রাশেদ-নোমানের চেয়ে ইউনুসের ঘরে স্বর্ণ কম

4

রাহুল দাশ নয়ন

হাটহাজারীতে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জমা দেয়া হলফনামায় চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম রাশেদুল আলম তাঁর স্ত্রীর স্বর্ণ দেখিয়েছিল ২০ ভরি। যার আনুমানিক মূল্য দেখানো হয় দুই লক্ষ টাকা। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইসিতে জমা দেয়া হলফনামায় স্ত্রীর স্বর্ণ দেখিয়েছেন ৪৫ ভরি। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে রাশেদের স্ত্রীর স্বর্ণ বেড়েছে ২৫ ভরি। ২০১৯ সালে ২০ ভরি স্বর্ণের দাম দুই লক্ষ টাকা দেখালেও ২০২৪ সালে এসে অবিশ্বাস্যভাবে ৪৫ ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন দেড় লক্ষ টাকা। অথচ গত এপ্রিল মাসেও প্রতিভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ছিল এক লক্ষ ১৩ হাজার টাকা।
একইভাবে নিজের ও স্ত্রীর কাছে থাকা স্বর্ণের অস্বাভাবিক দাম দেখিয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান। ইসিতে জমা দেয়া হলফনামায় এই প্রার্থী স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলংকারাদি নিজ নামে ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের দাম দেখিয়েছেন এক লক্ষ টাকা। স্ত্রীর পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের দাম দেখিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুস গনি চৌধুরী নিজের নামে ৬০ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ২০ হাজার টাকার স্বর্ণ আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ২০১৪ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় নিজের ও স্ত্রীর নামে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দামের ছয় তোলা স্বর্ণ উল্লেখ করেছিলেন ইউনুস গনি। দশ বছর পর এসে স্ত্রীর কাছে মাত্র ২০ হাজার টাকার স্বর্ণ থাকার তথ্য উল্লেখ করেছেন প্রার্থী ইউনুস। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় তিন প্রার্থীই স্বর্ণের অবিশ্বাস্য দাম দেখিয়েছেন। রাশেদ- নোমানের চেয়ে ইউনুসের ঘরে স্বর্ণ আছে কম। তবে সম্পদের দিক থেকে রাশেদ-নোমান লাখপতি, ইউনুস গনি কোটিপতি।
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিলে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার বিধান আছে। অধিকাংশ সময় প্রার্থীরা ইনকাম ট্যাক্স ফাইল দেখেই তথ্য উল্লেখ করেন। যে কারণে এসব নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলেও তেমন ভিত্তি থাকে না। অনেক সময় ছোট ভুলের কারণে প্রার্থীতাও বাতিল হয়। মূূলত ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা থেকেই এমন তথ্য দেয় প্রার্থীরা।
হলফনামা বিশ্লেষন করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম রাশেদুল আলমের যে সম্পদ ছিল তা বেড়ে এখন প্রায় দ্বিগুণ। পাঁচ বছরের ব্যবধানে কমেছে শিক্ষাগত যোগ্যতাও। ২০১৯ সালে এই প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্স অব সায়েন্স দেখালেও এবার তিনি দেখিয়েছেন স্নাতক। পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর পাঁচ বছরে আয়ের উৎস বেড়েছে। ২০১৯ সালে কৃষি, ব্যবসা ও স্ত্রীর নামে শেয়ার সঞ্চয়পত্রে তিন লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা আয় ছিল রাশেদের। পাঁচ বছরের ব্যবধানে কৃষিখাতে আয় কমলেও ব্যবসা, শেয়ার, উপজেলা পরিষদের সম্মানি, ব্যবসার মূলধন খাতে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে পাঁচ বছরেও নগদ টাকা বাড়েনি রাশেদের। আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ থেকে স্ত্রীর দুই লক্ষ টাকা আয় থাকলেও এখন তা নেই। তবে নিজের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুই লক্ষ ২৯ হাজার ৫৮৪ টাকা জমা আছে। এখনো আগের দামে গাড়িটিই ব্যবহার করছেন রাশেদ। ২০১৯ সালে রাশেদের স্ত্রীর নামে স্বর্ণ ছিল ২০ ভরি। এসব স্বর্ণ ও অন্যান্য অলংকারের আনুমানিক দাম ছিল দুই লক্ষ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানের স্ত্রীর নামে আরও স্বর্ণ ২৫ ভরি বাড়লেও মোট ৪৫ ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন দেড় লক্ষ টাকা। অর্থাৎ বর্তমান বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়লেও প্রার্থী রাশেদের হিসেবে কমেছে স্বর্ণের দাম। পাঁচ বছরের ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র বেড়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে পাঁচ বছর আগে রাশেদের কৃষি জমি ছিল ০.০৮ শতক। অকৃষি জমি ছিল ০.০২ শতক। এসব জমির আনুমানিক মূল্য ছিল প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। বর্তমানে তার কোন কৃষি-অকৃষি জমি নাই। তবে ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার ৩০০ টাকা দামের একটি বাড়ি/এপার্টমেন্ট আছে। আগে দায় দেন না থাকলেও এখন গৃহলোন বাবদ ২৭ লক্ষ ৫১ হাজার ৬১৫ টাকা দেনা বেড়েছে।
২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ইউনুস গনি চৌধুরী। এবার তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। ২০১৪ সালে পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থী বিল্ডটেক এসোসিয়েট ও চেইঞ্জ প্রপার্টিস লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠান কমিয়ে তিনি বিল্ডটেক এসোসিয়েট প্রতিষ্ঠানের নামেই ব্যবসা করেন। ২০১৪ সালে ইউনুস গনি ও তার স্ত্রীর বাৎসরিক আয় ছিল ১২ লক্ষ ৬ হাজার ৬৬৬ টাকা। বর্তমানে স্ত্রীর বাৎসরিক আয় না থাকলেও ইউনুসের আয় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
দশ বছর আগে ইউনুসের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর নগদ টাকা ছিল ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে দুইজনের নগদ টাকা আছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৫ লক্ষ টাকা। বর্তমানে এ খাতে টাকা জমা নাই। ২০১৪ সালে বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার ছিল চেইঞ্জ প্রপার্টিজ কোম্পানির নামে ২৫ লক্ষ টাকা। বর্তমানে নিজ নামে শেয়ার ও ব্যবসায়িক মূলত ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৭৯ হাজার ৬৪৩ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১২ লাখ ৬০ হাজার ৫৩৫ টাকা। আগের মতো আট লাখ টাকা দামের একটি গাড়ি আছে ইউনুসের। দশ বছর আগে নিজের ও স্ত্রীর নামে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দামের ছয় তোলা স্বর্ণ থাকলেও স্ত্রীর আছে এখন ২০ হাজার টাকার স্বর্ণ।
১০ বছর আগে স্থাবর সম্পদ হিসেবে দ্বিতল ভবনের অংশবিশেষ দালান থাকলেও এখন নিজের ও স্ত্রীর নামে অকৃষি জমি আছে। যার আনুমানিক মূল্য ৭৮ লক্ষ ৯২ হাজার ১০৭ টাকা। নিজ নামে ৪২ লাখ ৫০ হাজার ৪০ টাকা দামের এপার্টমেন্ট আছে। ২০১৪ সালে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ৭০ লক্ষ টাকা ঋণ থাকলেও এখন তা নেই।
আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা বি.কম পাস। মেসার্স ম্যাক্সিম কার্গো সিস্টেম লিমিটেড নামে একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। এই প্রার্থীর বাৎসরিক আয়ের উৎস তিন লক্ষ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে নগদ টাকা ৮০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে এক লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ এক লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা। বন্ড, ঋণপত্র স্টক একচেঞ্জে এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ১৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দামের একটি প্রাইভেট কার আছে। স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর নির্মিত অলংকারাদি নিজ নামে ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের দাম এক লক্ষ টাকা। স্ত্রীর পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের দাম ৫০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী স্ত্রীর নামে দেড় লক্ষ টাকা। আসবাবপত্র নিজ নামে ৩০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে এক লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানায় কৃষি জমির ৮০০ শতক ১০ লক্ষ টাকা। অকৃষি জমি ৪০ শতক দুই কোটি টাকা। বাড়ি/এপার্টমেন্ট এক কোটি টাকার পাকা দ্বিতল দালান আছে।