রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় কাটা থামছে না

6

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা লাকি আক্তার। পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে থাকেন। অন্যদিকে তাদের উপরে পাহাড়ের চূড়ায় থাকেন আলেয়া বেগম নামে অন্য একটি পরিবার। যেকোনো মুহূর্তে পাহাড় ধসে প্রাণ যেতে পারে তাদের। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও তারা ঝুঁকিপূর্ণ এই পরিবেশে থাকছেন। বৃষ্টি শুরু হলেই তারা বসতঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। তারপরও এভাবেই চলমান কালবৈশাখী তান্ডবের মাঝেও পাহাড় কেন্দ্রিক তাদের ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন অব্যাহত রয়েছে। তারা জানান, কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বাধ্য হয়ে থাকছেন তারা। এখানে জীবন এখানে মরণ তাদের।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসে ইতিপূর্বে প্রাণহানিসহ আহত হয়েছেন অনেকে। এরপরও অবৈধভাবে পাহাড় কাটা এবং সেখানে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস বন্ধ করা যাচ্ছে না। উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের শুধুমাত্র মোহাম্মদপুর এলাকাতেই গেলো কয়েক বছরের মধ্যেই অন্তত ১০টি পাহাড় বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।এসব পাহাড়ের মাটি শুষ্ক মৌসুমে চলে গেছে আশপাশের ইটভাটায়। তাছাড়া সারা বছরই চলে পাহাড়ের মাটি দিয়ে পুকুর–ডোবা ভরাটসহ নানা পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম। একইভাবে উপজেলার চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম, পৌরসভার ইছাখালী, কোদালা, ইসলামপুর, পোমরা, রাজানগর, পদুয়া, বেতাগীসহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙ্গুনিয়ায় ভয়াবহ পাহাড় ধসে ২১জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ২০১৮ সালে পাহাড় ধসে তিনজন মারা যায়। প্রতি বছর বৃষ্টিপাত শুরু হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করেই দায়িত্ব শেষ করা হয়। ওইসব পাহাড়ের বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে অন্যত্র সরিয়ে নিতে কিংবা পাহাড় কাটা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দক্ষিণ রাজানগর ৪নং ওয়ার্ড মোহাম্মদপুর ও গলাচিলা এলাকায় পাহাড়ি বেশ কিছু বসতঘর ভেঙে পড়েছে। কয়েকটি ঘরের চালা উড়ে গিয়ে অন্যত্র পড়েছে। ধসে পড়েছে বেশ কয়েকটি পাহাড়ও। অপরিকল্পিত পাহাড় কাটা ও কৃষি জমির মাটি কাটার ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এছাড়াও সড়কটি দিয়ে ইটভাটার গাছ ও মাটি বহনে ব্যবহৃত ড্রাম ট্রাক চলাচল করে। ফলে সড়কটি অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সড়কটির উন্নয়ন না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই কাঁদায় ভোগান্তি পোহাতে হয় এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা জানান, গত কালবৈশাখী ঝড়ে এই এলাকায় ২০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এবার দুই দফা কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও এই এলাকার যোগাযোগের মাধ্যমে রশিদ আহমদ সড়ক ও এম সেলিম সড়কে পাহাড় ধসের মাটি নেমে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে পথচারীরা।
মো. সোলাইমান নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, প্রতিনিয়ত এই এলাকায় পাহাড় কাটা হয়। কৃষি জমি কেটে পুকুর বানানো হয়েছে। যার ফলে বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ে পাহাড়। এছাড়াও যে সড়কটি আছে এই সড়ক দিয়ে জনসাধারণ চলাচল খুবই ঝুকিপূর্ণ। মো. সাইমন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ঠিকমতো এই সড়ক দিয়ে স্কুলে যেতে পারি না। কাদায় কাপড় চোপড় নষ্ট হয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এবার কালবৈশাখীতে প্রায় ২০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও চলাচলের দুটি সড়কের বেহাল অবস্থা। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়ক কাদাযুক্ত। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি। তবে কোনো সুরাহা মেলেনি। এছাড়াও অপরিকল্পিত পাহাড় কাটার ফলে পাহাড় ধস হচ্ছে। আমি পাহাড় কাটায় বাধা দিলেও অনেক সময় কাজ হয় না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহেবুব বলেন, অপরিকল্পিত পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা খবর পেলেই অভিযান চালিয়ে বিভিন্নভাবে জরিমানা করি।