শেখ হাসিনা-নওফেলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

13

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো ছাত্রহত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামেও মামলা দায়ের হয়েছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সহ ৩৪ জনকে আসামি করা হয়। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে দেশত্যাগী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এটি সপ্তম এবং চট্টগ্রামে প্রথম মামলা। গত শনিবার ভোর রাতে চান্দগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের হয় বলে গণমাধ্যমকে জানান চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির। মামলাটি দায়ের করেন গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বহদ্দারহাটে নিহত কলেজশিক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা মোহাম্মদ পারভেজ।
জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নগরীর বহদ্দারহাটে নিহত হন কলেজশিক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী। এ ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহতের চাচা মোহাম্মদ পারভেজ। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এসরারুল হক, ২১নং জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ, ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, নগর আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলী, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিউদ্দীন ফরহাদ, মো. দেলোয়ার, আওয়ামী লীগ কর্মী মো. জালাল প্রকাশ ড্রিল জালাল, যুবলীগ কর্মী মো. ফরিদ, এইচ এম মিঠু, নুরুল আলম প্রকাশ কালা বদা, সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মো. তাহসীন, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহব্বায়ক হোসাইন অভি, আরিফ ইফতেখার রশিদ, ওসমান গণি, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলিয়াছ বাবুল, মাইনুল ইসলাম শরীফ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. জিয়াউদ্দীন আরমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির উদ্দিন, যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজ, মো. জাফর, জাফর আলম, মনছুর আবেদীন, আবুল হাসনাত, মোহাম্মদ সুমন উদ্দীন, মো. কাইসার, মাহবুব আলম, বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজান সিকদার, যুবলীগ নেতা মো. শোয়াইব প্রমুখ।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার ভাতিজা তানভীর ছিদ্দিকী গত ১৮ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে অন্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ‘শার্টডাউন’ কর্মস‚চিতে অংশ নেয়। শিক্ষার্থীরা পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে এসে রাস্তার ওপর শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর ‘নির্দেশে ও হুকুমে’ অন্য আসামিসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০ থেকে ৫০ জন আসামি চাপাতি, কিরিচ ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ওয়াপদা অফিসের দিক থেকে এসে তানভীর ছিদ্দিকীসহ অন্য ছাত্রছাত্রীদের দিকে ইট-পাথর নিক্ষেপ ও এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এতে তানভীরসহ আন্দোলনকারী অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তানভীরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এজাহারে তিনি আরো উল্লেখ করেন, একই ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ও মুদির দোকানের কর্মচারী সাইমন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নগরীর চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, গত ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হওয়া গুলিবর্ষণের ঘটনায় তানভীর নামে এক কলেজছাত্র নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের চাচা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীসহ ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের ইতি টানতে হয়েছে। শেখ হাসিনা পালানোর ৮ দিন পর গত ১৩ আগস্ট ঢাকার মোহাম্মাদপুরে পুলিশের গুলিতে এক দোকান মালিক নিহত হওয়ার ঘটনায় তাকে প্রধান আসামি করে প্রথম মামলা দায়ের করা হয়। পরের দিন অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা’র দায়ের করা এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি ও র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ এবং র‌্যাবের অজ্ঞাতপরিচয় ২৫ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
একইদিন ঢাকায় ছাত্র হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম ছাত্রহত্যা মামলা। ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজন নিহতের ঘটনায় তার ভাই মো. রাজীব বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এর পরে ঢাকা এবং বগুড়ায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো চারটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সর্বশেষ ছাত্রহত্যায় চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।