শিক্ষকদের পেনশন স্কিম আগামী বছর চালু হবে : কাদের

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পেনশন স্কিম ২০২৪ নাকি ২০২৫ এ নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তা দূর হয়েছে। শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হবে আগামী বছরের ১ জুলাইয়ে। গতকাল শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় তিনি তথ্য জানান। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসিদে ভাষণে সবার জন্য পেনশন স্কিমের যে ডেটটা বলেছেন, শিক্ষকদের ব্যাপারে যে তথ্যটা গেছে এটা মিসটেক। এটাই সত্যি, সবাইকে পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার তারিখ হচ্ছে ২০২৫ সালের ১ জুলাই। এটা তাদেরকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া, শিক্ষকদের দাবি সুপার গ্রেড ও স্বতন্ত্র উচ্চগত স্কেল প্রদানের বিষয়টি আলোচনা হবে। আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকদের মর্যাদা, আর্থিক সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি আলোচনা করে তারা লিখিত যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে; প্রধানমন্ত্রী কাছে আমরা উত্থাপন করব।
আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে উল্লেখ করে কাদের বলেন, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আশা করি, সব সমস্যার অচিরেই সমাধান হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেছি।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার চাপা, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
বৈঠক শেষে শিক্ষক নেতারা বলেন, আলোচনা সন্তোষজনক হয়েছে। আমরা আমাদের দাবির কথা বলেছি। আমরা ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক করে আমাদের অবস্থান জানাব।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি আকতারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর নিজামুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ১৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই : কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা তুলে দিয়ে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার পর সেই পরিপত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে, অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনকারীরা মাঠে নেমেছিল। পরে তারা কোটা সংস্কারের দাবি সামনে নিয়ে আসে।
দাবি আদায়ে গত সপ্তাহে মঙ্গলবার বাদ দিয়ে প্রতি দিনই বাংলা বøকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায় মানুষের চলাচলে ভোগান্তি চরমে উঠে।
কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করা হাই কোর্টের রায়ের বাস্তবায়নযোগ্য অংশ প্রকাশ হয়, যাতে বলা আছে, সব কোটাই থাকতে হবে। তবে সরকার চাইলে হার পরিবর্তন করতে পারবে। আর কোটায় যোগ্য প্রার্থী না থাকলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে পারবে।
তবে আন্দোলনকারীরা চার দফা দাবি থেকে সরে এসে এখন এক দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের এক দফা হলো- ‘সকল গ্রেডে সকল প্রকার অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।
কাদের বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি ও অনেক বক্তব্য আমাদের সংবিধানের, সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিরোধী। সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনা সরকারি আলোকেই হবে।
তিনি বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে, জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অথচ গত কয়েক বছরে সরকারি চাকরিতে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি হতাশাজনকভাবে কমেছে।
কোটা না থাকায় পুলিশে মাত্র চারজন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছে, ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছে দুজন মাত্র। ৫০টি জেলায় নারীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের সুযোগ পায়নি। ২৩টি জেলায় একজনও পুলিশে চাকরি পায়নি। সংবিধানের উল্লেখিত বিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে সরকারি চাকরিসহ সকল ক্ষেত্র সবাই যেন সমানভাগে সুযোগ পায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, সেজন্যই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশে কোটা সবচেয়ে কম দাবি করে কাদের বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকায় নিয়োগ প্রায় ৭০ শতাংশের মত। ৩৩, ৩৪, ৩৫ এই তিনটি বিসিএসে ৭২ শতাংশ প্রার্থীকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যেখানে কোটায় নিয়োগ পেয়েছে ২৮ শতাংশ। শূন্য পদগুলোতে মেধাতালিকা থেকে নেয়া হয়েছে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে যেখানে মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হচ্ছে, সেখানে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই কোটার ভিত্তিতে সবচেয়ে কম নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে কোটা ভারতে ৬০%, পাকিস্তানে ৯২.৫ %, নেপালে ৪৫%, শ্রীলংকায় ৫০%। এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় আমাদের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় কোটার প্রয়োজন রয়েছে।”
কোটাবিরোধিতায় অশুভ শক্তি নেমেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে একটি কুচক্রি মহল রাষ্ট্রকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, ২০১৮ সালে যখন কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়, তখন এই রাজনৈতিকভাবে পরাজিত অশুভ শক্তি কোটার উপর ভর করেছিল এবং সড়কের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। তখন এই অশুভ শক্তির হাতে আমাদের ধানমন্ডি পার্টি অফিসও আক্রন্ত হয়েছে।