সাবেক চবিয়ান মন্ত্রী-এমপিদের সংবর্ধনা

14

বেলা আড়াইটা। সূর্য ঠিক মাথার ওপর। চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টার তখনো প্রায় ফাঁকা। একটু সময় গড়াতেই লোকারণ্যে ভরে যেতে লাগলো পুরো কনভেনশন। একে একে দেশের নানা জায়গা থেকে আসতে থাকেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে উৎফুল্লে মেতে উঠেন চবিয়ানরা। মুহুর্তেই পরিণত হয় মিলনমেলায়। বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের ঈদ পুনর্মিলনীর কথা।
‘সাফল্যের উচ্ছ¡াসে, উৎসব আনন্দে’ প্রতিপাদ্যে প্রথমবারের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এলামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সাবেক চবিয়ানদের মধ্যে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
গত শুক্রবার নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে দুপুর আড়াইটায় এ মিলনমেলা শুরু হয়। প্রায় পাঁচ হাজার সাবেক শিক্ষার্থী এই মিলনমেলায় অংশ নেন। অল্প সময়ের জন্য যেন সবাই ফিরে যান ক্যাম্পাস জীবনে। হাসি-ঠাট্টা আর আড্ডায় মেতে উঠেন সবাই। কেউবা স্মৃতিকাতর হয়ে গানে মেতে উঠেন।
পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে কেউ চাকরিতে ব্যস্ত আছেন কেউ আছেন রাজনীতিতে। কেউবা সাংসারিক কাজে কেটে যায় দিন। আজকের পুনর্মিলনীতে এসে যেন তারা ফিরেন ক্যাম্পাস জীবনে। বন্ধুদের পেয়ে সেলফির জুড়ি নেই। স্মৃতিটাকে ফ্রেমবন্দী করে রাখতে ব্যস্ত অনেকেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম ব্যাচের আবদুল সালাম এসেছেন মিলনমেলায়। বন্ধুদের মধ্যে তেমন কেউ না আসলেও আনন্দের তার যেন সীমা নেই। স্বল্প সময়ের জন্য যেন তিনি ক্যাম্পাসে ফিরে যান। তিনি বলেন, কত কত আড্ডা দিয়েছি। শাটলে আসা-যাওয়া ক্লাস শেষে বাসায় ফেরা। সব যেন চোখের সামনে ভাসছে। বিকাল তিনটায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চবি এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল করিম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম, উদযাপন কমিটির আহব্বায়ক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সচিব কামরুল হাসান হারুন। এতে সংবর্ধিত অতিথিরা হলেন সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের এমপি আবদুচ ছালাম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ফরিদুন্নাহার লাইলী, চট্টগ্রাম-৬ আসনের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, ফেনী-১ আসনের এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি শামীমা হারুন লুবনা, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক ও কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল।
সম্মাননা পর্বে এলামনাই এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন এলামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল করিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব কামরুল হাসান হারুন। এসময় সংবর্ধিতদের উত্তরীয় ও ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পরে সম্মাননা সনদ প্রদান করা হয়। এসময় সংবর্ধিত অতিথিরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। আয়োজকদের অনেক ধন্যবাদ।
প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, সংবর্ধিতদের মধ্যে আমরা সবচেয়ে জুনিয়র। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, অনেকদিন পর এমন প্রোগ্রামে এসেছি। সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। ধন্যবাদ এমন আয়োজনের জন্য।
মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি। এই প্রতিষ্ঠান অনেক সুনাম অর্জন করেছে। সামনে আরও সুনাম অর্জন করুক।
এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, আজকের দিনটি অনেক স্মরণীয় দিন। আজকে অনেকেই এখানে উপস্থিত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের অনেক স্মৃতি। এটা আমাদের প্রিয় ঠিকানা। একটাই কথা সেটা হলো আমরা সবাই যাতে একসাথে বসতে পারি। প্রাণ খুলে কথা বলতে পারি।
এমপি ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন আয়োজনের জন্য। আজকে খুব খুশি লাগছে সবাইকে দেখে।
এমপি আবদুচ ছালাম বলেন, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে আমি একাউন্টটিং বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছি। আজকের সম্মাননা পাওয়ার জন্য পঞ্চাশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এমপি শামীমা হারুন লুবনা বলেন, আমার জ্ঞানের দ্বার খুলেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমি অনেক ঋণী। আজকে অনেক ভালো লাগছে আসতে পেরে।
এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, আজকে ট্রেনের ছাদে করে যাওয়ার স্মৃতি মনে পড়ছে। এরকম নানা স্মৃতি আজকে ভেসে উঠছে। এরকম প্রোগ্রাম পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে করার অনুরোধ থাকবে দায়িত্বশীলদের প্রতি।
চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হবে জ্ঞান সৃজন ও বিতরণ। আমি উপাচার্য হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই কথাটিই বলেছি। আমি ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আগামী ডিসেম্বরে সমাবর্তন হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আপনারাও আমন্ত্রিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাংকিংয়ে নিয়ে আসার জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে এলামনাই এসোসিয়েশন আশা করি সহযোগিতা করবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাউল শফি মÐল ও রাখি শবনম। সর্বশেষ ব্যান্ড ফিডব্যাক তাদের পরিবেশনা ও প্রীতিভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়। খবর বিজ্ঞপ্তির