লোহাগাড়ায় নানা কারণে শঙ্কিত প্রার্থীরা

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে উপজেলাটির আশপাশে নির্বাচন না হওয়ায় সুবাধে এ উপজেলায় বেড়েছে বহিরাগতদের আনাগোনা। এতে সংকিত নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা। গতকাল সোমবার নির্বাচনী এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় এবং প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
আবার স্থানীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র দখল, নৈরাজ্যের মত ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা করেছেন একাধিক প্রার্থী। তাদের মতে- ‘আমরা চাই লোহাগাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু একটা চক্র চাইছে, প্রশাসনকে ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলে কেন্দ্র দখল করে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে। আমরা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ আকারে জানিয়েছি। তারা তৎপর আছে জানিয়েছেন।’
এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও সন্ত্রাসমুক্ত করার জন্য চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর, র‌্যাব সদর দপ্তর ও রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন উপজেলার ঘোড়ার প্রতীকের প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সরকার ও প্রশাসনের প্রতিশ্রুত প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রত্যাশায় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলেও ইতিমধ্যে প্রতিদ্ব›দ্বী আনারস প্রতীকের প্রার্থী খোরশেদ আলম চৌধুরী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের (লোহাগাড়া জমিদার পাড়ার বেলায়েত হোসেনের ছেলে নওশাদ আলম ও মোরশেদ আলম, পদুয়ার মৃত ছালে আহমদের ছেলে জহির উদ্দীন, চুনতির নারিশ্চা মৃত আলতাপের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন মিনহাজ, চুনতির পানত্রিশা নুর আহমদের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত) মাঠে নামিয়ে সাধারণ ভোটারদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এসব সন্ত্রাসীরা বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুলিশের দেয়া মামলা, প্রকাশ্য দিবালোকে খেলার মাঠে নজরুল হত্যা মামলাসহ নানা মামলার আসামী। লোহাগাড়ার প্রতিটি নির্বাচনে এই সন্ত্রাসী চক্রের কারণে নির্বাচন উৎসবমুখর হওয়ার পরিবর্তে ভোটারবিহীন নির্বাচনে পরিণত হয়। ইতোমধ্যে বিএনপি, জামায়াতের ভোট বর্জনের মাঝেও উক্ত সন্ত্রাসীরা সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না আসাসহ প্রতিপক্ষের সমর্থকদের হুমকী-ধমকির মাধ্যমে প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিকল্প থাকবে না।’
প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রধান সমন্বয়ক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘লোহাগাড়ার জনগণ ভোট দেয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। তারা সকলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করছে। কিন্তু এখানে একটা পক্ষ ভোটকেন্দ্র দখল থেকে শুরু করে নৈরাজ্য চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাই স্থানীয় সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি সাতকানিয়া, বান্দরবান ও চকরিয়া থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করছে। তাদের সমর্থকরা এমনও বলছে- ‘আমরা প্রশাসনকে কিনে ফেলেছি। জনগণে ভোট দিলেও অসুবিধা নেই। ভোটকেন্দ্রে ঝামেলা করে উপজেলা থেকে আমরা জয়ী হতে পারবো’ এমন কথা তাদের মুখে বেমানান। এসব আজাইরা কথাবার্তায় মানুষ আর ভয় পায় না।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইনামুল হাসান বলেন, ‘এরই মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি মানতেও প্রার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা বা পার্বত্য এলাকা থেকে যেন মানুষ আসতে না পারে, সেদিকে নজর রাখছি।’
প্রসঙ্গত, লোহাগাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লাখ ২৩ হাজার ৬২৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার ১০৮ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪ হাজার ৫১৮ জন। প্রার্থীদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী ‘আনারস’ প্রতীক, চুনতি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘ঘোড়া’ প্রতীক, এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবদুল মাবুদ ‘মোটর সাইকেল’ প্রতীক পেয়ে নির্বাচন করছেন। পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফরহাদুল ইসলাম ‘তালা’ প্রতীক, এমএস মামুন ‘চশমা’ প্রতীক এবং জমিল উদ্দিন টিউবওয়েল প্রতীক। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেসমিন আকতার ‘কলস’ প্রতীক এবং শাহিন আকতার সানা পেয়েছেন ‘ফুটবল’ প্রতীক পেয়ে নির্বাচন করছেন।