শোকাবহ আগস্ট

9

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নন। একটি প্রতিষ্ঠান। একটি আদর্শ। একটি আন্দোলন। একটি বিপ্লব। একটি অভ্যুত্থান। জাতি নির্মাণের কারিগর। মহাকাব্যের অমর গাঁথা এবং একটি ইতিহাস। এই ইতিহাসের ব্যাপ্তি হাজার বছর। তাই সমকাল তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে। তিনিই বাঙালি জাতির মহাকালের মহানায়ক। ইতিহাসে অক্ষয় ধ্রুবতারার মত অম্লান গরিমায় ভাস্বর হয়ে আছেন এবং থাকবেন। বাঙালি জাতিকে পথ দেখাবেন। তার স্বপ্ন বাঙালির অস্তিত্ব। তার স্মৃতি বাঙালি জাতির আরাধ্য সমাজ ও সংস্কৃতি। যে সকল সম্ভাবনা এবং প্রতিশ্রুতি তিনি তুলে ধরেছিলেন, তাই-ই বাঙালি জাতি ও জাতির সভ্যতার ফল্গুধারা।
স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল এক ব্যতিক্রমী ও অমিত তেজোদ্বীপ্ত বজ্রকণ্ঠ। তার মোহময় কণ্ঠের যাদুতে মুগ্ধ না হওয়ার উপায় ছিল না কারও। আবার অনেকে বলেন, তার বজ্রকণ্ঠই তাকে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আলাদা করে চেনার সুযোগ করে দিয়েছে। ওই বজ্রকণ্ঠেই বঙ্গবন্ধু কখনও বাঙালি জাতির রাখালরাজা, কখনওবা হুকুমদাতা হাকিম রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। পরিণত হয়েছিলেন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির বিতর্কহীন ঐক্যের প্রতীকে। তার রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণাবলীগুলো ব্যক্তিত্ব ও গাম্ভীর্যে প্রকাশ পেত। দীর্ঘ দেহ, সফেদ পায়জামা-পাঞ্জাবি, কালো মুজিব কোট, পেছনে আঁচড়ানো কাঁচা-পাকা চুল, কালো মোটা ফ্রেমের চশমা, হাতে পাইপ। দেশ-বিদেশে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সফরকালেও তার এ বেশভুষার পরিবর্তন আনেন নি। বিলেতে যেন অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যেখানে কোট-প্যান্ট-টাই পরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে হাজির হয়েছেন, বঙ্গবন্ধু সেখানে গেছেন তার পরিচিত পোশাকেই। ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির এ মহীরূহের ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী সংরক্ষিত আছে। চিরচেনা পোশাকে ধারণকৃত আলোকচিত্রে ঠোঁটে ধরা আছে পাইপ। শুধু সেই পাইপ থেকে এডিনমুর’স তামাকের সুবাস বের হয় না।
ঈর্ষণীয় ও বিচক্ষণ সাংগঠনিক ক্ষমতার অধিকারী এই মহান নেতা লক্ষাধিক লোকের চোখের ইশারাকে ঠিকই বুঝে ফেলেছিলেন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের দিন। ওই ভাষণে তিনি বাঙালি জাতির হাকিম হিসেবে হুকুম করে বলেছিলেন, ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে দাবাইয়া রাখতে পারবা না।’ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়েই একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিপাগল সব শ্রেণীপেশার মানুষ।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার পর থেকেই আগস্টকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছে। মাসব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশেষ মর্যাদায় দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকারই দিবসটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তাই সরকারিভাবে পালিত হয়ে আসছে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কয়েকজনের বিচারের রায় ইতোমধ্যে কার্যকর করে জাতি কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। বাকিদেরও ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরে সরকার বদ্ধপরিকর। বাঙালি জাতির এই মহান নেতা অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন বাঙালির অন্তরে অন্তরে। বাংলার নিপীড়িত মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ঠিকানা বঙ্গবন্ধু এমনিতেই মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে আছেন। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামটি যতদিন থাকবে, ততদিন বাঙালির মৃত্যুঞ্জয়ী ও অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম দেশ-বিদেশে বাংলা ভাষাভাষী সকলের হৃদয়ে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।