শিক্ষার্থীদের ‘মনিটরিংয়ের চাপে’ পণ্যের দাম নিম্নমুখি

7

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর বেশ কয়েকটি বাজারে গত মাসের তুলনায় এ মাসে কমেছে অধিকাংশ সবজির দাম। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়াসহ নানা কারণে কাঁচা শাক-সবজির দাম কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার নগরীর চকবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজার কাঁচা বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
চকবাজারের সবজি বিক্রেতা আলী হোসনে জানান, শিক্ষার্থীরা এখন নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ে এসে দরদাম জানতে চায়। এছাড়া বেশি দামে যেন সবজি বিক্রি করা না হয় সে বিষয়ে তাগাদা দিয়ে যায়। পাশাপাশি এখন রিয়াজউদ্দিন বাজার বা চকবাজারের কোথাও চাঁদা দিতে হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বাজারে সবজির দাম আগের তুলনায় কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত মাসের তুলনায় বাজারে সব ধরনের সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে ২-৩ আইটেমের সবজির বর্তমানে মৌসুম না হওয়ায় সেগুলোর দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছুটির দিনের বাজারে প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, পেঁপে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা কেজি ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৬০ টাকা, কাকরোল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া যেসব সবজির দাম কিছুটা বাড়তি সেই তালিকায় আছে করলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মূলা ৮০ টাকা, কচুরমুখি প্রতি কেজি ৭০, টমেটো ১৫০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা এবং কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আবুল কালাম বলেন,গত মাসের তুলনায় বাজারে সবজির দাম তুলনামূলক কমেছে। কিছুদিন আগেও বাজারে কোনো সবজি ৮০ টাকার নিচে ছিল না, এখন সেগুলো কমে ৩০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে এসেছে। তবে এখনও কিছু কিছু সবজির দাম ৮০ টাকার ঘরে আছে। আর যে সবজির এখন মৌসুম না সেগুলো ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে বলা যায় আগের তুলনায় বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে।
আসলেই কী সবজির দাম কমেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়াজউদ্দিন বাজারের সবজি বিক্রেতা আহসান হাবিব বলেন, বাজারে সবজির দাম আগের তুলনায় কমেছে এ কথা ঠিক। এর মূল কারণ হলো পথে পথে যে সবজি পরিবহনের চাঁদাবাজি ছিল, কারণ বাজারেও বিভিন্ন জায়গায় যে টাকা দিতে হতো সেগুলো এখন দিতে হচ্ছে না। যে কারণে এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে সবজির বাজারে। এজন্যই সবজি বিক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারছেন। এছাড়া এলাকাভিত্তিক স্থানীয় বাজারগুলোতে শিক্ষার্থীরা এসে বাজার মনিটরিং করছে। সবমিলিয়ে আগের তুলনায় সবজির দাম বাজারে কমেছে।
বহদ্দারহাট এলাকার বহদ্দার বাড়ি পুকুর পাড়ে ভ্যান গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করেন আনিছুর রহমান। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, আগে রাস্তার পাশে ভ্যান গাড়ি দিয়ে সবজি বিক্রি করতে হলে প্রতিদিন লাইন ম্যান ও থানা পুলিশের গাড়িকে টাকা দিতে হতো এলাকা ভেদে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে লাইনম্যানকে এই টাকা দিতে হচ্ছে না। এছাড়া যখন পাইকারিতে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও উত্তর চট্টগ্রামের বাজার থেকে মাল কিনে নিয়ে আসা হয় তখন ওইসব এলাকার বাজার থেকে শুরু করে গাড়িতে করে রাস্তা দিয়ে আসার সময়ও বিভিন্ন জায়গায় চাঁদার টাকা দিতে হতো, এগুলো এখন দিতে হচ্ছে না। যে কারণে আগের তুলনায় কম দামে সবজি বিক্রি করা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এখন প্রতিটি এলাকায় বাজারে সবজির দোকানে শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝে এসে মনিটরিং করছে। এসব কারণে বাজারে আগের তুলনায় সবজির দাম কমেছে। তবে কিছু কিছু সবজির এখন মৌসুম না, সেসব সবজিগুলো বাজারে সরবরাহ একেবারেই কম। যে কারণে নির্দিষ্ট কিছু সবজির দাম বাড়তি চাচ্ছে।
অপরদিকে এখনও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন। গতকাল পেঁয়াজ ১১০ ও রসুন ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আবার কেজিতে ২০ টাকা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। তবে ২০ টাকা দাম বেড়েছে সোনালি মুরগির। গতকাল শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা, সোনালি ৩১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া গরুর মাংস মানভেদে ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। নগরীর বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে রুই ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা, কাতলা ৩৪০ থেকে ৩৮০ টাকা, মৃগেল ২২০ থেকে ২৬০ টাকা, আকারভেদে পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, স্যালমন ফিশ ৪৫০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা জাত ও আকারভেদে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ইলিশ মাছ আকারভেদে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পোয়া মাছ ২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, সুরমা ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, টেংরা ৩৭০ টাকা, নারকেলি মাছ ২৫০ টাকা এবং কৈ মাছ ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মাছ বিক্রেতা মাসুদুর রহমান বলেন, সমুদ্র থেকে পর্যাপ্ত মাছ আহরণ করা যাচ্ছে না এবং তাছাড়াও লেক, ঝিলের মাছও পর্যাপ্ত আসছে না বিধায় মাছের দাম কিছুটা বাড়তি।