রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার ২ সাংবাদিক

1

রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। তারা হলেন- রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এম কামাল উদ্দিন এবং একুশে টিভি ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সত্রং চাকমা। সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তার সরকারের পতনের পর সন্ধ্যায় পৃথক ঘটনায় এ দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হন। জানা যায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শহরে ছড়িয়ে পড়া বিজয় উল্লাসে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় সত্রং চাকমা ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করলে এতে বাধা দিয়ে তার ওপর চড়াও হয়ে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মেরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার হাতে থাকা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়। পরে ডেইলি স্টারের প্রতিনিধি লালথান লিয়ানা পাংখোয়ার সাহায্যে নিরাপদে চলে যেতে সক্ষম হলে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে সত্রং চাকমার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর সহকর্মীদের সহায়তায় অনেক খোঁজাখুঁজির পরে মঙ্গলবার সকালে শহরের তবলছড়ি এলাকার মো. কালাম নামে স্থানীয় এক বিএনপি কর্মীর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় কালাম বলেন, তিনি একজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি ৫ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছেন। কিন্তু সেটি যে সাংবাদিক সত্রং চাকমার কাছ থেকে ছিনতাই করা হয়েছে তা জানতেন না তিনি।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক সত্রং চাকমা বলেন, ওই সময় দুর্বৃত্তদের জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে চালানো তাÐব ও আগুন দেওয়ার ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করলে এতে দুর্বৃত্তরা বাধা দেয়। এ সময় অতর্কিত এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মেরে আমার ওপর হামলা করে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এ ব্যাপারে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানান সাংবাদিক সত্রং চাকমা।
একই দিন সন্ধ্যায় অপর এক পৃথক ঘটনায় শহরের চম্পকনগর এলাকার জনৈক কাশেম মোল্লার বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় সাংবাদিক এম কামাল উদ্দিনের ভাড়া বাসায় গিয়ে হামলা চালায় ২০-৩০ জনের একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় তারা সাংবাদিককে কামালকে না পেয়ে তার বাসায় থাকা ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার, বাসার জিনিসপত্র, আসবাপত্র ভাংচুর করে এবং স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়।
এতে অন্তত ১২-১৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান সাংবাদিক কামাল। দুর্বৃত্তরা হামলার সময় ঘরে থাকা সাংবাদিক কামালের স্ত্রী ও সন্তানদের বেদম মারধর করে বলেও জানান তিনি। সাংবাদিক কামাল বলেন, আমি কোনো দল করি না। আমার যতদূর ধারণা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে হয়তো কেউ পূর্ব আক্রোশের জেরে আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে বাসায় গিয়ে দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়েছে। এ সময় আমি বাসায় ছিলাম না। কর্মস্থলে ছিলাম। বাসায় থাকলে নিশ্চিত আমার প্রাণহানি ঘটাত দুর্বৃৃত্তরা। হামলাকারীদের শনাক্ত করা গেছে। জামাতের অ্যাডভোকেট রহমত উল্ল্যাহর নেতৃত্বে এ হামলা পরিচালিত হয়েছে বলে আমি নিশ্চি হতে পেরেছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আমি দোষীদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় কঠোর শাস্তির দাবি করছি। দুই সাংবাদিকের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা বলেন, বিজয় উল্লাসের নামে দায়িত্বশীল সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় কঠোর শাস্তিসহ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।