রিন্টুর গ্রাম যাত্রা

5

ইফতেখার মারুফ

রিন্টুর আনন্দ আর ধরে না। গ্রীষ্মের বন্ধ সামনে রেখে স্কুল ছুটি হচ্ছে। বাবা বলেছেন রিন্টুর স্কুল ছুটি হলে তিনিও অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বন্ধ কাটাবেন গ্রামের বাড়িতে। বছরের এ সময়ের জন্য রিন্টু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। ছায়াঢাকা মায়াবী গ্রামটা ওর খুব প্রিয়।চারদিকে গাছ পালা,ঘন সবুজ মাঠ,কল কল করে বয়ে যাওয়া খালের মধ্যে মাছের দাপাদাপি, ঘাসফড়িংয়ের ছুটোছুটি, পাখিদের কিচির মিচির ডাক সব মিলিয়ে রিন্টুকে ওদের গ্রামখানি বিভোর করে রাখে। গ্রামে ওর একদল বন্ধু আছে।ওরা রিন্টুকে পেলে নানা আনন্দে মেতে ওঠে। আগে থেকেই ওরা ঠিক করে রাখে রিন্টু এলে কী কী করবে।
বছরে তিনবার রিন্টুর গ্রামে যাওয়া হয়। গ্রীষ্মের ছুটি আর দুই ঈদের ছুটিতে ওরা বাড়ি যায়।ওর বন্ধুরা এ সময়ের জন্য অপেক্ষা করে।
রিন্টুও ওদের সাথে দেখা করার জন্য ভেতরে ভেতরে ছটফট করতে থাকে। দুই ঈদে ওরা দু’তিন দিনের বেশি থাকে না। ঈদের বেড়ানি বেড়াতে সময় কেটে যায়। তবে গ্রীষ্মের ছুটিতে গেলে মজা বেশি হয়। সে সময় বেশি দিন থাকা হয়। বন্ধুরা রিন্টুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বনে বাদারে। সারাদিন ঘুরে ঘুরে পাকা আম খুঁজে খুঁজে পেড়ে নিয়ে সবাই একসাথে গাছের ছায়ায় বসে মরা সামুকের ধারালো খোলস দিয়ে কেটে আম খায়। চলে পুকুরের জলে সাঁতার কাটার নামে দাপাদাপি।ওর বন্ধুরা সবাই সাঁতার জানে। কিন্তু রিন্টুর সাঁতার শেখা হয়নি। তাই সে কোমর পানিতে নেমে যা দাপাদাপির করার করে থাকে। বন্ধুরা ওকে সাঁতার শেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু রিন্টু ভয় পায়। তাই ওর শেখা হয়নি। ও ভেবে রেখেছিল পরের বার আসলে যে করেই হোক সে সাঁতার শিখবে। কিন্তু পরের বার নয়,পর পর দু’বার তার গ্রামে যাওয়া হয়নি।
করোনার কারণে এমনটা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে দেশে লকডউন দেয়া হয়। তখন সবারমত সেও ঘরবন্দি ছিল। তাই দুটি বছর গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়নি। তাই বাবা এবার গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে গ্রামের যাবার কথা বলাতে রিন্টরু আনন্দের সীমা নেই।
দু’বছর পর আবার গ্রামে যাবে। বন্ধুদের সাথে আনন্দে মেতে উঠবে এ কথা ভাবতেই তার মধ্যে আনন্দ থৈ থৈ করে উঠছে।
বাবা বলেছেন দু’বছর পর গ্রামে যাচ্ছেন তাই সাত দিন থাকবেন। সাত দিন থাকবে বলাতে রিন্টু ভাবে সাতদিন তো কম নয় সাত দিনেই সে সাঁতার শিখে ফেলবে।
দেখতে দেখতে রিন্টুদের বাড়ি যাওয়ার দিন ঘণিয়ে এল। সকাল সকাল ওরা বাড়ির পথে রওনা হল।
গাড়ি ছুটে চলেছে বাড়ির দিকে। রিন্টুর চোখে ভাসছে গাড়ি দেখে বন্ধুরা ছুটে এসেছে। গাড়ি থেকে নামতেই সবাই হৈ হৈ করে রিন্টুকে ঘিরে ধরে। রিন্টু ওদের বলল, এবার সে যেভাবেই হোক সাঁতার শিখবে। এ কথা শুনে বন্ধুরা হৈ হৈ করে উঠল,বাহ বেশ মজা হবে। আমরা তোমাকে সাঁতার শেখাব।
পরদিন রিন্টুর সাঁতার শেখা শুরু হল। ওর সাঁতার শেখা নিয়ে বন্ধুদের দারুণ উত্তেজনা। ওরা এক এক করে ওকে সাঁতার শিখতে সহযোগিতা করছে। সে কি আনন্দ। হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষাতে রিন্টুর সম্বিৎ ফিরে এল। এতক্ষণ ভাবনার জগতে ডুবে ছিল ভাবতেই মুখে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে। গাড়ি আবার চলতে শুরু করল।রিন্টুর চোখজোড়া সামনের দিকে বহুদূর চলে গেছে আর খুঁজতে থাকে ওদের প্রিয় সবুজ শ্যামল গ্রামটিকে।