শত মামলার আসামি আসলাম চৌধুরী ৯ বছর ধরে কারাগারে

23

জাহেদুল আনোয়ার চৌধুরী, সীতাকুন্ড

সরকার থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। এতে সারাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীরা উল্লসিত। তবে সীতাকুন্ড এলাকার জাতীয়তাবাদী পরিবারে এখনো সেই উল্লাস দেখা যায়নি। কারণ তাদের রাজনীতির প্রিয় নেতা এখনো কারান্তরীণ। এ মুহুর্তে তাদের দাবি, প্রিয় নেতা আসলাম চৌধুরীর মুক্তি।
২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে আসলাম চৌধুরীকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে একে একে একশ’র অধিক রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দায়ের হয়। ঐসময় থেকে তিনি এখনো জেলহাজতে রয়েছেন।
এই নেতার বাড়ি সীতাকুন্ড থানার ফৌজদারহাটের তুলাতলী গ্রামে হলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় সংগঠিত ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়। এই দীর্ঘ সময়ে আসলাম চৌধুরীর একমাত্র কন্যা মেহরিন আনহার উজমা তার বাবার মুক্তির জন্য অনেক চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হয়ে পরে মাকে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। দীর্ঘ এই সময়ে তার পরিবারে শুধু আসলাম চৌধুরী নন, নির্যাতিত হয়েছেন তার ভাইয়েরাও। দফায় দফায় এই নেতার সোনালী ও রাইজিং সিএনজি ফিলিং স্টেশন, শিপ ব্রেকার্সসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছিল। তার বড় ভাই ইসহাক কাদের চৌধুরী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সভাপতি এবং সীতাকুন্ড উপজেলা বিএনপির প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্ব পালনের সময় তিনিও রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়ে কারাভোগ করেছিলেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়বাদী দল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে তিনি নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু সরকারি দল ও প্রশাসন এক হয়ে তাকে হয়রানি করায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর ২০২২ সালে ইসহাক কাদের চৌধুরী মৃত্যুবরণ করলেও সরকার তার ভাইকে দেখার জন্য প্যারালো মুক্তি পর্যন্ত দেয়নি। একইভাবে আরেক বড় ভাই সাবেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মহিম কাদের চৌধুরীর মৃত্যুতে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও আরেক ভাই আমজাদ চৌধুরীকে জেল জুলুমের শিকার হতে হয়।
সীতাকুন্ড পৌরসভা যুবদলের সদস্য সচিব মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘এই সরকারের ১৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে নির্যাতিত ব্যক্তি ও বিএনপি নেতার নাম আসলাম চৌধুরী এফসিএ। যিনি দলমত নির্বিশেষে সকলেরই প্রিয়। ছাত্রদের মাধ্যমে আমরা বিজয়ী হয়েছি। তবে আমাদের মনে শান্তি আসবে আমাদের নেতা আসলাম চৌধুরীর মুক্তিতে।’
সীতাকুন্ড উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও উত্তর জেলা যুবদলের সদস্য মো. নুরু নবী সালাম বলেন, ‘আমরা আসলাম চৌধুরীর বিশ্বস্ত নেতাকর্মী। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জেল জুলুমসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমাদের নেতা আসলাম চৌধুরীর মুক্তি পেলেই আমারা পূর্ণ বিজয় লাভ করব।’
সীতাকুন্ড উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহŸায়ক জহুরুল আলম জহুর বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী সরকার পুরো দেশটাকে কারাগার বানিয়ে রেখেছিল। ছাত্রদের আন্দোলনে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আজ দেশবাসী মন খুলে নিশ্বাস নিচ্ছে। দেশব্যাপি বিজয় উল্লাস করছে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা মন খুলে উল্লাস করতে পারছে না। কারণ আমাদের নেতা আসলাম চৌধুরী এখনো জেলখানায় বন্দী।’
উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘আজকে শিক্ষার্থীদের কারণে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ দেশের সকলে সেই স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে আমাদের নেতা অধ্যাপক লায়ন আসলাম চৌধুরী কারাগারে থাকায় আমাদের মধ্যে এখনো পুরোপুরি সেই বিজয়ের আনন্দ নেই। তাই অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন আসলাম চৌধুরী। এরপর কিছুদিন কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৯৬ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে এফসিএ পাস করেন। পরে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কিছুদিন চাকরিও করেছিলেন। ২০০২ সালে জিয়া পরিষদের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পরে উত্তর জেলা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। জায়গা করে নেন উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদকের পদে। পাশাপাশি জায়গা করে নেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে। ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিলে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতায় উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মনোনীত হন। পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন।