মালিককে ফোন দিয়ে কালেমা পড়তে পড়তে থেমে যান শাহেদ

8

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের রিজওয়ান কমপ্লেক্সে আজওয়ার টেলিকমের দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান দোকানের কর্মচারী শাহেদ। বাসাটি রিজওয়ান কমপ্লেক্সের পাঁচতলায়। রাতে মোহাম্মদী প্লাজায় আগুন লাগলে তার ধোঁয়া রিজওয়ান কমপ্লেক্সেও চলে যায়, এ সময় ধোঁয়ায় আবদ্ধ শাহেদ তার মালিকের সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলতে কালেমা পড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে দম বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
গতকাল শুক্রবার রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় গেলে আজওয়ার টেলিকমের মালিক সাজ্জাদ মিয়ার সাথে কথা বললে এসব তথ্য পাওয়া যায়। নিহত শাহেদ সাতকানিয়ার মির্জাখীল এলাকার বেট্টা মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, আজওয়ার টেলিকমে দেড় বছর ধরে চাকরি করতেন শাহেদ। রিজওয়ান কমপ্লেক্সের পাঁচতলায় একটি বাসা নিয়ে ভাড়া থাকতেন সাজ্জাদ মিয়া ও শাহেদ। প্রতিদিন দোকান বন্ধের পর এখানেই থাকতেন তারা। তবে, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মার্কেট বন্ধ থাকায় তারা প্রায় সময়েই বৃহস্পতিবার রাতে সাতকানিয়ার গ্রামের বাড়িতে চলে যেতেন। এবার দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়া বাড়িতে গেলেও যাননি শাহেদ। গত বৃহস্পতিবার রাতে অগ্নিকান্ডে মৃত্যু হয় তার। প্রাণে বাঁচার সব চেষ্টা করেও শাহেদ চিরতরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
দোকানের মালিক সাজ্জাদ বলেন, আমি প্রতিবারের মতো বৃহস্পতিবার রাতে সাতকানিয়ার গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে রাত সাড়ে ১২টা বেজে যায়। শরীর ক্লান্ত থাকায় দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়ি। এরই মধ্যে রাত পৌনে ২টায় শাহেদের ফোন পেয়ে জেগে উঠি। ফোন দিয়েই সে (শাহেদ) ভয়ার্ত কণ্ঠে বলতে থাকে, ‘পাশের মোহাম্মদী মার্কেটে ধরা আগুন আমাদের রিজওয়ান কমপ্লেক্সেও ছড়িয়ে পড়েছে। আমি আমার বাসায় আটকা পড়েছি। আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন। এরপর আমি আশপাশের সবাইকে ফোন দিয়ে শাহেদকে উদ্ধারের চেষ্টা করতে বলি। পরে আমিও মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে শহরের উদ্দেশে রওনা দেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি শাহেদকে বারবার বলতে থাকি মুখে ভেজা কাপড় বেঁধে মার্কেটের ছয় তলায় উঠে যেতে। সে আমাকে জানায়, চারিদিকে অন্ধকার আর ধোঁয়ার কারণে সে বের হতে পারছে না। আমি বলতে থাকি, তোর তো গলিপথ চেনা, যে কোনোভাবে দৌড় দে। কিন্তু সে চেষ্টা করেও পারেনি। এক পর্যায়ে রাত ১টা ৫৮ মিনিটে আমার সঙ্গে শাহেদের সর্বশেষ কথা হয়। তখন সে বলে, আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরপর সে কালেমা পড়তে পড়তে থেমে যায়। পরে বারবার ফোন দিলেও আর ফোন ধরতে পারেনি।’
এরপর সাজ্জাদ মিয়া রাত পৌনে ৩টার দিকে শহরে এসে পৌঁছান। এসে শাহেদকে উদ্ধার করতে একাই উঠে পড়েন রিয়াজউদ্দিন বাজারের রিজওয়ান কমপ্লেক্সের পাঁচ তলার বাসায়। অন্ধকার আর ধোঁয়ার মধ্যেই শাহেদকে উদ্ধার করতে ঢুকে পড়েন বাসায়। পরে টয়লেটে গিয়ে দেখেন, সেখানে নিথর হয়ে পড়ে আছেন শাহেদ।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় অগ্নিকান্ডে তিনজন নিহত হন। ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাত ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে রিয়াজউদ্দিন মোহাম্মদী প্লাজা নামে একটি মার্কেটে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন পার্শ্ববর্তী রিজওয়ান কমপ্লেক্সেও ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের নন্দনকানন, চন্দনপুরা, আগ্রাবাদ ও লামারবাজার স্টেশনের আটটি ইউনিট কাজ করে। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।