রোহিঙ্গা সংকট ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর হতে হবে

14

মাহমুদুল হক আনসারী

রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মায়ানমারের জাতিগত সংঘাত বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। দিন যত বাড়ছে এই সংকট প্রকট হচ্ছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে পার্বত্য চট্টগ্রাম অস্থির হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা যাবতিয় অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাদের বেপরোয়া চলাচল নিয়ন্ত্রন করতে হবে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। সাত বছর ধরে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু এখানে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে নানা ধরনের উগ্র ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জন্ম নিয়েছে। স্বাভাবিক আয়-রোজগারের সুযোগ কম থাকায় তারা মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডে যুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে প্রায়ই খুনখারাবির ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বাড়ছে। আর সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির সংলগ্ন দুর্গম লাল পাহাড়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনি। এ সময় আরসার বাংলাদেশ কমান্ডার মো. শাহানুর ওরফে মাস্টার সলিম (৩৮) ও তাঁর সহযোগী মো. রিয়াজকে (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট আরো তীব্র হয়েছে। তথ্য মতে জানা যায়, কেবল চলতি বছরের ১৪ মে পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ মাসে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আরসার হাতে ১৬ জন খুন হয়েছে। আরসা ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। জানা যায়, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন তাঁর দলবল নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে কিছু সন্ত্রাসী ধরাও পড়েছে এবং বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এই নবী হোসেন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ) নামের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে তাঁরা ব্যাপকভাবে জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, খুনসহ আরো অনেক অপরাধের অভিযোগ আছে। প্রায় দুই বছর আগে নবী হোসেনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। পার্বত্যাঞ্চলের দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে আরো কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। কিছুদিন আগে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি গোষ্ঠী বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলা সদরে থাকা তিনটি ব্যাংকে হামলা ও লুটতরাজ করে।
পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে। তাদের সঙ্গে দেশের কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরও সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা যায়। তাই নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কক্সবাজারসহ পুরো পার্বত্যাঞ্চলে অশান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্থানিয় জনগণ মনে করে , যত দ্রæত সম্ভব তাদেরকে ফেরত পাঠাতে জোর কূটনৈতিক উদ্যোগ চাই। তাদের প্রত্যাবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরগুলোতে কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চোরাচালান বন্ধে ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে। নারী ও শিশুপাচার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনিকে আরো কঠোর হতে হবে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। এই সকল ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন।
লেখক : সংগঠক,গবেষক,কলামিস্ট