রাঙ্গুনিয়ায় হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিষাক্ত বর্জ্য পড়ছে কর্ণফুলীতে

4

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্য প্রতিদিনই ফেলা হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। অপারেশনের পর মানবদেহ থেকে অপসারিত অংশও নদীতে ফেলা হয়। এ কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে নদী পাড়ের হাজারো মানুষ। বছরের পর বছর ক্লিনিক ও হাসপাতালের বর্জ্য নদীতে ফেলা হলেও টনক নড়ছে না প্রশাসনের।
স্থানীয়রা বলেন, এসব বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এ পানি কোন না কোনভাবে ব্যবহার করছেন নদী পাড়ের মানুষ। এতে নানা রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে হাজারো মানুষের মাঝে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। বছরের পর বছর নদীতে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। অনেককে খোলা জায়গায় এসব বর্জ্য ফেলতে দেখা যায়।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া অর্ধশত ডাক্তারের চেম্বার রয়েছে। প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে ৬/৭টি। বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে দুইটি। ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে অর্ধশতাধিক। যার ২/১টি ছাড়া বাকীগুলোর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্স নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলার কোন জায়গা নেই। তাই তারা ইচ্ছেমত দূষিত বর্জ্য কর্ণফুলীতে ফেলছেন। দোভাষী বাজারে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে প্রাইভেট ক্লিনিক, ডাক্তারদের চেম্বার, প্রাইভেট হাসপাতাল ও ১০/১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবস্থিত। তারাই সরাসরি বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে ফেলছেন। এতে স্বাস্থ্য বিভাগের কোন নিয়ম মানা হচ্ছে না।
প্রতিদিন কর্ণফুলী নদীতে বর্জ্য ফেলা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কোন তৎপরতা বা অভিযান নেই। এতে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে প্রতি মহুর্তে এবং রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে। তবে ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বর্জ্য অপসারণে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদের এ অবস্থা।
জানা যায়, আগে স্বাস্থ বিভাগ অভিযান পরিচালনা করলেও এখন লাইসেন্স অন লাইনে হওয়ায় তারা সরেজমিন আসেন না।
চন্দ্রঘোনা মা মণি (প্রা.) ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক দ্বিন মোহাম্মদ জানান, বর্জ্য ফেলার জন্য আমাদের ছাদে নির্দিষ্ট ফিড রয়েছে। ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ও বর্জ্য নষ্ট করে ফেলার যন্ত্র আছে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে বর্জ্য পুড়ে ফেলানো হয়। ফিডে বর্জ্য জমা রেখে, তা নিদিষ্ট সময়ের পর পুড়ে ফেলা হয়।
রাঙ্গুনিয়া হেলথ কেয়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, স্বাস্থ বিভাগের সব শর্ত মেনে বর্জ্য ফেলার জন্য ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা নদীতে বর্জ্য ফেলি না।
চন্দ্রঘোনা শ্যামা পাড়ার বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক গৌরপদ দাশ বলেন, নদীতে গোসল বা অন্যান্য কাজের সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকি। গোসল করতে গেলে প্রায়ই সামনে দিয়ে ক্লিনিকের বর্জ্য ভেসে যায়। এছাড়া অনেকের পায়ে ইনজেকশনের সুচ (নিডেল) বিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। প্রায় সময় নদী পাড়ের মানুষের নানা রোগ-ব্যাধি লেগেই আছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেব প্রসাদ চক্রবতী জানান, অন্যান্য বর্জ্য থেকে ক্লিনিকের বর্জ্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া এ বর্জ্য ফেলার কোন নিয়ম নেই। কারণ অপারেশনের পর মানবদেহ থেকে অপসারিত কোন অংশ নদীতে ফেলার পর তা মাছের পেটে গেলে সেই মাছ থেকে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে শতভাগ।
নদীতে ক্লিনিকের বর্জ্য ফেলার ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানী জানান, ক্লিনিক ও হাসপাতালের বর্জ্য প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার কথা। তারা সেখানে না ফেলে হাতের কাছে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেন। এর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।