মানব জাতির সূচনা থেকেই কোরবানির সূচনা

7

সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী

মানব জাতির সূচনা থেকেই কোরবানির ইতিহাস জড়িত। হযরত আদম আলাইহি সালামের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সর্বপ্রথম কোরবানি প্রদানের ইতিহাসের সূচনা হয়। প্রত্যেক নবী-রাসূলগণের শরীয়তে কোরবানির বিধান থাকলেও নিয়ম এবং পন্থা ছিল ভিন্ন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,“আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি যাতে আল্লাহ তাদেরকে যে চতুষ্পদ জন্তুসমূহ দিয়েছেন তাতে তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ। সুতরাং তোমরা তাঁরই আনুগত্য করো। আর সুসংবাদ দিন বিনীতদেরকে। (সুরা হজ্জ, আয়াত:৩৪)
কোরবানি মূলত আল্লাহর নৈকট্য, আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, সাম্য, মৈত্রী, সম্প্রীতির সুমহান মহিমায় মহিমানি¦ত। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলাইহি সালামের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সর্বপ্রথম কোরবানি প্রদানের ইতিহাসের সূচনা হয় এবং মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তদীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামের সুমহান আত্মত্যাগ এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা-ভরসা ও জীবনের সর্বস্ব সমর্পণের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সমন্বয়। তাই কুরবানী হলো, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্যে শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় কোন প্রিয় বস্তু আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা। তা পশুও হতে পারে অথবা অন্য যে কোন বস্তু।
কোরবানি শব্দের পরিচিতি: আমাদের এই অঞ্চলে ব্যবহৃত ‘কোরবানি’ শব্দটি উর্দু ও ফার্সি ভাষায়ও ব্যবহৃত হয়। যার অর্থ-উৎসর্গ, ত্যাগ, বিসর্জন ইত্যাদি। আর আরবিতে ব্যবহৃত ‘কোরবান’ শব্দটি মূলত ‘কোরব’ মূলধাতু থেকে নির্গত; যার অর্থ সান্নিধ্য, নৈকট্য, সন্তুষ্টি ইত্যাদি।
এজন্য ঈমানদার যখন কোরবানি করেন তখন তা একমাত্র আল্লাহ তাআলার রেজামন্দী ও সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই নিবেদন করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, বলুন, আমার নামায, আমার যাবতীয় ‘ইবাদাত (কুরবানী), আমার জীবন, আমার মরণ (সব কিছুই) বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই (নিবেদিত)। (আনআম-১৬২-১৬৩)
আল্লাহ তাআলা আরও এরশাদ করেন, “আল্লাহর কাছে তাদের গোশত পৌঁছে না আর তাদের রক্তও না, বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে। এভাবেই তিনি এসব পশুকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর, তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন বলে। যারা সুচারুরূপে সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দিন। (হজ্জ -৩৭)
আল্লাহ তাআলা আরও এরশাদ করেন, “সুতরাং আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।” (আল কাউসার-০২)
মুসলমানদের নিকট কোরবানির প্রচলিত নিয়ম হযরত ইব্রাহিম এবং হযরত ইসমাইল আলাইহিমাস সালাম থেকেই সূচনা হয়। এইজন্যেই হাদিসে পাকে রয়েছে যখন সাহাবায়ে কেরাম রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে আরজ করলেন ইয়া রাসুল আল্লাহ! এই কোরবানি কি? তখন প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন, এটি তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নত। তারা পুনরায় আরজ করলেন ইয়া রাসুল আল্লাহ! এতে আমাদের জন্য কি বিনিময় রয়েছে? তখন তিনি এরশাদ করলেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে তোমাদেরকে নেকি বা সওয়াব প্রদান করা হবে। (ইবনে মাজা)
ইতিহাসে প্রথম কুরবানী : মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম কুরবানীর ঘটনা ঘটে হযরত আদম আলাইহিস সালামের দুই পুত্র হাবিল-কাবীলের মাধ্যমে।
মূল ঘটনা: যখন আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস্ সালাম পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাঁদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া আলাইহিস সালামের প্রতি গর্ভ থেকে জোড়া জোড়া (জময) অর্থাৎ একসাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ জময সন্তান জন্মগ্রহণ করত। কেবল শীস আলাইহিস সালাম ব্যতিরেকে। কারণ, তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন ভাই-বোন ছাড়া আদম আলাইহিস সালামের আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম আলাইহিস সালামের শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারীনি কন্যা সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। সুতরাং সে সময় আদম আলাইহিস সালাম একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন। ঘটনাক্রমে কাবীলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী। তার নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। সে ছিল কুশ্রী ও কদাকার। তার নাম ছিল লিওযা। বিবাহের সময় হলে শরয়ী ‘নিয়মানুযায়ী হাবীলের সহোদরা কুশ্রী বোন কাবীলের ভাগে পড়ল। কিন্তু সে তা মানল না, সে চায় তার সহোদরা আকলীমাকে বিবাহ করতে। অবশেষে আদম আলাইহিস সালাম তার এ দু‘সস্তান হাবীল ও কাবীলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী পেশ কর, যার কুরবানী গৃহীত হবে, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে।’
কুরআনুল কারীমে হাবিল-কাবীলের কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘হে রাসূল! আপনি তাদেরকে আদমের পুত্রদ্বয়ের বৃত্তান্ত যথাযথভাবে পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়েই কুরবানী করেছিল, তখন একজনের কুরবানী কবুল হ’ল এবং অন্যজনের কুরবানী কবুল হ’ল না। সে (কাবীল) বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপরজন (হাবিল) বলল, অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করেন। সে (হাবিল) বলল, যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার প্রতি আমার হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।’ (মায়েদা ২৭-২৮)।
সে সময় কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানীকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানী কবূল হতো না তারটা পড়ে থাকত। যা হোক, তাদের কুরবানীর পদ্ধতি সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো- কাবীল ছিল চাষী। তাই সে গমের শীষ থেকে ভাল ভাল মালগুলো বের করে নিয়ে বাজে মালগুলোর একটি আটি কুরবানীর জন্য পেশ করল। আর হাবীল ছিল পশুপালনকারী। তাই তিনি তাঁর জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে সেরা, সুন্দর ও মোটা-তাজা একটি দুম্বা কুরবানীর জন্য পেশ করলেন। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবীলের কুরবানীটি ভষ্মীভুত করে দিল। বর্ণিত আছে, হাবীলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে। অবশেষে ইসমাঈল যাবিহুল্লাহ আলাইহিস সালামকে ঐ দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়। আর কাবীলের কুরবানী যথাস্থানেই পড়ে থাকল। অর্থাৎ হাবীলেরটি গৃহীত হলো আর কাবীলেরটি হলো না। কিন্তু কাবীল এ আসমানী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। এ অকৃতকার্যতায় কাবীলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল।
এ অকৃতকার্যতায় কাবীলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরও বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং হাবিলকে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত নীতিবাক্য উচ্চারণ করলেন। এতে কাবীলের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। সে (হাবিল) বলল, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকী ব্যক্তিদের কুরবানী কবুল করেন’। এক পর্যায়ে কাবীল হাবীল কে হত্যা করে ফেলল। (তাফসীর ইবনু কাসীর, দুররে মনসূর, ফতহুল বায়ান, ৩/৪৫ ও ফতহুল ক্বাদীর, ২/২৮-২৯)
কুরআনে বর্ণিত হাবীল ও কাবীল কর্তৃক সম্পাদিত কুরবানীর এ ঘটনা থেকেই মূলত কুরবানীর ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা দেখতে পেলাম যে, কুরবানী দাতা ‘হাবীল’, যিনি মনের ঐকান্তিক আগ্রহ সহকারে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্যে একটি সুন্দর দুম্বা কুরবানী হিসেবে পেশ করেন। ফলে তার কুরবানী কবূল হয়। পক্ষান্তরে কাবীল, সে অমনোযোগী অবস্থায় কিছু খাদ্যশস্য কুরবানী হিসেবে পেশ করে। ফলে তার কুরবানী কবূল হয়নি। সুতরাং প্রমাণিত হলো কুরবানী মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ছাড়া কবূল হয় না।
ইতিহাসে দ্বিতীয় কুরবানী : কুরবানীর প্রচলন আদি পিতা আদম আলাইহিস সালামের সময় থেকে শুরু হ’লেও মুসলিম জাতির কুরবানী মূলতঃ হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং তদীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিমুস সালামের কুরবানীর স্মৃতির অনুকরণ ও অনুসরণে চালু হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন অগ্নি পরীক্ষা নিয়েছিলেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিকট থেকে। তিনি প্রতিটি পরীক্ষায় পাহাড়সম ধৈর্য ও ত্যাগের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘যখন ইবরাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করলেন, তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে মাবনজাতির ইমাম বানিয়ে দিলাম’ (বাক্বারাহ ১২৪)।
হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যখন চলাফেরা করার মত বয়সে উপনীত হ’লেন, তখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর প্রাণ প্রতীম পুত্রকে কুরবানী করার জন্য স্বপ্নাদিষ্ট হ’লেন। একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, নবীগণের স্বপ্নও ‘অহি’। তাই এ স্বপ্নের অর্থ ছিল, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রতি স্বীয় পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালাম কে কুরবানী করার নির্দেশ। স্বপ্নে প্রদত্ত আদেশের ভিন্ন অর্থ করার যথেষ্ট অবকাশ ছিল। কিন্তু ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ভিন্ন অর্থের পথ অবলম্বন করার পরিবর্তে আল্লাহর আদেশের সামনে মাথা নত করে দেন। আত্মসমর্পণকারী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এই কঠোর পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। তিনি পুত্র ইসমাঈলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যবেহ করছি। এ বিষয়ে তোমার অভিমত কি’? নবী-রাসূলগণের স্বপ্ন অহির অন্তর্ভুক্ত। পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালাম পিতার এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত বিনয় ও আনুগত্যের সাথে স্বীয় পিতাকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, ‘পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তা পালন করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ছবরকারীদের মধ্যে পাবেন’ (ছাফফাত ১০২)।
আত্ম নিবেদনের এ কি চমৎকার দৃশ্য! জনমানবহীন শতবছর বয়সী হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম স্বীয় প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানী করার জন্য এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে আর তাঁরই অনুরাগ ও প্রেমলাভ করার দুর্ণিবার আগ্রহে পুত্রকে কুরবানীর পশুর মতই উপুড় করে শুইয়ে দিলেন। আর কণ্ঠনালীতে শাণিত ছুরি তুলে ধরলেন। পুত্র ইসমাঈলও শাহাদতের বাসনা নিয়ে নিজের কণ্ঠকে বৃদ্ধ পিতার সুতীক্ষè ছুরির নিচে স্বেচ্ছায় সঁপে দিলেন। চরম আত্মত্যাগী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও চরম আত্মোৎসর্গকারী ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এ কঠিন ও চূড়ান্ত পরীক্ষায়ও কৃতকার্য হ’লেন। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হ’ল ‘তখন আমি তাঁকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি এর পরিবর্তে যবেহ করার জন্য দিলাম এক মহান পশু’ (ছাফফাত ১০৪-১০৭)।
বিশ্ব নিয়ন্তা আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম -এর প্রতি সদয় হ’লেন। ইসমাঈলের রক্তের পরিবর্তে তিনি পশুর রক্ত কবুল করলেন। আর ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পরবর্তী সন্তানদের জন্য কুরবানীর সুন্নাতকে জারি রাখলেন।
আত্মত্যাগ ও আত্মসমর্পণের এই মহান স্মৃতিকে চির জাগ্রত করার জন্যই এবং তাঁর এই সুমহান কীর্তি পৃথিবীর সকল মুসলমানের জন্য ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবিস্মরণীয় ও স্থায়ী করে দিয়ে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করলেন, ‘আমি তাঁর জন্য এ বিষয়টি পরবর্তীদের জন্য পালনীয় করে রেখেছি’ (ছাফফাত ১০৮)।
আজও আমরা সেই ইবরাহীমী সুন্নাতের অনুসরণেই প্রতি বছর যিলহজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে পশু কুরবানী করে থাকি। এটি মুসলিম মিল্লাতের অন্যতম একটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। ক্বিয়ামত পর্যন্ত এই মহান আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ,
সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, খতীব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ