মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

4

দেশের আর্থিক উৎসসূহের অন্যতম রেমিটেন্স প্রবাহ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখে আসছে এ রেমিটেন্স। রেমিটেন্স আসে বৈদিশিক শ্রম বাজার থেকে। যার ক্ষেত্র মধ্যপ্রাচ্যসহ মালয়েশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার কয়েকটি দেশ। বিগত এক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যসহ মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে নানা বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সৌদি আরব, আরব আমীরাত, ওমান ও কাতারে মাঝেমধ্যে ভিসা বন্ধ করা হলেও সরকারের নানা কূটনৈতিক তৎপরতায় সংকট নিরসন করে ভিসা কার্যক্রম চালু করা হলেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে খরা এখনও কাটেনি। মালয়েশিয়া সরকারের সাথে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সমস্যার সমাধান করে কর্মী পাঠানোর একটি ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, কিন্তু রিক্রুয়েট এজেন্সিগুলোর সিন্ডিকেট তৎপরতার মাধ্যমে নানা অনিয়মের কারণে মালয়েশিয়ার সরকার কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। এতে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহে বিরোপ প্রভাব পড়বে-তাতে কোন সনেস্দহ নেই। যদিও মালয়েশিযার এ সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আরো ১৩ টি দেম এর সাথে যুক্ত রয়েছে। গত ৩১ মে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধ করা হলেও সংকট নিরসেনে এখনও কার্যকর কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। তবে দেশটির দূতাবাস সূত্রে এরজন্য বাংলাদেশও মালয়েশিয়ার এজেন্সি ও দালারদের সিন্ডিকেট দুর্নীতিকে দায় করেছেন। বাস্তবে এর মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠেছে একটি সিন্ডিকেট বা চক্রের নির্মম দুর্নীতির চিত্র। ঢাকায় ক‚টনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকায় মালয়েশিয় হাইকমিশনার এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে সক্রিয় সিন্ডিকেটগুলো বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ছাড়পত্র পাওয়া ১৬ হাজারের বেশি কর্মী গত ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। এ কারণে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সূত্র জানিয়েছে, ওই তদন্ত কমিটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর গত সপ্তাহে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিপুলসংখ্যক কর্মীর মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার প্রধান কারণ হিসেবে ১০০টির বেশি রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মকাÐকে দায়ী করা হয়েছে।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ১০০টির বেশি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির পাশাপাশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াকেও দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে মালয়েশিয়াসহ সব শ্রমবাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মী নিয়োগের অনলাইন ব্যবস্থা ‘এফডাবিøউসিএমএস’-এর মাধ্যমে অনিয়ম করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে সরকার কর্মীপ্রতি খরচ ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে চার লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে যে একটি দুর্নীতির আখড়া গড়ে উঠেছিল, সেটি সব সময় স্পষ্ট। আইনে নিষিদ্ধ হলেও ভিসা বেচাকেনার অভিযোগ অনেক পুরনো। বেতন ও কাজ না পাওয়ায় সেখানে যাওয়া কর্মীদের অনেককে মানবেতর জীবন কাটাতে হয়। তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াও ভুল ছিল। বিদেশে কর্মী প্রেরণ সিন্ডিকেটমুক্ত করার সুপারিশও করা হয়েছে।
কিছুটা উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় প্রতিবছর শত শত তরুণ অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমান। বাংলাদেশে এখনো বেকার তরুণ ও যুবকের সংখ্যা অনেক। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেক তরুণই দালালদের পাতা ফাঁদে পা দেন। দালালের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে অনেকে চাকরি পাচ্ছেন না, কষ্টের জীবন যাপন করছেন। প্রবাসে কষ্টের জীবন যাপন করে অনেককেই আবার শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হয়। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির মধ্যে রাখতে হবে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, তা বিবেচনায় নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণই হবে উত্ম কাজ। দেশের সব বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট তৎপরতা-অর্থনৈতিকভাবে আমাদেও পিছিয়ে দিচ্ছে। এতে নীতি ও আদর্শগত প্রশ্নের অবতারণা করা হচ্ছে। সরকার এক্ষেত্রে কোনরকম ছাড় না দিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।