সাতকানিয়ায় কোটি টাকা নিয়ে উধাও ভুয়া এনজিও

28

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

সাতকানিয়ায় এক ভুয়া এনজিও’র বিরুদ্ধে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী আলমগীর সড়কে ‘সিবিডিসি’ নামের এই ভুয়া এনজিও ঋণ দেওয়ার নাম করে গ্রাহকদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে এ প্রতারণা করে। পরে ঋণ না দিয়ে ওই এনজিও’র কর্মকর্তারা এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। খবর পেয়ে গত রবি ও সোমবার শত শত ভুক্তভোগী ঋণ না পেয়ে এ অফিসে জড়ো হন। এসময় ভুক্তভোগীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিশৃঙ্খল আচরণ শুরু করলে স্থানীয় ইউপি সদস্য লোকমান, সাতকানিয়া থানার এসআই নঈম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
জানা গেছে, সরকারি অনুমোদনহীন এ প্রতিষ্ঠানটি কেওচিয়া তেমুহনী এলাকায় আবদুল মালেক মানিকের মালিকানাধীন বাসা থেকে কয়েক দিন ধরে তাদের কার্যক্রম চলছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় দেখানো হয়েছে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে।
সিবিডিসি’র ম্যানেজার জসীমের নেতৃত্বে মাঠপর্যায়ে তাদের কর্মীদের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দোকানদার, যুবক, চা শ্রমিক, গৃহকর্মী ও নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মনোহারি, হার্ডওয়্যার, মৎস্য খামার, গরুর খামার, প্রবাসী ঋণ এবং যেকোনো বৈধ ব্যবসায় ঋণের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আবদুল গফুর নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আমিসহ ৬ জনকে ঋণ দেওয়ার জন্য খলিলুর রহমান সদস্য ভর্তি বাবদ প্রথমে ৬২০ টাকা করে নেন। এর মধ্যে যাদের জন্য ঋণের প্রস্তাব পাশ হয়েছে তাদের কারও কাছ থেকে প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা, দুই লাখে ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজারে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।ঋণ নেওয়ার জন্য অফিসে এসে দেখি কর্মকর্তারা অফিস তালাবদ্ধ রেখে পালিয়ে গেছে।’
দেখা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানটি এখন তালাবদ্ধ। অফিসের সামনে শত শত লোক ঋণ নেওয়ার জন্য ভিড় করেছেন। প্রতিষ্ঠানের লোকজন ৫ শতাধিক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
বাসার মালিক আবদুল মালেক মানিক বলেন, ১২ এপ্রিল ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন আমার বাসার একটি ইউনিট মাসিক হিসেবে ভাড়া নেন। পরদিন তারা ভোরে বাসায় উঠেন। শনিবার আমার সঙ্গে বাসা ভাড়ার চূড়ান্ত চুক্তি করার কথা ছিল। পরে তারা হেড অফিসের কথা বলে কিছুদিন সময় নেয়। ১৯ এপ্রিল সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তারা বাসা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সিবিডিসি’র ম্যানেজার জসিম ও মাঠকর্মীদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লোকমান বলেন, ‘আমার এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি থাকা সত্তে¡ও আমি বিষয়টি জানতাম না। এটি একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান। এরা বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’ তাছাড়া বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় মালিককে ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাগজপত্রাদি যাচাই করা উচিত ছিল বলেও মনে করেন তিনি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখা হয়। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজনদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশনামতে বাসার মালিক ও অফিসটি সিজ করে পুলিশের নজরদারি রাখা হয়।