মাঠের পুলিশ সদস্যদের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার

4

প্রশাসনিক কারণে যেসব নন ক্যাডার (পরিদর্শক থেকে কনস্টেবল) পুলিশ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন, তাদের সেই বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ক্ষমতার পট পরিবর্তনে দেশজুড়ে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এগার দফা দাবিতে নন ক্যাডার পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মধ্যে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের এ আদেশ এল। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেছেন, “মাঠের সদস্যদের শান্ত রাখার উদ্যোগ হিসেবেই পুলিশ সদর দপ্তর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” খবর বিডিনিউজ’র
পুলিশ সদর দপ্তরে শুধু পরিদর্শকদের বিষয়ে দেখভালের জন্য একটি শাখা এবং সাব ইন্সপেক্টর থেকে কনস্টেবলদের বিষয়গুলো দেখার জন্য আরেকটি শাখা রয়েছে।
সাব ইন্সপেক্টর থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত একটি শাখার দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিঅ্যান্ডপিএস-১) বেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, তার অধীনে যেসব ইউনিট রয়েছে সেসব ইউনিটের সাময়িক বরখাস্ত উপ পরিদর্শক থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সদস্যদের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আমি যতদূর জানি, অন্যান্য শাখা থেকেও একই আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে যারা ফৌজদারী মামলায় বা আদালতের আদেশে সামরিক বরখাস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে এ প্রত্যাহারের আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
কোন সময়ে বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যদের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কোনো সময় নেই। এটা ছয় মাস আগেও হতে পারে এক বছর আগেও বরখাস্ত হতে পারে।”
বরখাস্ত হওয়া ক্যাডার সার্ভিসের পুলিশ সদস্যদের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে বেলাল উদ্দিন বলেন, “এটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।”
গেল জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরে তুমুল গণআন্দোলনে রূপ নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সরকারপতনের পর বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে অনেক পুলিশ সদস্য নিহত হন। আতঙ্কে বেশিরভাগ থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে।
এ পরিস্থিতিতে গত তিন দিন ধরে ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন পুলিশের নন ক্যাডার সদস্যরা। ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সসহ জেলাগুলোর পুলিশ লাইন্সে পুলিশের ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ ঝাড়ছেন তারা। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন এবং সরকার পতনের পর দায়িত্ব পালনের সময় এত পুলিশ হতাহতের জন্য তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন।
তাদের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের বিচার করতে হবে। পুলিশ কোনো সরকার বা রাজনৈতিক দলের অধীনে কাজ করবে না, পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের জনগণের সেবা তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে। সারাদিনে ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করানো যাবে না। অধঃস্তন কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোনো অবৈধ বা মৌখিক আদেশ পালন করতে পারবেন না। অধঃস্তন কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির মত পন্থা অবলম্বন করতে হবে। বার্ষিক নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিন করাতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মত অধঃস্থন কর্মচারীদের সোর্স মানি দিতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে ১০ তারিখের মধ্যে টিএ এবং ডিএ বিল পরিশোধ করতে হবে। নতুন বেতন স্কেল প্রণয়ন করতে হবে। ঝুঁকিভাতা বাড়াতে হবে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারস থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকটি পুলিশ লাইন্স, থানা, ফাঁড়ি, গার্ড, ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে।