লালানগর ইউপির উপনির্বাচনে জোর প্রচারণা প্রার্থীদের

7

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

উত্তর রাঙ্গুনিয়ার মূল সড়কের দুই পাশে লালা নগর ইউনিয়নের অবস্থান। শিক্ষায় ব্যাপত অগ্রগতি, কৃষি, ব্যবসায় রাঙ্গুনিয়ার অর্থনীতিতে অবদান রাখছে লালা নগর ইউনিয়ন। মাদ্রাসা শিক্ষার জন্যও বেশ বিখ্যাত এই ইউনিয়নটি। একই স্থানে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আছে উত্তর রাঙ্গুনিয়া কলেজও। শিক্ষার পরিবেশও অনেক আধুনিক। স্বাভাবিকভাবেই এখানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে বেশ সচেতন স্থানীয় ভোটাররা।
এই ইউনিয়নে উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামি ২৭ জুলাই। উপনির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতীক বরাদ্দের পর জোর প্রচারণায় ব্যস্ত আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই প্রার্থী জসিম উদ্দিন তালুকদার ও সিরাজুল করিম বিপ্লব। উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষযক সম্পাদক জসিম উদ্দিন তালুকদার ঘোড়া প্রতীক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল করিম বিপ্লব আনারস প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই তাদের সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দোরগোড়ায় ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে অন্য দুই প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মীর তৌহিদুল ইসলাম কাঞ্চন (মোটরসাইকেল) ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. হাসান কে (টেলিফোন) প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। সব প্রার্থী কাছে জনগণের দাবি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনে সংঘাত কিংবা সন্ত্রাস বা বল প্রয়োগ হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভোটারদের। গত রবিবার বিকেলে লালানগর ইউনিয়নে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি, চায়ের দোকান ও হাটবাজার। গানের ছন্দে মাইকে চলছে ঘোড়া-আনারস প্রতীকে দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা। প্রার্থীরা কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। তারা ভোটারদের কাছে গিয়ে ইউনিয়নে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন। সবার আশা ভোট যুদ্ধে জিততেই হবে।
এদিন জসিম উদ্দিন তালুকদার কুলাল পাড়া, ডালাইকুল ও রাজ্জাক শিকদার বাড়িতে স্থানীয়দের নিয়ে পথসভার আয়োজন করেন। অন্যদিকে সিরাজুল করিম বিপ্লব আকবর শিকদার পাড়া, কুলাল পাড়া ও আলমশাহ পাড়া এলাকায় পথসভা করেন। তবে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেয়ার ব্যাপারে কোনো প্রার্থীকেই নিরাশ করছেন না।
এদিকে আওয়ামী লীগ ঘরানার আরেক প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মীর তৌহিদুল ইসলাম কাঞ্চন ও বিএনপি ঘরানার একমাত্র প্রার্থী সাবেক ইউপি সদস্য মো. হাসানকে দলীয় নেতাকর্মী বা সমর্থক ছাড়াই ভোটারদের দুয়ারে ঘুরতে দেখা যায়। তারা ধীরে ধীরে তাদের ভোট তৎপরতা বাড়ার কথা জানালেও এই দুই প্রার্থীকে নিয়ে ধোয়াশায় রয়েছেন ভোটাররা।
চায়ের দোকানে কথা হয় কৃষক মো. করিমের সাথে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর এলাকায় ভোটের আমেজ ফিরেছে। দোকান কিংবা হাটবাজার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই উপনির্বাচন। প্রার্থীরা দোকানে এসে ভোট প্রার্থনা করছেন। আমরা যোগ্য প্রার্থী খুঁজে ভোট দেব’। নির্বাচনে কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে প্রার্থীদেরই।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, লালানগরে নিজস্ব ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নেই। এতে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়া ইউনিয়নের বান্দাজার পাড়া সড়কটিও হয়নি। সংষ্কার না করায় মানুষ যানচলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ইউনিয়নের ছোট-বড় বিভিন্ন সড়কেরও বেহাল অবস্থা। ইউনিয়নের আয়ের জন্য কোনো বাজার কিংবা উৎস্য নেই।
স্থানীয় ভোটার ব্যবসায়ী মো. আনছারুল হক জানান, ‘আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী তাদের সমর্থকদের নিয়ে প্রায় এলাকা ঘুরে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তারা অনেক প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। তবে অনেকে চেয়ারম্যান হয়ে প্রতিশ্রæতির কথা ভুলে যান। আশা করি এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের যোগ্য প্রার্থীকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করবেন’।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. ওবায়েদুর রহমান জানান, লালানগর ইউনিয়নে উপনির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ১০৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ১৮৭ জন এবং নারী ভোটার ৬ হাজার ৯২০ জন। ২৭ জুলাই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে মোট ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ চন্দ্রন কুমার চক্রবর্তী জানান, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুশৃঙ্খল নির্বাচন করতে লালা নগর ইউনিয়নে আমরা সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আশা করি সুন্দর একটি নির্বাচন হবে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লালানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন রফিকুল ইসলাম তালুকদার। ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ মার্চ তার মৃত্যু হলে ১৩ মার্চ পদটি শূন্য হয়ে যায়। তবে কে হবেন লালানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সে হিসাব মেলাতে অপেক্ষা করতে হবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত।