মানুষ বাড়ছে শহরে কমে যাচ্ছে গ্রামে

2

আসাদুজ্জামান রিপন

চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ বসবাস করছে নগরে। দিনদিন জনসংখ্যা বাড়ছে চট্টগ্রাম মহানগরীতে। শহরমুখী হচ্ছে মানুষ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর উন্নত জীবনের আশার শহরমুখী হচ্ছে গ্রামের মানুষ। গত ১১ বছরে চট্টগ্রাম জেলায় বেড়েছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ১১৩ জন। অন্যদিকে শুধু চট্টগ্রাম মহানগরীতেই জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৭ জন।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত চট্টগ্রাম জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর জেলা রিপোর্ট থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
জরিপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ জন। এরমধ্যে বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৪৮ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ জন মানুষ বসবাস করে। যা চট্টগ্রামের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি; মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৪ শতাংশ। মহানগরীতে যা ২০১১ সালে ছিল ৩১ লাখ ৫২ হাজার ৬২৯ জন। ফলে ১১ বছরে নগরীতে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৭ জন।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলার গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ২৪৯ জন। যা ২০১১ সালে ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৩ জন ছিল। এই জনশুমারি অনুযায়ী গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যা কমেছে প্রায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৪ জন।
নগর পরিকল্পকনাবিদরা বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ শহুরে অঞ্চলে বসবাস করবে। গ্রামীণ এলাকা থেকে শহর এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হয় বেশি। মূলত উন্নত জীবনের আশায় মানুষ শহরমুখী হয়। তাছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাস্তু হারা উদ্ভাস্ত মানুষ শহরে চলে আসে। এর প্রভাব পড়ে নগরের বাসিন্দাদের উপর। অতিরিক্ত জনসংখ্যা কারণে অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে। নতুন নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে, যানবাহন বাড়ছে। খোলা জায়গা কমছে। মানুষের ঘনত্ব বাড়ছে। কিন্তু আয়তন বাড়ছে না। ফলে নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না সবাই।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক রাশিদুল হাসান বলেন, ‘মানুষ গ্রাম থেকে শহরমুখী হচ্ছে এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে নগরায়নের দিকে নজর দিতে হবে। বিশাল জনগোষ্ঠীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত নগরায়ন জরুরি। শহরমুখী মানুষের চাপ সরাসরি চট্টগ্রাম শহরে পড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন গড়ে উঠছে। যদি শহরকে কেন্দ্র না করে অঞ্চলের প্রতিটি শহরকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা করা হয় তাহলে চট্টগ্রামের উপর প্রভাব পড়বে না’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সমাজবিজ্ঞানী ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কথায় নয় কাজের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শহর কেন্দ্রিক শিল্পায়ানকে গ্রামীণ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। কৃষিকে শিল্পে রূপান্তর করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করতে হবে। তাহলে শহরমুখী মানুষের সংখ্যা কমবে’।