সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

গণআন্দোলনে সরকার পতনের প্রেক্ষাপটে তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংসদ বিলুপ্ত করার কথা জানানো হয়। খবর বিডিনিউজের।
সেখানে বলা হয়, সোমবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও ‘মুক্তি’ দেওয়া হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মামলায় আটকদের মুক্তি দেওয়াও শুরু হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য সংসদ ভেঙে দিতে গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যাদের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে। মোটামুটি ওই সময়েই বঙ্গভবনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসে।
আর রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর সম্বলিত সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদের অধীন দ্বাদশ সংসদ ভেঙে দিলেন।
৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না এবং দিয়ে থাকিলে কী পরামর্শ দিয়েছেন, কোনো আদালত সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবে না।
সংসদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের বিধান থাকলেও শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে দেশ ছাড়ায় সে সুযোগ ছিল না।
সোমবার রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনই তিনি দেশ ছাড়েন। এমন পরিস্থিতিতে সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ‘বিবেচনা করতে পারার ক্ষমতা বা অন্তর্নিহিত ক্ষমতা’ প্রয়োগ করে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন।
বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। ভোট হওয়া ২৯৯ আসনের মধ্যে ২২২টিতে জয় পায় দলটি।
১১ জানুয়ারি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এ সরকারে ছিলেন শেখ হাসিনা ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী।
এরপর ১৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার সংবিধানিক ক্ষমতাবলে এ সংসদের প্রথম অধিবেশন আহŸান করেন, ৩০ জানুয়ারি বসে অধিবেশন। সবশেষ দ্বাদশ সংসদের তৃতীয় ও বাজেট অধিবেশন শেষ হয় গত ৩ জুলাই।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বলা হয়েছে, মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওবার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।
গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংকট উত্তরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ চলছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সোমবারই এ বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জানিয়েছেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে ‘অতি দ্রæত’ একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে।