পূর্বদেশ ডেস্ক
নির্বাচনের দাবি করায় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আসা কটাক্ষ ও সমালোচনার জবাব দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ‘বিরাজনীতিকরণের’ চেষ্টার কথাতুলে ধরেছেন। এখন নির্বাচনের দাবি জনগণ মেনে নেবে না বলে জামায়াতের পক্ষ থেকে আসা বক্তব্যের বিপরীতে তিনি বলেছেন, যারা ভোটে জিততে পারবে না, সরকার চালাতে পারবে না, তারা এসব কথা বলে। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বুধবার দুপুরে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের করা মন্তব্যের জবাব দেন।
বিএনপির ‘নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন জিকির জনগণ মেনে নেবে না’ বলে জামায়াত প্রধানের বক্তব্যের জবাব দিয়ে ফখরুল বলেন, যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে এরা সরকার চালাতে পারবে, তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না।
সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আমাদের লড়াইটা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সেটার জন্যই তো নির্বাচন। এটা তো আমাদের অধিকার। আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এতদিন লড়াই করেছি, সংগ্রাম করে এসেছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এখনও এক-এগারোর কথা ভুলে যাইনি। তাই আবার যখন ওই চেহারাগুলো সামনে আসে, তখন যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হয়, প্রশ্ন এসে যায়। সেজন্য আমরা একটা আলোচনার কথা বলেছি, পারস্পরিক আলোচনা দরকার।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের মত ‘বিরাজনীতিকরণের’ লক্ষণ দেখছেন কি না- এই প্রশ্নেও জামায়াতের আমিরকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, আমি লক্ষণ দেখছি না, সতর্ক করছি। কিছু ফেস দেখলে আমরা ভয় পাই। আপনারাও দেখেছেন। কোনো দিন দেখিনি, হঠাৎ করে মিডিয়ার ফ্রন্ট পেজে চলে আসছে, তার বক্তব্য, তাদের থিওরি এগুলো আপনারা প্রচার করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার কী চায়, জনগণ কী চায়, এটা নিয়ে আলোচনা হতে হবে মন্তব্য নির্বাচন প্রশ্নে আবার সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘অতি দ্রæত’ সংলাপের দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
এটাই (সংলাপ) আমরা বলেছি, খুব জোর দিয়ে বলেছি। আজকে আবারও বললাম দ্রæত আলোচনা প্রয়োজন। না হলে হবে কী? অনেক ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হয়। সব কিছু তো পাবলিকলি হয় না। অনেক সময়ে আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার তুমুল আন্দোলন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি ও জামায়াত একসঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও বঙ্গভবনে গিয়ে বৈঠক করেছে, ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে গেছে, চারদিন পর ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচন দেবে- এই প্রশ্নে এখন বিএনপি ও জামায়াত বিপরীতমুখী অবস্থানে। গত ২৪ আগস্ট ফখরুল হঠাৎই বলেন, ‘কয়েকজন ব্যক্তির সংস্কারে’ তার বিশ্বাস নেই। তিনি নির্বাচন নিয়ে দ্রæত সংলাপের দাবি জানান।
পরদিন সিলেটে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা নির্বাচন প্রশ্নে সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে প্রস্তুত হলেও অনির্দিষ্টকালের জন্য সময় দিতে চান না।
একই দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে এসে ড. ইউনূস তার সরকারের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরলেও নির্বাচন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তার সরকারের সিদ্ধান্ত নয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পরদিন মির্জা ফখরুল এক আলোচনায় বলেন, এই বক্তব্যে সংস্কার নিয়ে তার ‘ধোঁয়াশা’ কাটেনি। তিনি আবার নির্বাচন নিয়ে সংলাপ দাবি করেন।
বিএনপি বারবার নির্বাচন প্রশ্নে সংলাপের দাবি করায় দুই যুগের জোটসঙ্গী জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দলটিকে ধুয়ে দিয়েছেন। গত সোমবার দলটির এক আলোচনায় বিএনপির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এখন জাতি বহুমুখী সংকটে, একদিকে শহীদ পরিবারগুলো আহাজারি করছে, আহতরা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে, পা হারা, হাত হারা, চোখ হারা, কী কষ্টের মধ্যে তারা আছে। আবার ইতিমধ্যে বন্যার ভয়াবহতা শুরু হয়েছে। যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করে, রাজনীতি তো জনগণের জন্য তাদের তো উচিত এই বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এই সময়টায় ওখানে না দাঁড়িয়ে যদি নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন জিকির করলে জাতি তা কবুল করবে?
