সনদ থাকলেই বিশেষ এলাকায় দ্রুত ভোটার

46

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম সহজ করতে এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে বিশেষ এলাকাকে বিভক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ও বি ক্যাটাগরির আওতায় আবেদনকালে দেশে প্রচলিত শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ যাবতীয় বৈধ সনদ সরবরাহ করলেই দ্রæত ভোটার হওয়া যাবে। অন্যথায় বিশেষ কমিটির নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকানোর লক্ষ্যে এতদিন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করায় সেখানকার বাসিন্দাদের ভোটার হতে নানা জবাবদেহির মুখোমুখি হতে হতো। গত আগস্ট মাসে মাসিক সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া কিছুটা সহজ করে পরিপত্র জারি করেছে ইসি।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে এতদিন ভোটার হতে নানা কাগজপত্র দিতে হতো। পাশাপাশি বিশেষ কমিটির যাচাই বাছাইয়ের পর ভোটার হওয়া যেতো। এতে অনেকেই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেরিতে ভোটার হতে পারতো। এখন আমাদের প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে ভোটার হওয়া সহজীকরণ করেছে ইসি। তিন ক্যাটাগরিতে ভোটার হওয়া যাবে। তবে বৈধ সনদ দেখাতে পারলেই ভোটার হওয়া অনেক সহজ হবে।’
ইসি কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ এলাকার যেসব নাগরিকের অ্যাকাডেমিক সনদ বা বৈধ কাগজপত্র আছে তাদের সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের মতো করে যাচাই বাছাই করা হতো। ফলে নিজ দেশের নাগরিক হয়েও রোহিঙ্গা নয়, এই প্রমাণ দিতে বিড়ম্বনায় পড়েন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা। একই ক্যাটাগরিতে না ফেলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দাদের ভোটার নিবন্ধন সহজ করতে শিক্ষা সনদ বা বৈধ কোনো কাগজের ভিত্তিতে এই সেবা সহজীকরণে প্রস্তাবনা দেয়া হয়। চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো প্রস্তাবনা গত আগস্টে ইসির মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে জোরালো আলোচনা হয়। পরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে প্রণীত সুপারিশসমূহ কমিশন কর্তৃক অনুমোদনক্রমে নতুন পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হবে তিন ক্যাটাগরিতে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা বৈধ সনদ ও কাগজপত্রসহ ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবেন। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে এসএসসি বা তদুর্ধ্ব যে কোন অনলাইন সনদ,অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, অনলাইন নাগরিকত্ব সনদ, বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে যে কেউ ভোটারের আবেদন করতে পারবে। এছাড়াও সরকারি চাকরিজীবীর সন্তান ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত হবেন। এক্ষেত্রে সরকারি চাকরিজীবীর চাকরির প্রমাণ স্বরুপ অফিস প্রধান কর্তৃক সত্যায়িত সার্ভিস বহির কপি, নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র প্রদান করতে হবে। এমন আবেদন উপজেলা কিংবা থানা নির্বাচন অফিসার ও রেজিস্ট্রেশন অফিসার সরাসরি নিষ্পত্তি করতে পারবে।
যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র নেই তারা ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, অনলাইন নাগরিকত্ব সনদ, বাবা-মায়ের এএফআইএস (ভোটার যাচাই), স্থায়ী বাসিন্দা সনদ (জেলা প্রশাসন/পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে রাজা প্রদত্ত), ভূমিহীন সনদ, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের রশিদ, পাসপোর্ট কপি, ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে আবেদন করা যাবে। এছাড়াও বাবা-মায়ের মধ্যে একজন বেঁচে থাকলে এবং তিনি ভোটার হয়ে থাকলে তার ভোটার যাচাই এবং অন্যজনের অনলাইন মৃত্যুসনদ দাখিল করতে হবে। আর বাবা-মা কেউ বেঁচে না থাকলে উভয়ের অনলাইন মৃত্যু সনদ দাখিল করতে হবে। এই দুটি ক্যাটাগরির কোনটিতেই না পড়লে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ঠেকাতে এই বিশেষ কমিটি কার্যক্রম ভূমিকা পালন করছে।
একই পরিপত্রে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আটটি কার্য-পরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই কার্যপরিধিতে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের সহযোগিতা, মিথ্যা তথ্য প্রদান ও জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন কিংবা কারো গাফিলতির প্রমাণ মিলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হবে। এইভাবে কোন জনপ্রতিনিধিও যদি রোহিঙ্গা কিংবা ভিনদেশি কোন নাগরিককে নাগরিকত্ব সনদ ও জন্মসনদ প্রদান করেন তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটার নিবন্ধনে ভোগান্তি কমাতে এমন পরিপত্র জারি করা হলেও এতে আরও ভোগান্তি বাড়বে বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। নানা সনদ যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অনৈতিক সুবিধা যাতে নিতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে এ প্রক্রিয়ায় যাদের বৈধ সনদ রয়েছে তারা দ্রুত ভোটার হতে পারবেন বলেই মনে করা সংশ্লিষ্টরা।
একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ এলাকায় রোহিঙ্গা কিনা যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে যে ভোগান্তির মুখোমুখি হতো তার দায় পুরোটাই নির্বাচন কমিশনের উপর আসতো। কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হতো। এখন সনদ নিয়ে আসলেই তাৎক্ষণিক যাচাই করে তথ্য ইসিতে আপলোড করা যাবে। এতে দ্রæত ভোটার হওযা সম্ভব।