রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইসির টেনশন বেড়েছে

10

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রামে লাকী আক্তার নামে এক রোহিঙ্গা নারী আটকের মধ্যদিয়ে বড় ধরনের ভোটার জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার মতো এমন জালিয়াতিতে যুক্ত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের কর্মচারীরাও। নিজেদের সার্ভার ও ল্যাপটপ ব্যবহার করেই রোহিঙ্গাদের ভোটার করার তথ্য পেয়ে নড়েচড়ে বসে ইসি। যে কারণে ভোটার হালনাগাদে প্রতিবারই সতর্ক অবস্থানে থাকে নির্বাচন কমিশন।
এরপরও জনপ্রতিনিধিদের জন্মসনদ নিয়ে অনেক রোহিঙ্গা ফাঁক-ফোকরে ভোটার হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কয়েকটি স্থানে এমন ঘটনা ধরা পড়ার পর টেনশন বেড়েছে ইসির। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকানোর উপায় খুঁজতে মাঠে নেমেছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে বড় ধরনের ভোটার জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও ২০২৩ সালে ফটিকছড়িতে রোহিঙ্গা পরিবারের এক সদস্য ভোটার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ পরিবারের পাঁচজন সদস্য অতীতে ভোটার হলেও সর্বশেষ ২০২৩ সালে ইউছুফ নামে একজন ভোটার হওয়ার তথ্য জানাজানি হয়েছে। এমন অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই কথা বলতে রাজি হননি নির্বাচন কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. এনামুল হক পূর্বদেশকে বলেন, ‘ফটিকছড়িতে রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার বিষয়টি এখনও আমি অফিসিয়ালি জানি না। অফিসিয়ালি জানলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরোপুরি জানার আগে বিষয়টি নিয়ে কি করা যায় বলা কঠিন।’ ফটিকছড়ি নির্বাচন কর্মকর্তা অরুন উদয় ত্রিপুরা পূর্বদেশকে বলেন, ‘এ পরিবারের পাঁচজন ভোটার হয়েছেন। এরা ২০০৫ সালে, ২০০৭ সালে ও ২০২৩ সালে ভোটার হয়েছেন। তাদের নামে পাসপোর্ট আছে, জন্মসনদ আছে, বাড়ির হোল্ডিং নম্বর আছে। এরপরও একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে এসি ল্যান্ডকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের পর বিস্তারিত বলতে পারবো।’
সারাদেশে কতজন রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে, তা তদন্ত করে তালিকা জমা দিতে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার মধ্যে ফটিকছড়ির ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার সচিব, কক্সবাজারের ডিসিসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটির ৮টি, চট্টগ্রামের ৯টি, বান্দরবানের ৭টি ও কক্সবাজারের ৮টিসহ মোট ৩২টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হয়। উপজেলাগুলো হলো কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবান সদর, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি। রাঙামাটি সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, বাঁশখালী, কর্ণফুলী ও রাঙ্গুনিয়া।
প্রতিটি বিশেষ কমিটিতে ১৪ জন করে সদস্য রাখা হয়েছে। তারা হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রতিনিধি, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতিনিধি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে), হেড ম্যান (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে), কারবারি (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে) ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
মূলত রোহিঙ্গারা সমতলে ছড়িয়ে পড়ায় এসব এলাকা ঘিরে পৃথক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে ইসি। উপজেলা/থানার বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, ভোটার নিবন্ধনের আবেদন তদন্ত এবং যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করতেই বিশেষ এলাকায় গঠন করা হয় বিশেষ কমিটি। এ কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই ভোটার নিবন্ধন করা হয়।
গত ১১ জুন চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে ‘বিশেষ এলাকায় ভোটার নিবন্ধনের চ্যালেঞ্জসমূহ নির্ধারণ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকানো নিয়ে আলোচনা হয়। ইসি সচিবের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ সভায় রোহিঙ্গারা যাতে জন্মসনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি না পায় সেজন্য জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার আহŸান জানানো হয়।
চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা জানান, ‘সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের বেলায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। তবে অনেক সময় দেখা যায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই রোহিঙ্গাদের নানাবিধ সনদ সরবরাহ করেছেন। এসব কাগজপত্র পুনরায় উপজেলা প্রশাসনসহ নির্বাচন কর্মকর্তাদের যাচাই করা কঠিন। জনপ্রতিনিধিরাই সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তদন্ত করে সনদ সরবরাহ করলে সহজে রোহিঙ্গারা ভোটার হতে পারবে না। সনদের বৈধতা পেয়ে গেলে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া সহজ হয়ে যায়।’