরাজ, ডাকাতি ভাঙচুরের মত নৈরাজ্য থেমে নেই। অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আপনারা যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন, তাহলে নিশ্চিত করেন দেশের কোন জায়গায় কারও ওপর হামলা হবে না, সহিংসতা হবে না। তিনি আরো বলেন, সারা বাংলাদেশ একটি পরিবার। আমরা সবাই একসাথে চলতে চাই। যত হামলা হচ্ছে সব ষড়যন্ত্রের অংশ। আমাদের কাজ এসব থেকে সবাইকে রক্ষা করা। বিশৃঙ্খলা- সহিংসতা অগ্রগতির বড় শত্রু। আমাকে প্রয়োজন মনে করলে আমার কথা শুনতে হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অর্জিত বিজয়কে ধরে রাখতে সামাজিকভাবে প্রতিটি গ্রাম মহল্লায় দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণকে ছাত্র জনতার বিজয় নস্যাৎকারী দুষ্কৃতকারীদের রুখে দাঁড়াতে হবে। সকলকে মনে রাখতে হবে যে, বহু মত ও পথের বাংলাদেশে ভাস্কর্য থাকবে। মন্দির- মসজিদ – গির্জা- প্যাগোডা- থাকবে। মাজার থাকবে- বাউল-ফকিরসহ সমস্ত সংস্কৃতি থাকবে। এই দেশ সব ধর্মের, সব জাতির, সব মানুষের দেশ।
বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীরা ডাকাতি, লুটতরাজ শুরু করেছে। জনজীবনে আতঙ্ক ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিরা চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লাইব্রেরি, সংগীত চর্চার স্থাপনায় হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, তার এত বছরের সংগীত যন্ত্রের বিশাল সংগ্রহশালা লুট করা, আগুন দেওয়ার মতন ঘটনা ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক বিজয়কে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা।
আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে অরাজকতা, নৈরাজ্য ও লুটপাট বন্ধ করতে হবে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক, কলেজ শিক্ষক ও চিত্রনাট্যকার