সাগরে ফুঁসছে ‘রেমাল’

8

তুষার দেব

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’- এ পরিণত হয়েছে। যা সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-এক শক্তিমাত্রার ঝড় হিসেবে আজ রবিবার মধ্যরাত থেকে আগামীকাল সোমবার সকালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দীঘা থেকে পটুয়াখালীর মাঝামাঝি যে কোনও জায়গার উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা ১০ মিনিটে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হওয়ার তথ্য দিয়েছে ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)। তাদের মতে, ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় একশ’ ১৮ থেকে ১৫১ কিলোমিটার পর্যন্ত। সাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তি সঞ্চয় করে ফুঁসছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। খুলনার সুন্দরবন থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সব উপক‚লীয় জেলা এর আওতায় পড়বে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা ও নোয়াখালী জেলা ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় পড়বে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে ৬ নম্বর (গতকাল) বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর (গতকাল) বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বিডব্লিউওটি’র প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেন বলেন, বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে বরিশাল, নোয়াখালী এমনকি চট্টগ্রামের অদূরবর্তী দ্বীপগুলোও ঘূর্ণিঝড়জনিত মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এসব এলাকায় ঘণ্টায় ৭০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে এবং ছয় থেকে আট ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। বর্ষাকালের মত একটানা বৃষ্টিও হতে পারে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। উপক‚লীয় এলাকা যেমন পশ্চিমবঙ্গ, খুলনা, বরিশাল এলাকায় কোথাও কোথাও দুইশ’ থেকে পাঁচশ’ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
আবহাওয়াবিদরা অনুমান করছেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই খুলনা থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানতে পারে। অপেক্ষাকৃত বেশি এলাকা ধরে ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তৃতি থাকতে পারে।ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা হয় ‘সুপারসাইক্লোন’।
ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ সাত নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নি¤œচাপটি উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে পাঁচশ’ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে চারশ’ ৩৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে চারশ’ ৭৫ কিমি দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে চারশ’ ২৫ কিমি দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। বর্তমানে গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থায় গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে সাগরে অবস্থানরত ঘুর্ণিঝড় রেমালকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের চিন্তা মাথায় রেখেই আমরা ইতোমধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। উপক‚লীয় এলাকায় সব ধরনের লঞ্চ এবং নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে নদীবন্দরগুলোতে চলাচল করা লঞ্চের জন্য এখন পর্যন্ত এমন কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সে ব্যাপারে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে আজ রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।