শেখ হাসিনার দেশত্যাগ কী বার্তা দেয়?

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

বাংলাদেশে কোটা সংস্কারকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলনের সূত্রপাত, তার একটি পরিণতি দেখা গেলো আজ (সোমবার) শেখ হাসিনার দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে। সরকারকে শুরু থেকেই এই আন্দোলন এবং আন্দোলনকারীদের অনেকটা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতা ছিল, এমনকি এক সপ্তাহের ব্যবধানে শত-শত মৃত্যুর পরও পুরো বিষয়টিকে শুধুমাত্র বিরোধীদের ষড়যন্ত্র, এমনকি জঙ্গি হামলা হিসেবে বর্ণনা করে এসেছে সরকার। খবর বিবিসির।
তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পনের বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়ার স্লোগান, দেয়ালে-দেয়ালে ‘স্বৈরাচার’ লেখা কোনকিছুই যেন আওয়ামী লীগকে স্পর্শ করেনি।
যার বিরুদ্ধে ফেসবুকে সামান্য সমালোচনার জন্যও মানুষকে জেলে যেতে হয়েছে, হয়রানির শিকার হতে হয়েছে- তার বিরুদ্ধে রাস্তায় জ্বালাময়ী স্লোগান, সামাজিক মাধ্যমে লাখ-লাখ মানুষের ঠাট্টা-বিদ্রুপ যে বার্তা দিয়েছে সেটিতে তারা অবজ্ঞা করেছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো এই রাজনৈতিক দলটি আক্ষরিক অর্থেই ‘দেয়ালের লিখন’ পড়তে পারেনি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ১৯৯০ এর গণঅভ্যূত্থানের ৩৪ বছর পর আরেকটি গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হলো, তবে সেটি হলো দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রক্তপাতের মধ্য দিয়ে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই যেমন স্পষ্ট ছিল যে এই দাবি শেষপর্যন্ত সরকারকে মেনে নিতে হবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের এক দফা ঘোষণার পরও পরিষ্কার ছিল সাধারণ মানুষের এত ক্ষোভ এবং ঘৃণা নিয়ে কোন সরকার টিকতে পারে না।
এই রক্তপাত হয়তো ঠেকানো যেতো, কিন্তু সেই চেষ্টা আন্তরিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি।
সর্বময় ক্ষমতা এখানে শুধু নীতিভ্রষ্টই করেনি, বাস্তবতা থেকে অন্ধ করে দিয়েছে।
ব্যাপক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, যেকোনো সমালোচককে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা- এসব কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেটি দেখতে না পারাটা শুধুমাত্র দাম্ভিকতারই ইঙ্গিত দেয়।
কোন রাষ্ট্রপ্রধানকে তখনি ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করতে হয়, যখন তার সেই ক্ষমতা শুধু ক্ষমতাতেই সীমাবদ্ধ থাকে, এর পেছনে জনসমর্থন থাকে না। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বে সেই বার্তাটাই দিলেন।