মহাসড়ক সম্প্রসারণে আরো যা করণীয়

5

মিঞা জামশেদ উদ্দীন

( দ্বিতীয় পর্ব )
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনেদিন যানচলাচল অসহনীয় হয়ে উঠেছে। কোনভাবেই নাগাল মুক্ত হওয়া যাচ্ছে না যানজটের। অর্থাৎ যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে যা করণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে- অবশ্যই মেনে নিতে হবে, কিছু পেতে হলে কিছু ছাড় দিতে হবে। বৃহত্তরস্বার্থে মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। তবে যতটুকু সম্ভব বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। সঙ্গে ভ‚মি অধিগ্রহণের ব্যাপাস্যাপারও আছে। নতুন করে ভুমি অধিগ্রহণ না করেই রেকর্ডিয় বা অধিগ্রহণকৃত ভ‚মি উদ্ধার হলেই চলে। এক্ষেত্রে অন্তত একটি জবাবদিহিতার সদুত্তর মিলে- অযথা সড়কের জায়গা দখর করে অবৈধ স্থাপনা-প্রতিষ্ঠান করার প্রবণতা পরিহার করা উচিত। অবশ্য এসব স্থাপনা উচ্ছেদে দ্বিধাদ্ব›দ্ব থাকতে পারে না। প্রয়োজনে যৌক্তিক ও ন্যায্য ক্ষতিপুরণ দেয়া হোক। ওই দাবি আসতে পারে জনমতেও। শুধু অনেকের কাছে নয়, ক্ষতিগ্রস্তের স্বজনেরাও একমত পোষণ করবে। অর্থাৎ তাতে কারো প্রশ্ন থাকার কথা নয়। এমনিতে এসব অবৈধ স্থাপনা। তারপরও কেউ যদি মোটা অংকের ক্ষতিপূরনের আশায় কোনোপ্রকার প্রোপাগান্ডার সংঘটিত করে সেক্ষেত্রে হবে বোমরেং এবং অযৌক্তিকতার সামিল। মহাসড়কে আরো নান্দনিকতা আনায়ন এবং ঢেলে সাজানো উচিত। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে ব্যস্ততম এ মহাসড়ক। তবে যেনতেনভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা মোটেই সমীচীন নয়। অবশেষে এতে যা হয়, জুজু পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ স্বার্থসিদ্ধির বিষায়াদি বাস্তবায়নে ফন্দিফিকির বেড়ে যায়। অর্থাৎ মহাসড়কের অস্তিত্ব নিয়ে কেন এ টানাহেঁচড়া ? এমনকি রাস্তার পাশঘেঁষে পাইপ লেন স্থাপনেও বাদসাধে ওই চক্র! যার ফলে অবিন্যাস্থ আর ঝঞ্ঝাটে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে কনট্রাকটরের বদমতলব আছে কিনা খতিয়ে দেখা উচিত। যেকরেই হোক, পাইপ লেন এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে পৌঁছিয়ে দিতে পারলেই হয়; কেন এ দায়সারা ভাবসাব ঠিকাদারের? মাঠ পর্যায়ে ঠিকাদারদের লোকজন কোথাও কোথাও ‘টু-পয়সা’ হাতিয়ে নেয়ারও একাধিক অভিযোগ আছে, এসবও কতটুকু সত্য-মিথ্যা খতিয়ে দেখা উচিত। আচ্ছা বলুনতো, কেন ঢালাই ভেঙে বা রাস্তা ঘেঁষে পাইপলেন নিতে হবে; প্রয়োজনে কিছু কিছু স্থাপনা ভাঙাতে আপত্তি কোথায়? আর এ জন্য ক্ষতিপুরণ দেয়ার যথেষ্ট বরাদ্দও আছে; আখের গোছাতে সবটুকু ছেঁটেপুটে খেয়ে সাবাড় করার মানস থাকলে কেমনে হয়!
সড়কের ৪ লেন সম্প্রসারণ কাজেরও ছিল দৃশ্যমান অনিয়ম। নির্মাণ কাজে নিপূর্ণভাবে শেষ করতে পারেনি। বরাবরই জনগুরুত্ব বিষয়াদি চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। সড়কের ইউটার্ন নির্মাণেও অনিয়ম দেখা যায়। তার মধ্যে ফায়ারসার্ভিস ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও এড়িয়ে যাওয়া হয় ইউটার্ন নির্মাণে। সীতাকুন্ড সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফায়ারসার্ভিস ও সিভিলডিফেন্স স্টেশনের কাছাকাছি ইউটার্ন নির্মাণ করার অবশ্যকতা রয়েছে। সেখানে খোড়া অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাওয়া হয়। এতে জনগুরুত্বের বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে জবরদস্তিভাবে মহাসড়কে ইউটার্ন নির্মাণ করার দৃষ্টান্তও আছে। সীতাকুন্ডের দক্ষিণ সোনাইছড়ি এলাকায় আবুল খায়ের ফ্যাক্টরীর অবস্থান। অথচ ওই ফ্যাক্টরী দুটির দুপাশে দুটি ইউটার্ন নির্মাণ করে বসে। অথচ ভাটিয়ারি নেভী গেই এলাকায় একটি ইউটার্ন নেই। প্রতিষ্ঠানটি ছিল প্রতিরক্ষা বিভাগের। সেই বিষয়টি আমলে নেয়নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফায়ারসার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের ওই স্থানটিতে ইউটার্ন না থাকায় জরুরি চিকিৎসাসেবা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ছোট কুমিরা বাইপাসের পর উত্তরের কয়েক কিলোমিটারে মধ্যে ইউটার্ন নেই। অথচ ওই কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে বেশ কয়েকটি ভারী ভারী ফ্যাক্টরী রয়েছে। বিশেষ করে জিপিএস ফ্যাক্টরীর কাছে কিনারে ইউটার্ন থাকলে ছোট-বড় সব ফ্যাক্টরীর জন্য সুবিধা হতো মালামাল পরিবহনে। সীতাকুন্ড সদর বাজার বাইপাস সড়কে বড় ধরণের একটি সমস্যা চোখে পড়ে। অর্থাৎ নামার বাজার বাইপাস সড়কের পূর্বপাশের সেতুটি অপেক্ষাগত নিচু। ওই সেতুর আন্ডার বাইপাসে পরিবহন ও জন চলাচলে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই সেতুর সুড়ঙ্গ পথে বড়জোর সিএনজি ও রিক্সা ছাড়া অন্য কোন যানচলাচল করতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। একটু বৃষ্টি হলে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। বহুবার চেষ্টা করেও পানি নির্গত করা সম্ভব হয় নি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে পৌর মেয়র মহোদয়ও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন। মেয়র মহোদয়ের নানা প্রচেষ্টাও ভেস্তে যায়। এখন হাত গুড়িয়ে বসে থাকা ছাড়া কিবা উপায় আছে, বাইপাসের ওই সেতু ভেঙে পুনরায় নির্মাণ করতে হবে।
মহাসড়কে পুর্বপার্শ্বের সড়কের রেকর্ডভুক্ত জায়গাও ক্রয়-বিক্রয় চলে দেদারসে। তাদের সিন্ডিকেটটির খুঁটির জোর আছে, ইচ্ছে করলে কাউকে জায়গা থেকে সরিয়ে দেয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র তাদের! শেষকথা হলো, মহাসড়কের দুপার্শ্বে সম্প্রসারণ হোক। দুপাশের লোকজনের সমানে ক্ষতিপুরণ পুষিয়ে উঠবে। তা হলে চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে। সম্প্রসারণ মহাসড়ক এখন (২+২) ৪ লেনের। এটি ১০ লেনে উত্তীর্ণ করা অতি জরুরী হয়ে উঠেছে। আইল্যান্ড ঘেঁষে দুপাশের দুই লেন অর্থাৎ চারলেনে দূরপাল্লার যান বিরতিহীনভাবে চলবে। যেগুলোতে শত মাইল গতিতে চলবে যান। এর পর দু-পাশের দুই-দুই করে চারলেনে চলবে আঞ্চলিক পরিবহন। অর্থাৎ গতি কমে আসলে বরাবরই সরে আসার সুযোগ আছে। সর্বশেষ দুদিকের একলেনে চলবে রিক্সা, ঠেলা ও নসিমন-করিমনের সমপর্যায়ের গাড়ি। থাকবে জনপদও। যারা হেঁটে যেতে চায়, তারা হেঁটে যাবে। দৈনিক হাটবাজার যেভাবে স্থাপন করা হয়েছে- বিশেষ করে আইল্যান্ড থাকবে কাঁচা বাজার গুলোতে। যেন কোনভাবেই মুল সড়কে উঠতে না পারে সদায় নিয়ে কৃষকেরা। কৃষকের তরি-তরকারি ও সজ্বি বোঝাই ট্রাক লোড-আনলোড করতে বডির লেভেলের সমপর্যায়ে বিশেষ স্তূপ দিতে পারে দুপাশে দুটি। যাতে করে অতি সহজেই টুরি ভরা মালামালের ট্রাকে ওঠা-নামা করা যায়। মহাসড়কের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হলো গ্রামীণ কানেকটিং সড়কগুলো। হুট করে রাস্তায় ওঠে যাওয়ার ঘটনা ঘটে অহরহ। সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এটি বন্ধ করার সহজ উপায় হলো আইল্যান্ডে দেয়া। যাতে করে মূল সড়কে সরাসরি উঠতে না পারে। এবং দুপাশের ইউ আকৃতির ইউটানে গ্রামীণ যান চলাচলে ‘ইন-আউট’ হওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এ নকশায় বা ফর্মুলায় মহাসড়ক সম্প্রসারণ করা হয়, তাহলে উত্তর চট্টগ্রামে সড়কের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যলয়টি স্থানান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপাতত এ ঝামেলাও লাঘব হচ্ছে। তবে সড়কের এ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়টি আদৌ প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ, এ কার্যালয়ের কোন কার্যক্রমও চোখে পড়ার মতো নয়। যে কারণে এ কার্যালয়ের প্রয়োজনিয়তা রয়েছে- সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ করার। সেকাজে ঘুণাক্ষরেও তাদের দেখা যায় না। উল্টো সড়কের ঝঞ্ঝাটের মূলে রয়েছে সড়কের-এ কার্যালয়টি। যে যেভাবে পারে, সড়ক ঘেঁষে স্থায়ী স্থাপনা গড়ে তুলচ্ছে। এজন্য বেশি দুরে যেতে হবে না, এ প্রকৌশলীর কার্যালয়ের আশপাশে এমন দৃশ্য দেখা মিলে। এসব স্থাপনা পরবর্তীতে অপসারণ করতে গিয়ে শত ঝামেলা পোহাতে হয়। এমনকি ‘অস্বাভাবিক’ সরকারের কামনা পর্যন্ত করতে হয়। তা হলে কেন বা প্রয়োজন-এ কার্যালয়ের বা পদপদবীর জনবলের। মাসে মাসে মোটা অংকের রাজস্ব খোয়াতে হয়। নিজেও কয়েকবার ওই কার্যলয়ে যাওয়া হয়। একটিবারও নির্বাহী বা সহকারী প্রকৌশলীসহ কারো উপস্থিতির ছায়া মিলেনি। ২-৩ জন করণিক ছাড়া কখনো নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরে আসেন না, তা হলে কিভাবে হয় সড়কের রক্ষাণাবেক্ষণ; হ্যাঁ, যা হয়, সেটি হলো এ ধরণের স্থাপনা নির্মাণের খবর কানে আসলে দায়সারা একটি নোটিশ ধরিয়ে দেয়। বাস্তবে এটি কিছু না, যা কিনা রুটিং ওয়ার্ক। উল্টো কিছু হাতিয়ে নেয়। এমন যদি না হতো, তা হলে পরবর্তী ওই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যকরী কোন প্রদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। হ্যাঁ, বলতে পারেন, দু-একটা এমন ঘটনা ঘটতেই পারে; আমাদেরও একই কথা, চোখ ফাঁকি দিয়ে দু-একটা স্থাপনা নাইবা হয়েছে। বাস্তবে তা না, শয়ে শয়ে ঘটনা-স্থাপনা কি চোখের আড়ালে হয়েছে; সড়কের এক অফিস সহকারী এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। তাই, ইচ্ছে করলেও প্রদক্ষেপ নেয়া যায় না। ওই সহকারীর একথা দায়সারা নয় কি? তা হলে সরকারি প্রতিটি দপ্তরের জন্য কি আলেদা আলেদা থানা প্রশাসন থাকতে হবে; আমি ওই অফিস সহকারীকে বললাম, আপনারা নিকটস্থ থানায় অবহিত করতে পারেন লেখিতভাবে। প্রয়োজনে পুলিশ চাইতে পারেন। প্রশাসন সহযোগিতা না করলে সেটি বিবেচ্যবিষয় হতে পারে। প্রয়োজনে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করতে পারেন। অন্যথায় ঢালাওভাবে দায় চাপাতে পারেন না। (চলবে)
লেখক: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক, কবি ও কলামিস্ট