মিলছে আল্ট্রা, এক্সরে বেড়েছে রোগীর চাপ

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাসপাতালে যথাসময়ে চিকিৎসক উপস্থিত ছিল না, অপরিষ্কার মেঝে ও টয়লেট। পুরানো ও অপরিষ্কার বেড-বিছানায় শুয়ে আছে রোগী। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা কিংবা পরীক্ষা না পাওয়ায় রোগীর হাসপাতাল বিমুখ ছিল। চার মাস আগেও হাসপাতালের পরিবেশ ছিল এমন দুর্বিষহ। গত ১৬ জানুয়ারি বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান হাসপাতালটি আকস্মিক পরিদর্শনের পর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন হাসপাতালটিতে ফিরেছে চিকিৎসার পরিবেশ। মিলছে আল্ট্রা, ইসিজি, এক্সরের মতো পরীক্ষা।
বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ পূর্বদেশকে বলেন, ‘হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন ৬০০-৭০০ রোগী হয়। অন্তবিভাগে প্রতিদিন ১৪০ এর কাছাকাছি রোগী হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীরে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে ডাক্তার ও নার্সদের খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালে নিয়মিত আল্ট্রা, এক্সরে হচ্ছে। নরমাল ডেলিভারীও পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। মাননীয় এমপি স্যার ব্যক্তিগত উদ্যোগে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, রোগীদের জন্য বেডশিড, বালিশ সরবরাহ করে হাসপাতালের সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়েছেন। এছাড়াও ওয়াশ বøক বসানো, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, টয়লেট সংস্কার করেছেন। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ও যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা যাতে যথাযথভাবে হয় সেজন্যও আমরা চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে সকল সাবসেন্টারে নিয়মিত ডাক্তারসহ চিকিৎসা সেবায় জোর দেয়া হয়েছে।’
গত ১৬ জানুয়ারি নবাগত সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান হাসপাতার ভিজিটে গিয়ে অব্যবস্থাপনা দেখে হতবাক হন। তিনি বিষয়টিকে স্বাভাবিক ধরে নিয়ে পরিবর্তনের অঙ্গিকার করেন। যে কারণে প্রথম মাসেই তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেডশিট, বালিশ, ফোম বেড সরবরাহ করেন। পরে আল্ট্রা মেশিন সরবরাহ করেন। সম্প্রতি রোগীর চাপ বাড়ার কারনে বর্হিবিভাগে গরমে হিমশিম খাওয়া রোগীদের সুবিধার্থে সিলিং ফ্যান দেন। সুপেয় পানির ব্যবস্থায় বসানো হয় গভীর নলকূপ। সংস্কার করা হয় প্রতিটি টয়লেট, দরজা-জানালা। সম্প্রতি নষ্ট পড়ে থাকা এক্সরে মেশিনটি চালু করে রোগী সেবার মোড় ঘুরিয়ে দেন।
বাঁশখালী হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমপর্যায়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে অগ্রসর করতে অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। যে কারনে সরকারের বরাদ্দ পাওয়ার আগেই প্রাথমিকভাবে নিজ উদ্যোগে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। হাসপাতালটিতে যাতে পরিপূর্ণ সেবা মিলে সে ব্যবস্থাই ধীরে ধীরে করছি। ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১০০ শয্যা করা হবে। কোন মানুষ যাতে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত না হয় সেজন্য কাজ করছি। চিকিৎসা সেবা নিয়ে কোন অন্যায় আমি সহ্য করবো না। হাসপাতালের রোগীরা যাতে চিকিৎসা সেবা পায় এবং চিকিৎসকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা প্রদান করতে পারে এজন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে সেগুলো করবো। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প সাব সেন্টার ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যাতে তৃণমূলের মানুষ চিকিৎসা সেবা পায় সেজন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। চিকিৎসা সেবায় সাধারণ মানুষ খুশি হলেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।’
চার মাসের ব্যবধানে আগে যেখানে প্রতিদিন ২০০-৩০০ রোগী হতো এখন হাসপাতালে গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী হচ্ছে। অন্যান্য চিকিৎসা সেবা ছাড়াও চক্ষুসেবা, ডেন্টাল সেবার মতো চিকিৎসা মিলছে। চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বিশেষায়িত চিকিৎসক। গত ৪এপ্রিল আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১৬২জন রোগী সেবা পেয়েছেন। বাইরের প্রতিষ্টানে যেখানে একটি আল্ট্রা করতে রোগীদের হাজারের উপরে টাকা খরচ হচ্ছে সেখানে হাসপাতালে মাত্র ২২০ টাকায় এ সেবা মিলছে। এক্সরে করতে বাইরে যেখানে ৬০০-৮০০ টাকা খচর হতো সেখানে ২০০ টাকায় হাসপাতালে এক্সরে করা সম্ভব হচ্ছে। ওয়ার্ডের ঝকঝকে মেঝেতে রোগীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে। প্রতিদিন প্রায় ৫০জন রোগী নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন হাসপাতালে।
হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে পরীক্ষা করা রোগী সাজেদা বেগম বলেন, ‘তিন টাকার টিকিট নিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। বেশি রোগী থাকায় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিতে কষ্ট হলেও সব সেবা হাসপাতালে পেয়েছি। ৪০০ টাকায় পাঁচটি রক্ত পরীক্ষা করেছি। বিনামূল্যে ওষুধও নিয়েছি।’
হাসপাতাল ফার্মেসিতে বসা কামনাশীষ পূর্বদেশকে বলেন, ‘জটিল রোগের কিছু ওষুধ ছাড়া নিয়মিত রোগের সকল ওষুধ এখন হাসপাতালে বিনামূল্যে মিলে। এমন কিছু ওষুধ আছে বাইরে প্রচুর দাম। অথচ হাসপাতালে এগুলো ফ্রি। যেসব ওষুধ হাসপাতালে বিনামূলে পাওয়া যাবে রোগীদের সেগুলো হাসপাতাল থেকেই নিতে বলেন চিকিৎসকরা।’