রাঙামাটিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে ক্ষোভ

44

রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটিতে ৪৬২ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ৩০ বছরের অধিক বয়সী প্রার্থীদের আবেদন বাতিল করায় এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অধীন এসব শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
আগামী ২৪ মে এ নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা। তার আগেই এ পরীক্ষা নিয়ে উঠেছে বঞ্চনা, বৈষম্যের নানা অভিযোগ। উচ্চ আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংক্ষুব্ধরা। এ নিয়োগে ৪০ বছর বয়সসীমা বাতিলের প্রতিবাদ এবং তা পুনর্বহালের দাবিতে গত শনিবার সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। কর্তৃপক্ষ বলছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। এর বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদ পূরণে ২০২২ সালের ২৯ মে ৪৬২ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কিন্তু প্রার্থীদের বয়সসীমা জটিলতার কারণে তা এতদিন স্থগিত ছিল। মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী ২৪ মে এ নিয়োগ পরীক্ষা আহŸান করা হয়।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ৪৬২ পদের বিপরীতে ৬ হাজার ২৯১টি আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু বয়সসীমার কারণে এ নিয়োগ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ অধিক প্রার্থীকে। এছাড়া অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণসহ নানা কারণে আরও ৪ শতাধিক আবেদন বাতিল করা হয়।
এদিকে বয়সসীমার কারণে পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত প্রার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এর প্রতিবাদে তারা গত শনিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী ও চাকরির নিয়োগ প্রত্যাশী ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানবন্ধন থেকে এ নিয়োগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়।
তারা জানান, বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের যোগ্যতায় সর্বোচ্চ বয়সসীমার উল্লেখ ছিল ৪০ বছর। তাই তারা অনেক কষ্ট করে আবেদন করেন। এর আগে ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষার কথা ছিল। অথচ সে পরীক্ষায় অংশ নিতে সব প্রার্থীর নিকট প্রবেশপত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরে তা স্থগিত করার পর এবার হঠাৎ ৩০ বছরের অধিক প্রার্থীদের আবেদন বাতিল করে দিয়ে আমাদের সঙ্গে অন্যায় ও প্রতারণা করা হয়েছে।
পূর্বে বলবৎ বয়সসীমার নির্দেশনা অনুসরণ করেই ১৮-৪০ বছর প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন আহŸান করে ৪৬২ শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এ নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগে ১৯ সেপ্টেম্বর পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক নির্দেশনায় তা স্থগিত করা হয়।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তিন পার্বত্য জেলায় ১১তম-২০তম গ্রেডের (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) কর্মচারীর শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপজাতীয় ও অ-উপজাতীয় বাসিন্দাদের জন্য বয়সসীমা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলকরণ সংক্রান্ত একটি চিঠি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খালেদ মোহাম্মদ জাকী স্বাক্ষরে পাঠানো ওই চিঠিতে জানানো হয়, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় এবং ২০১৩ সালের ৬নং ও ৭নং আইনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের (সাবেক সংস্থাপন মন্ত্রণালয়) ১৯৮৫ সালের ১৬ জানুয়ারি এবং তার আেেলাকে পরবর্তীতে জারি করা ১৯৯৩ সালের ৮ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে আদেশটির বৈধতা হারিয়েছে, তাই এটি আর কার্যকর নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলকরণের বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ দুটি পুনর্বহাল করার বিধিগত সুযোগ নেই।
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ চিঠিতে রাঙামাটিসহ পাহাড়ে জনমনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ অবস্থার মধ্যেই আগামী ২৪ মে ৪৬২ শিক্ষকের নিয়োগ পরীক্ষার আহবান করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। এটিকে পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দাদের অধিকার খর্ব বলেও মন্তব্য অনেকের।
খোদ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আহŸায়ক প্রিয়নন্দ চাকমা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তে আমি নিজেও মর্মাহত। এতদিন নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপজাতীয় ও অ-উপজাতীয় বাসিন্দা সবার ক্ষেত্রে ৪০ বছর বয়সসীমা বহাল ছিল। আমরা সে অনুযায়ী ৪৬২ শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আহবান করি। কিন্তু হঠাৎ আগের নির্দেশনা বৈধতা হারিয়েছে উল্লেখ করে তা পুনর্বহালের কোন সুযোগ নেই মর্মে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সবশেষ নির্দেশনায় এ অঞ্চলের বাসিন্দারা বিস্মিত। এর ফলে যাদের আবেদন বাতিল হয়ে গেছে বা পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারাও হয়রানির শিকার। তবু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগও নেই।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেশ শীল বলেন, আমরা শুরু থেকেই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। এর বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এ নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় তা স্থগিত রাখি। সবশেষ ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর এক চিঠিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দাদের বয়সসীমা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলকরণ সংক্রান্ত বিষয়টির পুনর্বহাল বা পুনঃবিবেচনার সুযোগ নেই মর্মে স্পষ্ট করে চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এখন এ নির্দেশনা অনুযায়ী ৪৬২ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। ২৪ মে এ নিয়োগ পরীক্ষা আহŸান করা হয়েছে। এতে ১৮-৩০ বয়সসীমার প্রার্থীদের ডাকা হচ্ছে। এর অধিক বয়স যাদের, তাদেরকে ডাকতে পারছি না। এসব বঞ্চিত প্রার্থীদের ব্যাংক ড্রাফটের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।