সম্ভাবনাময়ী তারুণ্যের উজ্জীবনের স্মারক

4

মুহাম্মদ আবদুল করিম সেলিম

দশ-পনের বছর ধরে শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশেই একটি ইতিবাচক ধারা দৃশ্যমান। আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থবৃত্তের ঊর্ধ্বে ওঠে কিছু মানুষ মানবিক ও মানবসেবার ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত রাখছে। বিগত দিনে আমরা দেখেছি, ঘূর্ণিঝড় আইলা সিডরসহ নানা দুর্যোগে দুর্গত বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কিছু বিত্তবান ও চিত্তবান মানুষ। এক্ষেত্রে যুব তরুণরাও পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে বৈশ্বিক আপদ করোনা মহামারিতে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নজির আমরা দেখেছি। যুব তরুণসহ সব বয়সী মানুষ এতে আজ শামিল। করোনার আগে এবং পরে সারা দেশে মানবিক মানুষের জাগরণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। আজ হতে ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সনের ৫ জুন চট্টগ্রামের কিছু নিবেদিতপ্রাণ মানবিক যুব তরুণের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘হাসি’ নামক সমাজসেবা ও জনসেবামূলক সংগঠনের নানা কার্যক্রম দেখে আমরা আশাবাদী ও উজ্জীবিত হই। এই ‘হাসি’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মূল উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতাই হলেন তরুণ সমাজকর্মী আলহাজ্ব মুহাম্মদ মোছলেহ্ উদ্দীন মুন্না। তিনিসহ আরও কিছু যুব-তরুণের মানবিক সেবামূলক প্লাটফরম এ ‘হাসি’ সংগঠন। করোনাকালে ‘হাসির’ স্বেচ্ছাসেবীরা নানাভাবে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যা এখনো চলমান। করোনার সময় চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা হাসপাতালগুলোতে ফ্রি ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ, প্রায় প্রতিদিনই চট্টগ্রামের নানা স্থানে গরিব দুস্থ অসহায় মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ, ঘরে ঘরে ত্রাণ ও নগদ অর্থ বিতরণ, এমনকি কক্সবাজার জেলার টেকনাফেও ‘হাসি’ মানবিক কাজের স্বাক্ষর রেখেছে। সেখানে ফ্রি চিকিৎসাসেবা, ত্রাণ বিতরণ, ওষুধ বিতরণ করেছে ‘হাসির’ বন্ধুরা। বড়রাও তাঁদের পাশে আছেন। পাশাপাশি প্রতি বছর ঈদবস্ত্র, শীতবস্ত্র, ইফতার সামগ্রী বিতরণ, গাছের চারা বিতরণ, গরিব শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, গরিবদের স্বাবলম্বী করতে রিকশা বিতরণ, বিভিন্ন স্কুল কলেজ হাসপাতালসহ চট্টগ্রাম নগরের নানা জনবহুল পাবলিক স্পটে তৃষ্ণার্ত মানুষের জন্য সুপেয় পানির মেশিন স্থাপন করেছে এই ‘হাসি’ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা। লালখান বাজার স্কুল, কদম মোবারক স্কুল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইটি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দুইটি এবং ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া খানকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির মেশিন স্থাপন করে হাসি প্রশংসনীয় কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এছাড়া কোতোয়ালী, আনসার ক্লাব, মোমিন রোড, ভাঙ্গাপুল এলাকায়ও পানির মেশিন স্থাপন করছে ‘হাসি’।
প্রচন্ড গরমে আজ কাহিল খেটে খাওয়া শ্রমিক মজদুরসহ নানা স্তরের মানুষ। পথচারি ও শ্রমিকসহ তৃষ্ণার্ত মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে এগিয়ে আসছে ‘হাসির’ মানবিক যুব তরুণরা। শুধু তাই নয়,তাদের সাথে সম্পৃক্ততায় রয়েছে বিভিন্ন বয়সের পেশাজীবী, সমাজ সেবিগণ। তারা প্রায় প্রতিদিনই জনবহুল এরিয়া নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী, বখশির হাট, চাক্তাই খাতুনগঞ্জসহ নানা স্পটে ঘুরে ঘুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করে আসছে। সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে জনসেবায় নিবেদিত আছেন ‘হাসির’ একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ যুব-তরুণরা। যা জনসেবার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আজকের যুব তরুণদের নিয়ে আমাদের আক্ষেপ-অভিযোগের শেষ নেই। তাদের অনেকেই আজ বিপথগামী ও অবক্ষয়ে নিমজ্জিত। অনেকেই কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে এবং মাদকাসক্ত হয়ে নিজেদের সম্ভাবনাময়ী মূল্যবান জীবনকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। অথচ তারা জানে না, কিংবা জানলেও অনুধাবনে অক্ষম তাদের এই জীবন কতোটা দামি ও মূল্যবান। তাদের হাতে অর্পিত হবে আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়ভার। যুব তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎকর্ণধার। তাই তাদেরকে জ্ঞানে গুণে, উন্নত চরিত্র ও আদর্শে গড়ে তুলতে পারলে একটি সমৃদ্ধ সুন্দর উন্নত দেশ গড়ে তুলতে পারবে একমাত্র তারাই। তাদের মাঝে লুকিয়ে থাকা মেধা প্রতিভা দরদী মনটাকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারলে তারা নিজেরা যেমন আলোকিত ও সমৃদ্ধ হবে, তেমনি তারাই গড়ে তুলবে সমৃদ্ধ উন্নত দেশ। এই যে মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘হাসির’ বন্ধুগণ পড়াশোনা ও বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত কাজ কর্মের পাশাপাশি এই বয়স থেকেই দুস্থ গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে অসীম মমতায়।এদের হাতেই নিরাপদ থাকবে দেশ ও দেশের আমজনতা। ‘হাসির’ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তরুণ সমাজকর্মী আলহাজ্ব মুহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন মুন্নাসহ তাঁর সঙ্গে থাকা নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা, উপদেষ্টা ও শুভাকাক্সিক্ষদের পরামর্শে করোনাকালে এবং এখনো নানাভাবে যে মানবিক ও জনসেবামূলক কাজের স্বাক্ষর রাখছে তা শুধু প্রশংসনীয় নয় বরং অন্যদের জন্যও দৃষ্টান্তমূলক। সর্বশক্তি নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মানবিক কাজে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি। যুব-তরুণদের একটি অংশ যখন ‘কিশোর গ্যাংয়ে’ জড়িয়ে আমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিক তখনই ‘হাসির’ বন্ধুগণ ওই অবক্ষয়ের পথে না গিয়ে নিজেদেরকে জনকল্যাণে ও মানবিক কাজে নিবেদিত রেখেছে। এটি একটা ভালো দিক নিঃসন্দেহে। ২০১৪ সনের ৫ জুন থেকে ১০ বছর ধরে ‘হাসি’ দুস্থ গরিব আম জনতার মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। সম্ভাবনাময়ী যুব তারুণ্যের উজ্জীবনের স্মারক এ ‘হাসি’ সংগঠন। এই ‘হাসি’ চট্টগ্রামের গন্ডি পেরিয়ে একদিন সারা দেশে প্রসারিত হবে এই আশাবাদ থাকলো। দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘হাসির’ জন্য রইল শুভ কামনা এবং নিরন্তর শুভেচ্ছা।

লেখক : সংবাদকর্মী ও সংগঠক