সরকার পতনের পর পুঁজিবাজারে ‘প্রাথমিক উচ্ছ্বাসে’ ভাটা

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নৈরাজ্যের মধ্যে দেশে ব্যবসা বাণিজ্য থমকে দাঁড়ানোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে পুঁজিবাজারে চাঙাভাব থাকলেও এখন তাতে ভাটা পড়েছে। গত ৫ আগস্ট প্রবল গণ আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিন কর্মদিবসেই সূচক বাড়ে ৬৯৫ পয়েন্ট। এরপর দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির পর ১১ অগাস্টও এক পর্যায়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স পৌনে তিনশ পয়েন্ট বেড়ে গেলেও দিন শেষে ৯১ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন। সেদিন হাতবদল হয় ২ হাজার কোটি টাকার শেয়ার।
চার কর্মদিবসে ৭৮৬ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির এই উচ্ছ্বাস পরের কর্মদিবস থেকেই ভাটা পড়তে থাকে। গ্রামীণফোন, রবি, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো এবং ব্যাংক ও আর্থিক খাতের মত বড় মূলধনি বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদরে লাফ দেওয়ার কারণে সূচক বাড়লেও সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারের বেড়ে যাওয়ার দর আগের অবস্থান বা কাছাকাছি নেমে এসেছে।
এরপর চার কর্মদিবসের মধ্যে তিন দিনই সূচক কমেছে, লেনদেন কমে হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। সোমবার লেনদেন হয়েছে ৯৯৯ কোটি টাকা, যা গত ৮ আগস্টের পর সর্বনিম্ন। ১১ আগস্ট দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেনের দিন এক শেয়ার বিক্রি করে আরেকটি কিনে ফের আটকে গেছে বিনিয়োগকারীরা। খবর বিডিনিউজের
গতকাল বৃহস্পতিবারও ৪৯ পয়েন্ট কমে ডিএসইএক্স নেমে এসেছে ৫ হাজার ৯০৩ পয়েন্ট, যা ১১ আগস্ট এক পর্যায়ে ৬ হাজার ১৬০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে দিয়েছিল। ৯১টি কোম্পানির বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২৭৫টি কোম্পানি, আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ৩২টি।
দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা বা সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে দর বেড়েছে তিনটি কোম্পানির। অন্যদিকে লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মূল্যসীমা না থাকা একটি কোম্পানির দর কমেছে ৫ শতাংশ। দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ বা কাছাকাছি দর হারিয়েছে ৯০টির মত কোম্পানি।
৬ আগস্টের পর থেকে টানা বাড়লেও এদিন সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল রবি, গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনিলিভারের পাশাপাশি আইসিবি, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দুই কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকসের দরপতন থামছে না, একই হারে কমছে বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের দর। প্রতিদিনই ৩ শতাংশের কাছাকাছি দর হারাচ্ছে। তবে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার দর ধরে রাখতে পেরেছে ফ্লোর প্রাইসের কারণে।
প্রধান সূচকের সঙ্গে অন্য দুই সূচকও আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমেছে। আগের দিনের চেয়ে শরিয়া সূচক ডিএসইএস ৫ পয়েন্ট ও ডিএস৩০ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমেছে।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০ কোম্পানির মধ্যে ডিবিএইচ, মিথুন নিটিং ও ফিনিক্স ফাইন্যান্সের পর সার্কিট ব্রেকার ১০ শতাংশের কাছাকাছি, অলিম্পিক, জেএমআই সিরিঞ্জ ও কাশেম ড্রাইসেলের দর ৮ শতাংশের বেশি, প্রাইম টেক্সের দর ৭ শতাংশের বেশি, সিঙ্গার বিডির দর ৬ শতাংশের বেশি এবং সায়হাম কটনের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি। আরও দুটি কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি, চারটির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৭টির দর বেড়েছে তিন শতাংশের বেশি।
সবচেয়ে বেশি ৫ শতাংশ দর হারিয়েছে ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করা ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। বাকি ৯টি কোম্পানিই দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশের কাছাকাছি দর হারিয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো সোনালী লাইফ, আইসিবি, অরিয়ন ফার্মা, লিবরা ইনফিউশন, আলহাজ্ব টেক্সটাইলস, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, নিউলাইন ক্লথিং, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স।