‘মোদী ম্যাজিকে’ ধস, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল বিজেপি

16

পূর্বদেশ ডেস্ক

ভারতে সবচেয়ে বড় নির্বাচনের ফলে দেশটিতে একদলীয় শাসনের ইতি হতে চলারই আভাস মিলেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোটগণনার পর বিজেপি এককভাবে পেয়েছে ২৪০ আসন, কংগ্রেস ৯৯ এবং অন্যরা পেয়েছে ২০৪ আসন। ফলে সব মিলিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’ (এনডিএ) পেয়েছে ২৯৪ আসন। অন্যদিকে, তাদের প্রতিপক্ষ জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ এলায়েন্স’ (আইএনডিআইএ বা ইন্ডিয়া) পেয়েছে ২৩২ আসনে। অন্যান্য পেয়েছে ১৭ আসন।
এই আবহে কি বিজেপি সরকার গড়তে পারবে? যদিও ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন। খালি চোখে দেখলে মনে হবে এনডিএ তার অনেক বেশি পেয়েছে। ফলে সরকার গড়তে সমস্যা কোথায়? কিন্তু সরকার গড়তে হলে এনডিএ জোট শরিক প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সমান ভূমিকা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল যদি এনডিএ ছেড়ে বের হয়ে যায়, তাহলে বিজেপির ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সরকার গড়া কঠিন হয়ে পড়বে। আর এই সন্দেহ তৈরি করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট।
বিজেপি এবার তাদের জন্য ৩৭০ আসন আর এনডিএ জোটের জন্য ৪০০ আসনের লক্ষ্য র্নিধারণ করেছিল। কিন্তু ভোটের চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনী ফলের বিপরীতে এবার মোদীর দল বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারেনি। ফলে এবার আর সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না দলটি। তাই সরকার গড়ার জন্য মোদীকে নির্ভর করতে হবে জোট এনডিএ-র দুই শরিক, চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউ’র ওপর।
ভোটের ফলে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে এনডিএ জোট খুব একটা স্বস্তিতে নেই। এ পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়া জোট শরিক বাড়ানোর চেষ্টা নিতে চাইছে। আর জোট ধরে রেখে সরকার গড়তে এরই মধ্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি শিবির।
তাই আজই শরিক দলগুলো সঙ্গে এনডিএ জোট বৈঠকে বসতে চলেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ইতোমধ্যে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা নিজের বাসভবনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। অমিত শাহ, রাজনাথ সিংও সেই বৈঠকে ছিলেন।
অপরদিকে বসে নেই ইন্ডিয়া জোটও। ইন্ডিয়া জোট ২০০-র বেশি আসন পেয়েই ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস শিবির। ভোটগণনার পর দেখা গেল, ‘ইন্ডিয়া’র সব সহযোগী দল মিলে দু’শোর গÐি টপকালো। যদি মোদী সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে লোকসভার অধিবেশনেও এবার বিরোধীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মোদীকে।‘ইন্ডিয়া’র চালে সরকার গড়তে নাও পারে বিজেপি : পশ্চিম বাংলায় মমতার দুর্গে এবারও হানা দিতে পারল না ক্ষমতাসীন বিজেপি। বুথ ফেরত সমীক্ষা ভুল প্রমাণ করে, এবারও বাংলায় নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ২৯, বিজেপি ১২, কংগ্রেস এক। এবারও খাতা খুলতে পারলো না সিপিআইএম। এবারও বামেদের শূন্য হাতে ফিরতে হলো। তবে তাদের একটাই ভরসা, ভোট শতাংশে দেড় থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশ।
এদিকে সরকার গড়তে হলে এনডিএ জোট শরিক প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সমান ভূমিকা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল যদি এনডিএ ছেড়ে বের হয়ে যায়, তাহলে বিজেপির ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সরকার গড়া কঠিন হয়ে পড়বে। আর এই সন্দেহ তৈরি করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট।
ইতিমধ্যে জানা যাচ্ছে, এনডিএ জোটশরিক দুটি দলকে ভাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে কংগ্রেস। প্রথমটি বিহারে নিতিশ কুমারের দল জেডি(ইউ), অপরটি অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর দল টিডিপি। যথাক্রমে এই দুই দল এবারের লোকসভায় আসন পেয়েছে ১২ এবং ১৬ আসন। সে ক্ষেত্রে দুই আসনের যোগফল ২৮টি আসন এনডিএ থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে বিজেপি জোট এনডিএর হাতে পড়ে রইবে ২৬৬ আসন। ফলে বিজেপি নেতৃত্বেধীন এনডিএ জোট সরকার গড়তে পারবে না। ফলে ইন্ডিয়া জোট আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেই কাজ করতে।
ইতিমধ্যেই এ কাজে দায়িত্ব পড়েছে তিন দলের নেতার উপর। কংগ্রেসের সভাপতি মলি­কার্জুন খাড়গে, মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার এবং পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারা যদি এই কাজে সাফল্য পায়, তাহলে বিজেপির পক্ষে সরকার গড়া এক প্রকার মুশকিল।
গতকাল কংগ্রেসের তরফে মলি­কার্জুন এবং রাহুল গান্ধী জানিয়েছে, আজ বুধবার ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক হবে। সেখানেই নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে ফল প্রকাশের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে ইন্ডিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার আবেদন করছি। ফলে এখন ইন্ডিয়া জোটের এখন মূল লক্ষ্য হল, যে করেই হোক বিজেপির জোট শরিকদের ভাগিয়ে নিজেদের দলে নেওয়া। আর এতে যদি তারা সফল হতে পারে তাহলে বলা যেতেই পারে জয় পেয়েও বিজেপি সরকার গড়তে পারবে না। খবর বিডিনিউজ/ বাংলানিউজ