মহেশখালীর বৌদ্ধ মন্দিরে

9

সুমন্ত গুপ্ত

কক্সবাজার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্বের মহেশখালী উপজেলা মিষ্টিপানের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশ ছাড়াও এ পানের কদর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। ১৯৮২ সালে উপজেলায় উন্নীত হওয়া মহেশখালীতে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে।
আদিনাথ মন্দির, বড় রাখাইন পাড়া ও বৌদ্ধ মন্দির এর মধ্যে অন্যতম। প্যারাবন নামে পরিচিত মহেশখালীকে সমৃদ্ধ করেছে বিচিত্র প্রজাতির জলচর প্রাণী, শুটকি, উপকূলীয় বনভূমি, কেয়া বন, লাল কাঁকড়া ও সাগরের গাঢ় নীল পানি। নৌ-পথে পুরনো মহেশখালী জেটি কিংবা নতুন জেটি বলে খ্যাত আদিনাথ জেটি হয়ে মহেশখালী চ্যানেল ধরে যাতায়াত করেন এ এলাকায় আগতরা। সেই জেটির কাছাকাছি নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম তীর এলাকায় গড়ে উঠেছে কেয়া-নিশিন্দার ঘন ঝোপ। হাল সময়ে কিছু গোলপাতার গাছও এখানে লাগানো হয়েছে। নদীর পাড় বাঁচানো সবুজে ঘেরা এসব গাছ-গাছালির ফাঁকে একটি সাদা মিনার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যা এ এলাকায় আগত যেকোনো পযর্টকেরই নজর কাড়ে।
আমি আর আমার ভ্রমণ সঙ্গী সানান্দা আজ আছি মহেশখালীর শতাব্দীর পুরানো বড় রাখাইন পাড়া ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দিরে। সকাল দশটায় কক্সবাজার থেকে যাত্রা শুরু করি আমরা। সুনীল সাগার পেরিয়ে আমারা মহেশখালী পৌঁছি। এর পর থেকে ইঞ্জিন চালিত ত্রিচক্রযান করে ঘুরে বেরাচ্ছি । টিকিট কেটে মন্দিরে প্রবেশ করেই হাতের ডানদিকে আমরা অগ্রসর হলাম। অসাধারণ সুন্দর স্থাপত্য শৈলী যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। পদব্রজে আমরা এগিয়ে গেলাম। মূল মন্দির আনুমানিক প্রায় ২৮৪ বৎসর পূর্বে নির্মিত হয়। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুসারে মন্দিরের সংস্কার এবং মেরামত কাজ করা হয়। সর্বশেষ গত ২০০৪ সালে ডিসেম্বর মাসের ০৭ তারিখে বর্তমান মন্দিরটি পূনঃনির্মাণ করা হয়।বড় পিতলের মুর্তিটি ১০১ বৎসর পূর্বে এটি বাংলাদেশের মধ্যে ২য় বৃহত্তম বৌদ্ধমুর্তি। দেখা পেলাম সীমা মন্দিরের দাঁড়ানো মুর্তি সম্পূর্ণ একটি গাছকে খোদাই করে বানানো, বিরল এই মুর্তিটি আনুমানিক প্রায় ১১২ বৎসর পূর্বে স্থাপন করা হয়। গাছের খোদাই করা আর কোন বৌদ্ধমুর্তি বাংলাদেশে নেই।
প্রচলিত আছে যে ,এই মন্দিরে অবস্থিত মুং জা লিংদা ধর্মীয় পুকুর-গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধত্ব লাভের পর ০৭ টি পূণ্য স্থানে ০৭ দিন করে ধ্যানেরত ছিলেন। তিনি ৬ষ্ঠ সপ্তাহ অতিবাহিতকালে এই মুং জা লিংদা পুকুরে ধ্যানমগ্ন থাকাকালীন প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়। এই সময় গৌতম বুদ্ধের দেহটিকে ঝড় বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য নাগরাজ নিজ দেহকে আশ্রম তৈরী করে গৌতম বুদ্ধের মস্তকের উপর ফণা আকৃতি করে এক সপ্তাহ ব্যাপি অবস্থান করেছিলেন। এ থেকে গৌতম বুদ্ধের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর রাখাইনরা মুং জা লিংদা পুকুরে বর্ষাব্রত পালন করে থাকেন। মন্দিরের ভেতরের প্রতিটি স্থাপনার নিপুণ কারুকার্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

কিভাবে যাওয়া যায়: সড়ক পথে- ঢাকা ঢাকা-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার হতে আরাকান মহাসড়ক পথে সরাসরি চকরিয়া থানা রাস্তার মাথা হয়ে বদরখালী ব্রীজ পার হয়ে কালারমা ছড়া অথবা শাপলাপুর রাস্তা দিয়ে সরাসরি মহেশখালী উপজেলা প্রশাসকের কার্যালয়/উপজেলা পরিষদ । কক্সবাজার সদর হতে কস্তুরা ঘাট/৬নং ঘাটা/ উত্তর নুনিয়া ছড়া সরকারী জেটী ঘাট হতে স্প্রীট বোট বা কাটের বোটে করে মহেশখালী জেটিঘাটা/আদিনাথ জেটিঘাট সেখান থেকে রিক্স/ মটর গাড়ী যোগে উক্ত দর্শনীয় স্থান সমূহে যাওয়া যায়।