রাশিয়া-চীন-ভারত থেকে সমরাস্ত্র কেনা হচ্ছে

1

ঢাকা প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নকল্পে ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক ও ভারতসহ সমরাস্ত্র শিল্পে উন্নত বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র কেনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যা ভবিষ্যতে সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা জানান তিনি। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নকল্পে ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ভারতসহ সমরাস্ত্র শিল্পে উন্নত বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারের সমরাস্ত্র ক্রয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর জন্য যেসব উন্নত সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে, কাসা ইউটিলিটি বিমান, ডলফিন ইউরোকপ্টার, ডায়মন্ড প্রশিক্ষণ বিমান, এমবিটি-২০০০ ট্যাংক, ভিটি-ফাইভ লাইট ট্যাংক, আর্মার্ড রিকভারি ভেহিক্যাল, সেলফ প্রপেল্ড (এসপি) কামান, অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, শর্ট রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, মাইন-রেজিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রোটেক্টেড ভেহিক্যাল, আনম্যানড এরিয়াল ভেহিক্যাল, সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম, আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার, রাডার কন্ট্রোল এয়ার ডিফেন্স গান সিস্টেম, নাইট ভিশন মনোকুলার, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র, আধুনিক যোগাযোগ সরঞ্জামাদি উল্লেখযোগ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সমুদ্র নিরাপত্তা এবং সম্পদ রক্ষার বিষয়ে সরকারের প্রথম মেয়াদ থেকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অত্যাধুনিক সাবমেরিন, ক্যাসল ক্লাস জাহাজ,ফ্রিগেড, করভেট, সমুদ্র জরিপ জাহাজ, লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট, মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ার ক্রাফট এবং মেরিটাইম হেলিকপ্টারসহ অত্যাধুনিক নৌযুদ্ধ সরঞ্জাম বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে।
একই সঙ্গে নৌবাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ডাইভিং বোট, ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি, রিমোট কন্ট্রোল গান, আনম্যানড এয়ারক্রাফট সিস্টেম ইত্যাদিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি, নেটওয়ার্ক হাব স্টেশন, টেকটিকেল ফায়ারিং রেঞ্জ, লং রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স ও সার্ভিলেন্স রাডার, বিভিন্ন সরঞ্জাম ও অস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আইএফএফ সেন্টার গঠনের প্রক্রিয়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন যুগোপযোগী কার্যক্রম অব্যাহত আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য এমআই জি-২৯, ইয়াক-১৩০ এবং এফ-৭ বিজি-১ যুদ্ধ বিমান, সি-১৩০ জে এবং কে-৮ বিমান, এমআই১৭১ হেলিকপ্টারসহ অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করা হয়েছে। এ সকল আধুনিকায়নের ফলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আজ একটি আধুনিক ও চৌকস বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কিছু আইনগত জটিলতা রয়েছে। তবে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে একইসঙ্গে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা ও আইনি কার্যক্রম চলমান থাকার তথ্য দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব জটিলতা আইনি প্রক্রিয়াতেই নিরসন করে এই অপরাধীকে (তারেক রহমান) দেশে ফিরিয়ে আনা ও তার প্রাপ্য সাজার মুখোমুখি করার বিষয়ে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আশা করা যায়, এই প্রক্রিয়ায় ফলাফল আমরা অচিরেই দেখতে সক্ষম হব।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এ উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়াসহ ১৫ জন আসামি বর্তমানে পলাতক। পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দীন, মো. হারিছ চৌধরী ও রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবুদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সরকারপ্রধান বলেন, পলাতক অন্য আসামিরা যেসব দেশে অবস্থান করছে, সেসব দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ বিষয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে তিনি নিজেই বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন বলে সংসদকে জানান। আন্তর্জাতিক ফোরামে নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতেও এ বিষয়ে তাদের ব্যক্তিগত সহযোগিতাও কামনাও করেছেন তিনি।
রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদের প্রশ্নের জবাবে জিয়াউর রহমানকে ‘খুনি’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনি জিয়া তো রক্তাক্ত হাতেই খাবার খেতে বসতেন এবং খেতে খেতেই ফাঁসির আদেশে স্বাক্ষর করতেন। জিয়ার নির্দেশে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার ঘটনা স্বাধীন দেশের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের ছেড়ে দিয়ে প্রমাণ করেছে যে পরাজিত শক্তির দালাল ছিল জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করত না। জিয়ার সাড়ে ৫ বছরের শাসন আমলে ২১টি ক্যু, পাল্টা ক্যু হয়। লে. কর্নেল তাহেরকে সে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছিল। সার্বিক প্রেক্ষাপটে জিয়া অত্যন্ত হিংস্র ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল।
অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ‘বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অব বøাড’ বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সরকারি হিসাব মতে জিয়া ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র দু’মাসের মধ্যে ১ হাজার ১৪৩ জন সৈনিককে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল।