রামগতি ন্যায়রত্ন

1

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমসাময়িক সংস্কৃত কলেজের ছাত্র ও অধ্যাপক। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস – ‘বাঙ্গালা ভাষা ও বাঙ্গালা সাহিত্য-বিষয়ক প্রস্তাব’ রচনা করেন। রামগতি ন্যায়রত্ন’র জন্ম ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জুলাই (১২৩৮ বঙ্গাব্দের ২১ আষাঢ়) ব্রিটিশ ভারতের হুগলি জেলার পান্ডুয়ার নিকটস্থ ইলছোবা গ্রামে। পিতার নাম হলধর চূড়ামণি। রামগতি দশ বৎসর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা করেন গ্রামের পাঠশালায়। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে ভর্তি হন কলকাতার সংস্কৃত কলেজে। কলেজে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। কলেজ নথিতে তার পদবী ‘শর্মা’ ও ‘ব্যানার্জি’ ব্যবহৃত হত। তিনি কলেজের জুনিয়র ও সিনিয়র সমস্ত পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। শিক্ষান্তে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ন্যায়রত্ন উপাধি পান।
সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা লাভের পর প্রথমে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট হুগলির নর্মাল স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে বর্ধমানের বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার পাকুরডি গুরু ট্রেনিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক হন। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ই ফেব্রæয়ারি বহরমপুর কলেজে সংস্কৃতের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। শেষে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ২ রা ফেব্রæয়ারি আবার হুগলির নর্মাল স্কুলে প্রধান শিক্ষক হন এবং ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি নিজগ্রামে বিদ্যালয়, চিকিৎসালয় ও ডাকঘর স্থাপন করেন। রামগতি ন্যায়রতেœর ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘বাঙ্গালা ভাষা ও বাঙ্গালা সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব’ গ্রন্থটি অন্যতম কীর্তি। তার এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনার প্রথম প্রয়াস হিসাবে বিবেচিত হয়। তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থ গুলি হল- কলিকাতার প্রাচীন দুর্গ এবং অন্ধকূপ হত্যার ইতিহাস (১৮৫৮), বস্তুবিচার (১৮৫৯), বাঙ্গালার ইতিহাস (১৮৫৯), বাঙ্গালা ব্যাকরণ ( ১৮৬৪), ভারতবর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৮৬৫), ঋজু ব্যাখ্যা (১৮৬৬), শিশু পাঠ (১৮৬৮), দয়মন্তী (১৮৬৯)
চন্ডী (১৮৭২), গোষ্ঠীকথা (১৮৭৭), কুপিতকৌশিক নাটক (১৮৭৮), নীতিপথ (১৮৮১), রামচরিত (১৮৮৩), রোমাবতী (১৮৬২), ইলছোবা (১৮৮৮)। শেষোক্ত গ্রন্থদুটি তার মৌলিক আখ্যায়িকা গ্রন্থ। রামগতি ন্যায়রত্ন ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই অক্টোবর তার চুঁচুড়া’র বাড়িতে পরলোক গমন করেন। সূত্র: বাংলাপিডিয়া