রেলের ৭ দিনের তদন্ত ৩৭ দিনেও শেষ হয়নি

5

রাহুল দাশ নয়ন

সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে তরুণী ধর্ষণের সাত দিনের সময় বেঁধে দেয়া তদন্ত ৩৭ দিনেও শেষ করতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত ২৬জুন ঘটনাটি ঘটার পরপরই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনার সাথে উদয়ন ট্রেনের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসএ কর্পোরেশনের কর্মচারীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললেও এই প্রতিষ্ঠানকে দায়মুক্তি দিতে রেলের দুইজন শীর্ষ কর্মকর্তা কলকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতিবেদন দিতে দীর্ঘসময় ব্যয় হওয়া নিয়ে কানাঘুষা চলছে। তবে ঘটনার পরপরই উদয়ন ট্রেনের গার্ড আব্দুর রহিমকে বরখাস্ত ও ট্রেনের ক্যাটারিং পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান এসএ কর্পোরেশনের কার্যক্রম স্থগিত রাখে রেলওয়ে।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. আনিসুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আদালতের অনুমতি নিয়ে ভিকটিম ও অভিযুক্তদের সাথে কথা বলেছি। তাদের বক্তব্য নিয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করেছি। দ্রæত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দেয়া হবে। তদন্তের স্বার্থে ঘটনার বিষয়ে এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।’ জানা যায়, উদয়ন ট্রেনে এমন ঘটনার সাথে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসএ কর্পোরেশনের কর্মচারীরা জড়িত থাকায় এ ঘটনার তদন্তে এত গড়িমশি চলছে। বিশেষ করে রেলওয়ের শীর্ষ পদে থাকা দুইজন কর্মকর্তা এই ঠিকাদারকে দায়মুক্তি দিতে চান। এই দুই কর্মকর্তা অতীতে বাণিজ্যিক বিভাগে কর্মরত থাকা সুবাদে ঠিকাদার শাহ আলমের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। যে কারনে কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কারণে যাতে এসএ কর্পোরেশনের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য এই দুই কর্মকর্তা তৎপর রয়েছেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ সূত্র জানায়, পাহাড়িকা এক্সপ্রেস দুটি, উদয়ন এক্সপ্রেস দুটি ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস এবং হাওড় এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, কক্সবাজার (বিশেষ ট্রেন), সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধুলী, তূর্ণা নিশিথা ট্রেনের অনবোর্ড সার্ভিস এসএ কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘটনার পরপর পাহাড়িকা ও উদয়ন ট্রেনে এসএ কর্পোরেশনের কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও এই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এখনও বাকি ট্রেনে পরিষেবার নামে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
উদয়ন ট্রেনের সেদিনের ঘটনার একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ঘটনার শিকার নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার অভিযোগ আনা হলেও এক নারীর সাথে এসএ কর্পোরেশনের কর্মীরা হাসিখুশিতেই অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত আছেন। অভিযুক্তদের আচরণে প্রকাশ পেয়েছে চলন্ত ট্রেনে বিভিন্ন সময় এমন অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকেন তাঁরা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তারেক ইমরান পূর্বদেশকে বলেন, ‘তদন্ত কাজ একপ্রকার গুছিয়ে এনেছি। পুরো তদন্ত একটা পর্যায়ে চলে আসছে। কমিটির আহবায়ক এটি লিখে জমা দিবেন। তবে যেদিন জমা দেয়া হবে সেদিনই তদন্ত শেষ হয়েছে বলা যাবে।’
এদিকে ঘটনায় ভিকটিম নারী মামলা দায়ের করলে এসএ কর্পোরেশনের চারজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে রেলওয়ে থানা পুলিশ। এরা হলেন- আব্দুর রউফ রাসেল, জামাল, শরিফ ও রাশেদ। রেলওয়ে থানার ওসি শহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘ভিকটিম এজাহার দায়ের করার পরপরই এজাহার নামীয় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা ভিকটিমের ডাক্তারি রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। অন্যান্য আইনী প্রক্রিয়া চলমান আছে।’