মাতৃভূমিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস দরকার

6

রতন কুমার তুরী

একটি স্বাধীন দেশ এবং একটি নিজস্ব পতাকা পাওয়া যে কোনো ভূখন্ডের মানুষের আজন্ম লালিত স্বপ্ন থাকে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখন্ডের স্বাধীন না হওয়া কিংবা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে যাওয়া মানুষগুলোর দিকে তাকালে সহজেই তা বোঝা যায়। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস বড়ই নিঃসংশ এবং নির্মম। বাংলাদেশ নয় মাসে স্বাধীনতা অর্জন করলেও এর জন্য তাদের বেশ চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা কখনোই সহজ পথে আসেনি। লড়াই, সংগ্রাম, হত্যা, মা- বোনদের সম্ভ্রমহানি, নীপিড়ন, নির্যাতন আর দীর্ঘ রক্তগঙ্গা পেরিয়ে এসেছে এদেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা। এ দেশের মুক্তির ইতিহাস জানেনা যারা তাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, একটি দেশকে স্বাধীন করতে যে সমস্ত ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে তার যদি সিকি পরিমানও নতুন প্রজন্ম হৃদয় দিয়ে অনুভব করতো তাহলে এদেশের মানুষের মনে দেশপ্রেম আজীবন অটুট থাকতো। এখনও এদেশের কিছু মানুষের মনে পাকিস্তান প্রীতি দেখে তাদের প্রতি ঘৃণা আর অশ্রদ্ধা জাগে। তারা কী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ইতিহাস জানেনা ? তাদের নির্মমতা কী তারা ভুলে গেছে ? কী অন্যায় করেছিল বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ মানুষ ? যাদেরকে গুলি করে হত্য করেছিল, বয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা। সর্বোপরি তারা এদেশের সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল আরো নির্মমভাবে।
আমরা যদি সবাই এতো সহজে আমাদের মুক্তির আন্দোলনের কথা ভুলে যাই তাহলে কখনই দেশপ্রেম আমাদের বিবেককে জাগ্রত করবেনা। আর দেশপ্রেম জাগ্রত নাহলে দেশ উন্নয়নে সকলের অংশ গ্রহন বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে। এমনিতেই আমাদের দেশে একটা গোষ্ঠী দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। দেশ স্বাধীনের এতো বছর পরও তারা পাকিস্তানকে নিয়ে গর্ববোধ করে। সুযোগ পেলেই এরা পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতে কুণ্ঠাবোধ করেনা। এদের বংশধররাও এখনও সেপথেই চলছে এতোটুকু শুধরায়নি। এসব কিছু পেছনে ফেলে তারপরও দেশ এগিয়ে চলেছে। তারপরও মাঝেমধ্যে একাত্তরের পরাজিতরা দেশে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তাদের এদেশে তাদের সরব উপস্থিতি দেখায়, চেনায় তাদের পাকিস্তানি বর্বরতার জাত। এদের মোকাবেলা করতে তখন পুরো দেশকে এবং দেশের মানুষকে এক হতে হয়। এরপর এরা হঠাৎ করে কিছু দিনের জন্য গর্তে ঢুকে যায় আবার সুযোগ বোঝে গর্ত থেকে বের হয়। কোনো একটা দেশে রাজনৈতিক দল থাকবে। থাকবে মত পার্থক্য কিন্তু দেশ বিষয়ে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। কারণ দেশ সবার জন্য। দেশের উন্নয়ন হলে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক দেশ চালাতে সমস্যা হয়না। বর্তমানে আমাদের দেশে কিছু রাজনৈতিক দল আছে যারা এক দল উন্নয়ন করলে অন্য দলের সহ্য হয়না।
কোনো অবস্থাতেই তারা একে অন্যকে সহজে স্বীকৃতি দিতে চায়না। মূলতঃ এদেশের বেশকিছু মানুষের দেশপ্রেমের যথেষ্ট অভাব রয়েছে তাই তারা সবসময় দেশের কথা না ভেবে দল এবং নিজেদের কথা ভাবে। এমন মনমানসিকতা পরিহার করতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, দেশটা সকলের এখানে সবাই সম্মিলিতভাবে দেশের জন্য হৃদয় দিয়ে কাজ করতে হবে। যে যে অবস্থানে আছে সে অবস্থান থেকেই দেশের জন্য কাজ করতে হবে। কোনো সংকট আসলে সবাই একসাথে মোকাবেলা করতে হবে। যারা দেশপ্রোমিক মানুষ তারা দেশের শাসন ক্ষমতায় কোন দল আছে সেটা বিবেচনা করেনা দেশের সংকটে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে বুকে দেশপ্রেম না থাকলে দেশকে ভালোবেসে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়না। আমাদের সকল নাগরিককে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কাজে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা বিষয়ে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে এক থাকতে হবে। মূলতঃ একটা দেশ যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন সে দেশটির জনগণকে বেশ কষ্ট করে দেশ গঠন করতে হয় কারণ, একটি নতুন দেশের সবকিছুই নতুন করে গঠন করতে হয়। বানাতে হয় হাজার হাজার ইমারত, রাস্তাঘাট। বিদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে
আমদানি রপ্তানি বিষয়ে জটিল সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয়। এ সমস্ত বিষয় আমাদের স্বাধীন দেশটি অনেক আগেই সম্পন্ন করলেও এখনও আমাদের দেশে রয়ে গেছে অনেক স্বাধীনতা বিরোধী যারা দেশ এগিয়ে যাক তা চায়না। এদের বোধের উদয় হওয়া জরুরি কারণ স্বাধীনতার এতো বছর পরও তারা তাদের অবস্থান থেকে ফিরে আসতে না পারাটা এটা তাদের চরম ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ এখন এদেশে তাদের কিছু করণীয় নেই, দেশের স্বাধীনতা না মানাটা তাদের বিকৃত মস্তিষ্কের উদ্ভট চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়, এর থেকে তারা যতো দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারবে ততোই তাদের জন্য মঙ্গল। আমরা দেশের উন্নয়নে সকল দলমতের ঊর্ধ্বে ওঠতে চাই। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা সকল পেশার ও শ্রেণি মানুষের নিরলস অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। কারণ আমরা মনে করি দেশের চেয়ে কোনো কিছুই বড় হতে পারেনা। তাই আসুন আমরা সবাই সকল মতপার্থক্যের উর্ধ্বে ওঠে মাতৃভূমিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই এবং দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করি।
লেখক: কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক