সর্বাধিক ভুল তথ্য আ. লীগ ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে

13

চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো ১৩৮০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে দেশের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। প্রতিষ্ঠানিটি গত বছরের একই সময়ে ৮৫৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছিল।
রিউমর স্ক্যানার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ভুল তথ্য প্রচার বৃদ্ধিতে যেসব বিষয় ভূমিকা রেখেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংসদ নির্বাচন, রাজনৈতিক নানা ঘটনা আর খেলাধুলার বিভিন্ন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক আসর। খবর বিডিনিউজের
এই সময়ে একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে একক ইস্যু হিসেবে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগ। এ বছর প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভুল তথ্য প্রচারের হার বেড়েছে ১১ শতাংশ।
রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে গত ছয় মাসে প্রকাশিত সব প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এই ফল পাওয়া গেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রাজনীতিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে। তাকে জড়িয়ে শনাক্ত করা ৯৪টি ভুল তথ্যের মধ্যে ৮১টিই রাজনীতিকেন্দ্রিক।জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে প্রতি মাসেই তাকে নিয়ে একাধিক ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি- ২৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে নির্বাচনের মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে।
শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছয় মাসে প্রতি দুই দিনে একটি করে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব ভুল তথ্য ছড়াতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে ইউটিউবকে। চটকদার থাম্বনেইল, বিভ্রান্তিকর শিরোনাম আর অপ্রাসঙ্গিক ফুটেজ ব্যবহার করে ইউটিউবে ছড়ানো ভুয়া ভিডিওগুলো লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। এর বাইরে ফেসবুক ও টিকটকেও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হয় বলে জানানো হয়েছে এতে।
রাজনীতিকদের নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে এর পরের অবস্থানে আছেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তাকে নিয়ে ৭৪টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এর পরের অবস্থানে আছেন হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন। তাকে নিয়ে ৪৬টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
নিজেদের পেশাগত পরিচয়ের বাইরে নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে এই দুইজনের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রচারের হার বেড়েছে বলে মনে করছে রিউমর স্ক্যানার। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি, এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের নামে ছয় মাসে ২১৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চাইতে আওয়ামী লীগের বিষয়ে শনাক্ত ভুল তথ্যের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটিকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ৭৪টি ভুল তথ্যের মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামেই সবচেয়ে বেশি (২২টি) ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ছয় মাসে রাজনীতি বিষয়ে ২৭২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ভোটের মাস জানুয়ারিতেই শনাক্ত হয়েছে ১২৪টি। পরের পাঁচ মাসে তা গড়ে ৩০টিতে নেমে এসেছে।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাকে নিয়ে ছড়ানো ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্থাপনাকে নিয়েও এই ছয় মাসে অসংখ্য ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার জানিয়ে, জাতীয় সংসদকে নিয়ে ২৪টি, নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে চারটি, বাংলাদেশ রেলওয়েকে নিয়ে সাতটি, বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ে একটি, সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ে একটি, বাংলাদেশ সচিবালয়কে নিয়ে একটি, ভূমি মন্ত্রণালয়কে নিয়ে দুইটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি, বিমান বাংলাদেশকে নিয়ে একটিসহ একাধিক সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের নামে ভুল তথ্য প্রচারের তথ্য তারা পেয়েছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ, ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, বিশ্ব ব্যাংক, জাইকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ওআইসির মতো প্রতিষ্ঠানকে নিয়েও ভুল তথ্য ধরা পড়েছে।