শৃঙ্খলা ফিরানো ও দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ

5

রতন কুমার তুরী

একটি রক্তক্ষয়ী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে দেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো। এসরকারের সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছে সফল আন্দোলনকারী ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে দু’জন সমন্বয়কে সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা। এতে করে বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার একচেটিয়া কিছু করতে চাইলেও তা হয়তো পারবেনা। তবে এ মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিশৃঙ্খলাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা যাতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে নজর রাখা। অতীতে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়গুলোতে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারে দ্রব্য সমূহের মূল্য বাড়াতে দেখেছি। এবার যাতে সেধরনের কিছু না হয় এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর থাকতে হবে। একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, কোনো একটা দলীয় সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন মারামারি, কাটাকাটি, হামলা, ডাকাতি, কোথাও কোথাও সংখ্যালঘুদের মন্দির ভাঙা, ডাকাতি করা এটা বেশ চিন্তার বিষয়। কারণ এতে করে জনগণ জননিরাপত্তা বিষয়ে বেশ অনিশ্চয়তায় ভোগে।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে জন আস্থা ফেরাতে হবে। একটা বিষয় সবাইকে মনে রাখতে হবে সরকারি বেসরকারি স্থাপনা ধ্বংস করা মানেই দেশের সম্পদ বিনষ্ট করা এবং তাদের পাড়া পরশিদের অত্যাচার করা মানেই সামাজিক সম্প্রীতি নস্যাৎ করা এতে সমাজে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে এবং এটা চলমান থাকলে কারো জন্য মঙ্গল হবেনা। তাই এটা নিয়ে আমাদের সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।
একথা ঠিক যে, একটা সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর বেশকিছু মানুষের ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে তারসাথে যুক্ত হয়েছে ছাত্রদের আন্দোলন। সে সরকারের পতনের পর চারিদিকে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার এটা আমরা এর আগেও দেখেছি তাইবলে হত্যা, লুঠতরাজ, সংখ্যালঘুদের মন্দিরে হামলা এটা কোনো বিবেকবান মানুষেরই কাম্য নয়।
ইতিমধ্যে দেশের অসংখ্য মানুষ এসমস্ত নৈরাজ্যের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অনেকে আবার সনাতনীদের মন্দিরও পাহাড়া দিচ্ছে তবুও নৈরাজ্যকারীরা থামছেনা এদের অচিরেই থামাতে হবে, বন্ধ করতে হবে এদের ধ্বংসলীলা।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কঠোর থেকে কঠোরতর হতে হবে। কারো চেহারা না দেখেই একশনে যেতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোরও বোঝা উচিত এ মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সঠিকভাবে কাজ করতে না দিলে তাদের দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে দীর্ঘদিন সময় লেগে যাবে এবং তারা ক্ষমতায়ও যেতে পারবেনা। তাই সব রাজনৈতিক দলের উচিত বর্তমান সরকারকে সহায়তা করা। রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সদস্য যদি উশৃংখল অচরণ করে তাদের সাবধান করে দেয়া তাদের দায়িত্ব। তারপরও যদি তারা তাদের কথা না শোনে তাহলে তাদের দল থেকে উশৃংখল সদস্যদের বহিষ্কার করা উচিত। এ মুহূর্তে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস নিতান্তই জরুরি কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে স্বল্পকালীন একটা সরকার। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে একটা নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেয়া। ফলে সকল রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষ যদি তাদের সহায়তা না করে তাহলে দেশের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবেনা। আমরা দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা চাইনা। এভাবে হানাহানি করে নিজেদের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হচ্ছেনা। প্রকৃতপক্ষে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রাখতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে সমাজের সকলস্তরে বৈষম্য কমলেই তবে বৈষম্য কমার বিষয়টি কাজে আসবে।
আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে যে দুর্নীতি, ঘুষ, চাঁদাবাজি, রাজনীতি করে টাকা কামানো ব্যবস্থা রয়ে গেছে তা ভাঙার সময় এখনই। সবাই একত্রিত হয়ে এসব ব্যবস্থাকে রুখে দিতে হবে। মুলতঃ আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দুর্নীতি এবং ঘুষ মারাত্মক একটি বাজে ব্যবস্থা।
এ ব্যবস্থায় দেশের অনেকেই বিনা পরিশ্রমে কালো টাকার মালিক বনে যায়। আর গরিবরা গরিবই থেকে যায়। এ ব্যবস্থাটি যে কোনো মূল্যে মূলউৎপাটন করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি দেশের ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে। যেখানে ঘুষ দুর্নীতি সেখানেই তাদের প্রতিবাদ করতে হবে। তারা প্রতিবাদ করলেই সাধারণ মানুষ জেগে ওঠবে। আর এতে করে এসব দুর্নীতিবাজ আর ঘুষ খোররা আর তাদের অবৈধ কাজ করতে পারবেনা। মূলতঃ দেশে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হয়েছে সেহেতু তাদের দ্বারাই এসমস্ত অনৈতিক ব্যবস্থা সহজে ভাঙা সহজ হবে। আমরা প্রত্যাশা করবো ছাত্র এবং অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এদেশের একটি আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ উপহার দেবে। আর এদেশের ছাত্র জনতার চাওয়ার প্রতিও সম্মান দেখাবে।
লেখক: কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক